শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

টাঙ্গাইল ও লক্ষ্মীপুরে ‘বন্দুক যুদ্ধে’ নিহত ৩

প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : টাঙ্গাইলে র‌্যাবের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সর্বহারা পার্টির ২ নেতা নিহত হয়েছে। এদিকে লক্ষ্মীপুরে পুলিশের সঙ্গে একই ধরনের ঘটনায় এক যুবক নিহত হয়েছে।
টাঙ্গাইলে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ২ সর্বহারা নেতা নিহত
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলে র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে সর্বহারা গ্রুপ পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার ফজলু ড্রাইভার (৩৮) ও তার ঘনিষ্ট সহযোগী উজ্জ্বল (৩০) নিহত হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের যুগনী হাটখোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২ এর ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানী (সিপিসি-৩) এর কোম্পানী কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, গোপন সংবাদের ভিক্তিতে ওই এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারে যায় র‌্যাবের একটি দল। এসময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে ৭/৮ জনের সর্বহারা দলের সদস্যরা। এসময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়ে। দুইপক্ষের মধ্যে ২০-২৫ রাউন্ড গুলিবিনিময়ের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় সর্বহারা গ্রুপ পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার ফজলু ও তার সহযোগী উজ্জ্বল। এসময় মোহাম্মদ আলী ও নুরুজ্জামান নামের দুই র‌্যাব সদস্য আহত হয়। গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে ফজলুর অপর সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
পরে ঘটনাস্থল থেকে ১টি বিদেশী রিভালভার, ১টি পিস্তল, ১টি ম্যাগজিন, ৭ রাউন্ড গুলি ও ১টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
লক্ষ্মীপুরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১
লক্ষ্মীপুর জেলা সংবাদদাতা : লক্ষ্মীপুরে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে আবু কাউছার (৩০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছে। বুধবার রাত ৩টায় সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের ৩ নাম্বার ব্রীজের মাথা নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কাউছার সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের ইউনুছ মিয়ার ছেলে।
কাউসার রাজনীতির ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবী করে নিহতের স্বজনরা জানান, বুধবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নিজের পাসপোর্ট করানোর জন্য কাউছার ওই অফিসে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ হয়। তারা ডিবি অফিস ও চন্দ্রগঞ্জ থানায় তার সন্ধান চাইতে গেলে পুলিশ তাকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানায়। কিন্তু সকালে শুনতে পায় কাউছারের লাশ হাসপাতালে পড়ে আছে। পুলিশ গুলি করে কাউছারকে হত্যা করেছে। কাউছার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত।
লক্ষ্মীপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) নাসিম মিয়া জানায়, ৬ মামলার আসামী কাউছারকে নিয়ে লতিফপুর গ্রামের ৩নং ব্রিজের মাথা এলাকায় অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে যায় চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ। এ সময় কাউছারের সহযোগীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ও পাল্টা গুলি ছুড়লে সন্ত্রাসীরা পিছু হটে। এতে এস আই কাউছার উদ্দিন চৌধুরী, কনেস্টেবল ইব্রাহিম খলিল ও মহসিন খান পুলিশের ৩ সদস্যসহ কাউচার গুলিবিদ্ধ হয়। পরে আহতদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কাউছারকে মৃত ঘোষণা করেন। কাউছারের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সদর থানা ও চন্দ্রগঞ্জ থানায় অস্ত্র ও ডাকাতিসহ ৬টি মামলা রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, ৪টি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।





জয়পুরহাটের ৫ নদীতে এখন চাষাবাদ, খেলার মাঠ!
জয়পুরহাট থেকে মুহাম্মদ আবু মুসা : প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পলি জমে জয়পুরহাট জেলার নদী গুলো এখন মরা খালে পরিনত হয়েছে। একসময় খরশ্রতা যমুনা, তুলশীগঙ্গাঁ সহ অন্যান্য নদীগুলো প্রবীন ও নতুন প্রজন্মের কাছে শুধুই স্মৃতি। নদীর বুকে পাল তোলা নৌকার বদলে এখন নাঙ্গলে ফলার আঘাতে নদীর বুকে চাষ হচ্ছে নানা রকম ফসল। ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর বুকে চাষাবাদ করা হচ্ছে ধান, মিষ্টি আলুসহ নানা ফসল। চরানো হচ্ছে গরু ছাগল। খেলার মাঠ হিসেবে নানা ধরনের খেলায় মেতে উঠছে শিশু কিশোর। নদী গুলো সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই। খনন করে মরা নদীর পানি প্রবাহ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এ এলাকা মরু পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি বিশেষজ্ঞরা।
 জানা গেছে- ভারতীয় সীমানার অভ্যন্তরে সৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে জেলার মধ্যে প্রবেশ করেছে ছোট যমুনা, তুলশীগঙ্গা, চিরি ও হারাবতি নদী। এক সময় সারা বছর পানিতে ভরা থাকত নদী গুলো । নৌকা চলত,গান গাইত মাঝি। সড়ক পথের চাইতে নদী পথগুলো বেশি ব্যবহার করত এ জেলার মানুষ। পাশ্ববর্তী জেলার সাথে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল এই নদী গুলো।
প্রতিবছর উজানে  থেকে বন্যার পানির সাথে বিপুল পরিমান পলিও নেমে আসে। পলি জমে নদী গুলোর বুক উঁচু হয়ে উঠেছে। বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি ভাটিতে নামতে পারেনা এতে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে অস্বাভাবিক বন্যার সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এতে ফুল ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। হাজার হাজার মানুষ পানী বন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। জেলা ত্রান ও কৃষি বিভাগের তথ্য মতে অকাল বন্যায় প্রতি বছর প্রায় ২০০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়। গত ১০ বছরে প্রায় ২ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
অপর দিকে শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি ব্যবহার করে সেচ কাযক্রমের পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমানে জেলার ৪টি নদী শুকে গেছে। বোরো মৌসুমে নদীতে পানি না পেয়ে নদীর বুকে গভীর নলকুপ স্থাপন করে সেচ কাজ করছে কৃষকেরা। নদীর বুকে ধান ও মৌসুমী ফসল চাষ করছে স্থানীয় চাষীরা। কোথাও শিশুরা নদীর বুকে খেলা ধুলায় মেতে উঠেছে। এক সময় স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন চৈত্র বৈশাখ মাসে নদীগুলোতে নানা প্রজাতির মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বর্তমানে ওই নদীগুলোতে বালু খোর ও ভূমি দস্যুরা নদীর বুক থেকে এবং পার্শ্ববর্তী আবাদী জমি কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে মূল নদীর মানচিত্র হারাতে বসেছে। অবস্থা দেখে মনে হয় যেন দেখার কেউ নেই। নদী কুলের স্থানীয় প্রবীন বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায় নদীগুলো অত্যান্ত প্রসস্ত ও খরশ্রতা ছিল। তখন ব্যবসা বাজিন্যর জন্য আসতো পাল তোলা নৈকা সওদাগরদের ও ব্যবসায়ীদের পদচারনায় নদী পথ ছিল মুখরিত। নদীগুলোতে চলে না আর পাল তোলা নৌকা। জেলেদের মাছ শিকারে কোলাহল চৈত্রের বাতাসে নদীর মুনমুগ্ধকর ঢেউ আর নেই। এর বদলে নদীর বুক চিরে চাষ হচ্ছে ইরি বোরো ধান ভুট্টা, কচু, পাট, মিষ্টি আলু, সহ নানা রকম ফসল।
জেলার নদী গুলো দিন দিন মরে গেলেও নদী বাঁচাতে সরকারী ও বেসরকারী কোন উদ্যোগ নেই। ১৯৮২ সালে তৎকালীন সরকারের আমলে জেলার তুলশীগঙ্গা নদী খনন কাজ শুরু হলেও অজ্ঞাত কারনে তা বন্ধ হয়ে যায়। বাকী ৪টি নদী জন্মের পর কোন দিনই খনন করা হয়নি বলে জানিয়েছ স্থানীয় পানি উন্নয়ন বিভাগ। পানি উন্নয়ন বিভাগে কর্মরত পানি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নদী খনন করে পানি প্রবাহ সৃষ্টি করতে না পারলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে। স্থায়ী মরুভূমিতে পরিনত হবে জয়পুরহাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।
জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মার্জান হোসেন জানান, প্রতি অর্থ বছরে জেলার নদী খননের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ছোট যমুনার ২৭ কিলোমিটার, তুলশীগঙ্গার ৩১ কিলোমিটার হারাবতির ২০ কিলোমিটার ও চিরির ১৬ কিলোমিটারসহ মোট ৪টি নদীর প্রায় ১৫০ কিলোমিটার অংশ খননের জন্য অর্ধশত কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়, দাতা সংস্থার টানাপেড়েনের কারনে ইতোমধ্যে বাতিল হয়েছে বলে জানা গেছে। অপর দিকে পরিবেশ রক্ষার নামে দাতা সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ফান্ড সংগ্রহ করলেও নদী রক্ষায় কোন এনজিও বা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন