মালয়েশিয়ার সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডক্টর মাহাথির মোহাম্মদ। রাজকীয় প্রাসাদে পাঁচ ঘণ্টা অপেক্ষার পর শপথ নেন তিনি। রাজপ্রাসাদের কন্ট্রোলার ওয়ান আহমাদ দাহলান এবি আজিজ জানিয়েছেন, রাজপ্রাসাদ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শপগ্রহণে বিলম্ব সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। মাহাথির মোহাম্মদ আজ ১০ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫৭ মিনিটে শপথগ্রহণ করেন মাহাথির। এর আগে সরকার গঠনের জন্য রাজপ্রাসাদ থেকে মাহাথিরকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
গতকাল ৯ মে তারিখে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন জোট পাকাতান হারপান পার্লামেন্টের ২২২ আসনের মধ্যে ১২২টিতে জয় পায়। সে অনুযায়ী, বিকাল ৫টায় বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার শপথগ্রহণের কথা ছিল। তবে জোটের অন্য নেতাদের সঙ্গে রাজপ্রাসাদে গেলেও সে সময় শপথ না নিয়েই সেখান থেকে বেরিয়ে যান মাহাথির মোহাম্মদ। পরে রাত সাড়ে ৯টায় শপথগ্রহণের কথা ঘোষণা করা হয়।
জানা যায়, মালয়েশিয়ায় কোনো অন্তবর্তীকালীন সরকার না থাকায় সরকার গঠন জরুরী। তাই সরকারি ঘোষণার আগেই আজ বৃহস্পতিবার রাতে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে বুধবার (৯ মে) মালয়েশিয়ার ১৪তম সাধারণ নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পান দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। তার এই বিজয় ব্রিটেন থেকে দেশটির স্বাধীনতা লাভের ৬১ বছরের মধ্যে সরকার প্রথম পরিবর্তনের দরজা খুলে দিয়েছে। ক্ষমতা হারাল দীর্ঘ ৬০ বছর ক্ষমতায় থাকা বারিসান ন্যাশনাল। মাহাথির এই বারিসান ন্যাশনালের নেতা হিসেবেই দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলেন।
এই নির্বাচন বহুদিনের একদলীয় (বারিসান ন্যাশনাল) শাসনের পর মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ওলট-পালট করে দিয়েছে। মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটি বুধবার সরকারের পরিবর্তনের জন্য এক অসাধারণ ভোটে অংশ নেন।
ভোটের এই ফলাফল অনেকটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাজনৈতিক ভূমিকম্পের মতো, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে এক পক্ষের শাসনের প্রবণতা রয়েছে এবং সা¤প্রতিক বছরগুলোতে এই প্রবণতা আরো বেশি কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে মোড় নিয়েছে।
ভোট গণনার এক ম্যারাথন রাতের পর প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, পার্লামেন্টর ২২২টি আসনের মধ্যে মাহাথিরের পাকাতন হারপন (চার দলীয় জোট) জোট কমপক্ষে ১১৯ টি আসন পেয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ফলাফল অনুযায়ী, নাজিবের বারিসান নাশনাল (ন্যাশনাল কোয়ালিশন) জিতেছে মাত্র ৯৭টি আসন। বাকি ছয়টি আসনের ফলাফলের বিষয়ে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।
ফলাফল ঘোষণার পরপরই মাহাথিরের উৎফুল্ল সমর্থকেরা কুয়ালালামপুরের রাস্তায় নেমে আসেন। ৩১ মিলিয়ন মানুষের এই দেশটির জনগণ ঐতিহাসিক এই বিজয়টি উদযাপন করতে জাতীয় পতাকা হাতে রাস্তায় গাড়ি বহর নিয়ে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। গতকাল বুধবার মধ্যরাতের সম্মেলনে মাহাথির সাংবাদিকদের বলেন, এটা মনে হচ্ছে ৬১ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রথমবারের মতো সরকারের পরিবর্তন হবে। ৯২ বছর বয়সী মাহাথির বলেন, মালয়েশিয়ার সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের একজন প্রতিনিধি এবং প্রধানমন্ত্রী তার বিজয়কে স্বীকার করে বিরোধী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। খুব শিগগিরই তার শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে বলে তিনি আশা করছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালের প্রথম দিকে কুয়ালামপুরের শেরাটন হোটেলে সমর্থক ও মিডিয়াকে বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের জন্য আমরা নাজিবের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা করছি না। আমরা আইনের শাসন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’
মাহাথির ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বরিশন ন্যাশনাল জোটের হয়ে ২২ বছর দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন, যেটি (বরিশান ন্যাশনাল জোট) এখন তার সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে।
ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল রাজনৈতিক জোট বারিসান ন্যাশনাল (বিএন)। ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই জোট মালয়েশিয়া শাসন করেছে। মাহাথির মোহাম্মদও এই জোটের অংশ ছিলেন। ক্ষমতায়ও এসেছিলেন, ছিলেন সবচেয়ে বেশি সময় ধরে।
এর আগে, নাজিব মন্ত্রিসভার সদস্য খাইরি শেখ জামালউদ্দিন জানান, প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বৃহস্পতিবার একটি প্রেস কনফারেন্সে বক্তব্য রাখবেন। তবে, নাজিব এখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো কথা বলেন নি।
খাইরি শেখ জামালউদ্দিন বলেন, ‘আমরা জনগণের ইচ্ছাকে মেনে নিতে যাচ্ছি। যাই হোক না কেন আমাদের জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া দরকার।’
মন্তব্য করুন