ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সউদি আরব সফরের পরে তার ঘনিষ্ঠজনেরা ও আন্তর্জাতিক সমীক্ষকেরা সফরের ফলাফল নিয়ে ভাবছেন। মনে করা হচ্ছে, মোদির এই সফর বিশেষ বার্তা দিয়েছে। সেটা হলো, ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া। তিনি সংঘ-সীমা লঙ্ঘন না করে মুসলমানদের মন ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন। আর সেই সঙ্গে সউদি আরবের সঙ্গে নিরাপত্তা ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের সূচনা করবেন। আরো সহজ কথায় তিনি মুসলামানদের কাছে পৌঁছতে চান। এ ছাড়া পশ্চিম ও দক্ষিণ এশিয়ার অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে নরমপন্থী মুসলিম সমাজকে এক ছাতায় নিয়ে যাওয়ার কাজ একই সঙ্গে সারার চেষ্টা করছেন মোদি।
বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন, পাঁচ বছর আগে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় যে মোদী একটি গ্রামের দরগা থেকে দেওয়া ফেজ টুপি পরতে অস্বীকার করেছিলেন, দুদিন আগে তাকেই দেখা গেল মক্কা-মদিনার ইমামের সঙ্গে বৈঠক করতে। বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সউদ থেকে শুরু করে যুবরাজ শেখ সালেহ বিন মহম্মদ, সব নেতার সঙ্গে মোদী যথেষ্ট উষ্ণতা বিনিময় করেছেন। সউদি আরবের সঙ্গে এই সখ্যের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ কতটা তা তারা অনুমান করতে চান।
ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি নিয়ে একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর পর গোটা পশ্চিম এশিয়ায় আধিপত্য কায়েমের প্রশ্নে শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষের আশঙ্কা বেড়েছে। রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে আইএস গোষ্ঠী। ঠিক এমন একটা অবস্থায় সুন্নিপ্রধান সউদি আরবের সঙ্গে ভারতের মতো দেশের ঐক্যবদ্ধ থাকাটা পশ্চিমা বিশ্ব তথা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে রাজনীতিকরা মনে করছেন, শুধুই যুক্তরাষ্ট্রের চাপ নয়। নিজের একটা নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন নরেন্দ্র মোদি, তবে খুব সতর্ক ও নিয়ন্ত্রিতভাবে। রাজনীতির লাভক্ষতির অঙ্ক কষেই তিনি আরএসএস এবং অমিত শাহের হিন্দুত্ব লাইন বজায় রাখছেন। আবার খুব মন্থর গতিতে হলেও মুসলমানদের মনকে ছোঁয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তার মতে, মোদি জানেন যে মক্কা-মদিনার দেশে গিয়ে বাদশাহের সঙ্গে রুটি ভাগ করে খাওয়ার অর্থ দেশের সুন্নি সম্প্রদায়ের মুসলিমদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা। উল্লেখ্য, ভারতের ১৭ কোটি মুসলমানের মধ্যে প্রায় ১২ কোটিই সুন্নি সম্প্রদায়ের। মোদি-ঘনিষ্ঠ রাজনীতিকরা অবশ্য এ-ও বলছেন, মুসলিম মনের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও বিষয়টি এমন নয় যে, প্রধানমন্ত্রী আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবারের লাইন ভেঙে বেরিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি দুর্গাপুরে আজানের সময় বক্তৃতা থামিয়েছিলেন মোদি। তাতে সাধারণ মুসলমানদের দৃষ্টি আকষণ করেছেন তিনি। তারই সরকার আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংখ্যালঘু’ তকমা ঘোচানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করছে, যাতে সেখানে সংখ্যালঘুদের জন্য অর্ধেক আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা বাতিল করে তফসিলি জাতি, উপজাতি এবং ওবিসিদেরও সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া যায়। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে দেশ যখন উত্তাল, তখন পাথুরে নীরবতা বজায় রেখেছিলেন মোদি। এখন সঙ্ঘের নিয়ন্ত্রণরেখায় থেকেও যতটা সম্ভব সংখ্যালঘুদের মনের কাছাকাছি পৌঁছানোর একটা রাজনৈতিক চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী। কয়েক বছর আগেও যা নাকি ছিল অভাবনীয়। মোট কথা, মোদি নানা কৌশলে সাধারণ মুসলমানের সহজ দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টায় আছেন। এই সূত্রে আরো একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়, ব্রাসেলসে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার এক সপ্তাহ আগে দিল্লিতে বিশ্ব সুফি সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন মোদি। সেখানে তিনি ‘শান্তিপূর্ণ ইসলাম’ ও সুফি সম্প্রদায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও করেন। তিনি বলেন, আল্লার ৯৯টি নাম রয়েছে। কিন্তু কোনওটিই হিংসা বা শক্তি প্রদর্শনের কথা বলে না। এবিপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন