শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দক্ষিণাঞ্চলে কালবৈশাখীর তান্ডব

প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন স্থানে মঙ্গলবার বিকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কালবৈশাখী হানা দিয়েছে। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় রীতিমত তান্ডব চালিয়েছে ঝড়। যশোরে বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে তিনজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। খুলনায় ঝড়ের সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নগরী ১৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন ছিল। অনেক স্থানে শিলাবৃষ্টির কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ডিসি অফিস থেকে কিছু ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের। তবে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ত্রাণের পরিমাণ খুবই অপ্রতুল।
যশোরে নিহত ৩ আহত অর্ধশতাধিক
যশোর ব্যুরো ঃ চৈত্রের শেষে কালবৈশাখীর তা-ব দেখলো যশোরবাসী। মঙ্গলবার রাতে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময় বিভিন্ন এলাকায় ঘর চাপা পড়ে ৩ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ও খুঁটি উপড়ে পড়ায় ঝড়ের রাতে গোটা জেলায় বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বুধবার বিকেল পর্যন্ত কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হলেও অনেক এলাকা এখনও বিদ্যুৎহীন হয়ে রয়েছে। গাছ ভেঙে পড়ার কারণে রাতে যশোর-খুলনা ও যশোর-বেনাপোল মহাসড়কে যান চলাচলও বন্ধ ছিল কয়েক ঘণ্টা।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ করে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। এর সাথে শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। প্রায় এক ঘণ্টা ঝড় ও বৃষ্টির দাপটে বিধ্বস্ত হয়েছে জেলার অনেক এলাকা। ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন পড়ে।
যশোর জেলা ত্রাণ অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের ঝড়ে যশোর জেলার সদর, ঝিকরগাছা, চৌগাছা, মণিরামপুর ও অভয়নগর এই ৫ উপজেলার উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেছে। এতে প্রাথমিকভাবে ৩ জনের মৃত্যুর খবর তারা পেয়েছেন। এরা হলেন, অভয়নগর উপজেলার ধুলগ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মিকান্ত (৪০) ও একতারপুর গ্রামের সাহিদা বেগম (৭০) এবং সদর উপজেলার হালসা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ (৮০)। ঝড়ের সময় ঘর চাপা পড়ে এদের মৃত্যু হয়েছে বলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস জানিয়েছে।
১৪ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ পেল খুলনাবাসী
এ.টি.এম. রফিক/আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে
কালবৈশাখী তা-বে ল-ভ- ও বিধ্বস্ত হয়ে গেছে খুলনাঞ্চল। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৮টা ২০মিনিটে শুরু হয় বিদ্যুৎবিভ্রাট। মাত্র ২০মিনিট সময়ে কাল বৈশাখীর আবির্ভাব হয় স্বরূপে। আর টানা ১৪ঘন্টা দুর্বিষহ দুর্ভোগের পর গতকাল বুধবার সকাল ১০টা ২০মিনিটে জ্বলে উঠলো বাল্ব। টানা ১৪ঘন্টা স্থবিরতা কাটিয়ে সচল হল নগরজীবন, আলোকিত হল অন্ধকারাছন্ন ঘর। বোরো ও গ্রীষ্মকালীন ফসলসহ আম-কাঁঠাল ও লিচুসহ মৌসুমী ফল-ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘরবাড়ী বিধ্বস্ত, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ছিড়ে দীর্ঘ ১৪ঘন্টা বিদ্যুবিহীন, গাছ উপড়ে বা ভেঙে, মহানগরীর বিশালাকৃতির প্রায় সব বিলবোর্ড ভেঙে পড়ে, রূপসা নদীতে ও সুন্দরবনে নৌকা-ট্রলার ডুবিসহ কাল বৈশাখীর ঝড়ে খুলনাঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার এক ই-মেইল বার্তায় মন্ত্রণালয়ে খুলনায় ঘূর্ণিঝড়ে ৫ উপজেলার মানুষের পুনর্বাসনে ২শ’ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ লাখ টাকা চেয়ে জেলা প্রশাসন।
সূত্রে জানা গেছে, খুলনার সার্কিট হাউজে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্টলের মালামাল বিনষ্ট হওয়ায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাংলাদেশ বেতার খুলনার সামনে, খালিশপুর ও দৌলতপুর থানার সামনের সড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল লতিফ জানান, বিভিন্ন উপজেলায় বোরো আবাদ, তিল, তরমুজ, আম ও পানের ক্ষতি হয়েছে। আক্রান্ত জমির পরিমাণ ৬ হাজার ৯৮০ হেক্টর। সংশ্লিষ্ট দপ্তর ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করছে।
বাগেরহাটে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ফসলের ক্ষতি
বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা : বাগেরহাটে কাল বৈশাখী ঝড়ে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দিরসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা জুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বাগেরহাট জেলার উপর দিয়ে আকস্মিক এই ঝড় বয়ে যায়। এসময় নারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সদর উপজেলার উৎকুল গ্রামের মকসুদ হাওলাদারের স্ত্রী আফরোজা বেগমকে (৩৫) খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের বাগেরহাট সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাগেরহাট সদর উপজেলার পোলঘাট গ্রামের মো. মুরাদ হোসেন বলেন, রাত সোয়া ৮টার দিকে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। মুষলধারে বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এসময় গাছপালা উপড়ে ও ভেঙে পড়ে। এতে আমার বাড়ির টিনের চাল উড়িয়ে নিয়ে যায়।
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ঝড়ে গাছপালা উপড়ে ও ভেঙে পড়ে পল্লী বিদ্যুতের অধিকাংশ লাইনের তার ছিঁড়ে রাস্তায় পড়ে আছে। দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করতে আমাদের একাধিক দল কাজ করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফতাব উদ্দিন জানান, বাগেরহাট সদর, কচুয়া ও ফকিরহাট উপজেলায় পাকা বোর ধানের ব্যাপক ক্ষতি বেশি হয়েছে। এছাড়া কলা, আমসহ অন্যান্য ফসলে কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।
ঘূর্ণিঝড়ে ল-ভ- ঝিনাইদহের জনপদ
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা : ৬ দিনের ব্যবধানে ঝিনাইদহের চার উপজেলায় মঙ্গলবার রাতে আবারো প্রচ- শিলা বৃষ্টির সাথে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। ঝড়ে ল-ভ- হয়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি। ঝড়ে ঝিনাইদহ সদর, কোটচাঁদপুর, কালীগঞ্জ ও মহেশপুর উপজেলার কয়েক শ’ গ্রাম ল-ভ- হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও সরকারী ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানো হয়নি। গতকাল বুধবার পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধিও খোঁজ নেন নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের। ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক ভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে পারেনি। তবে ঘণ্টাব্যাপী ঝড়ে শত শত কাঁচাপাকা বাড়িঘর উড়ে গেছে বলে দপ্তরটি জানিয়েছে। গ্রামাঞ্চলে পল্লী বিদ্যুতের লাইন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। সদরের পশ্চিমাঞ্চল, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুরে বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ঝড়ে রাস্তায় বড় গাছ পড়ে ঝিনাইদহ যশোর মহাসড়ক এক ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। রাস্তার ধারে সরকারী লাখ লাখ টাকার গাছ লুট হয়ে গেছে। ঝড়ের মধ্যেই ভেঙে পড়া গাছগুলো নিয়ে যওয়া হয়েছে। এ নিয়ে জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও বন বিভাগ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
জীবননগরের ১০ গ্রাম ল-ভ-
জীবননগর উপজেলা সংবাদদাতা : জীবননগরে টর্নেডোর আঘাতে ১০ গ্রাম একেবারে ল-ভ- হয়ে গেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার সময় জীবননগর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, কুলতলা, আন্দুলবাড়ীয়া, দেহাটি, মুক্তারপুর, মিনাজপুর, কাশিপুর, ডুমুরিয়া সেনেরহুদা ও উথলী গ্রামে শক্তিশালী টর্নেডো প্রচ- বেগে আঘাত হানে। আধা ঘন্ট্যাব্যাপী এ টর্নেডোতে ১০ গ্রামের সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। প্রায় ৫ শতাধিক আধা-পাকা ঘরবাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে গেছে এবং বাড়িঘরগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে। বড় বড় গাছ উপড়ে গেছে। রাস্তার পাশের গাছের ডালপালা ভেঙে ও বাসঝাড় উপড়ে রাস্তার উপর পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া উঠতি বোরো ধান, ভূট্টা, কলা ও ২শ’ একর জমির বরবটি ক্ষেতসহ শাকসবজি ক্ষেত, লিচু এবং আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামের ৭টি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় এবং একাধিক জায়গায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় উপজেলার সমস্ত গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, সবমিলিয়ে আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন