শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জাতিসংঘ ইইউসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের উদ্বেগ : খুনিদের গ্রেফতার দাবি

প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে এ হত্যাকা-ের সাথে যুক্ত খুুনিদের গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং লেখকদের বৈশ্বিক সংগঠন পেন ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী সংস্থা ও দেশ। সেই সাথে বাংলাদেশের সব লেখক, ব্লগার ও মুক্তমনাদের সুরক্ষা দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে সংস্থাগুলো।
জাতিসংঘ নাজিমুদ্দিন সামাদ হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত এ ঘটনার তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক রবার্ট ওয়াটকিনস গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই ঘটনার নিন্দা  জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হত্যায় সম্প্রতি ছেদ পড়লেও এই হামলায় প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের প্রবণতা ক্রমবর্ধমান। ২০১৩ সালে এ ধরনের হত্যাকা- শুরুর পর থেকে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশের পাশপাশি তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আহ্বান জানিয়ে আসছে বলে উল্লেখ করন তিনি।
ঝুঁকির মুখে থাকা অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের ‘পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত’ করতে আবারও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘ প্রতিনিধি। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়েই দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। কারণ গণতান্ত্রিক সমাজে এটার মূল ভিত্তি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন তার বিবৃতিতে বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি মৌলিক মানবাধিকার। ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সকলের সম্মান এবং সহ্য করার ক্ষমতা রাখা উচিত। নাজিম বাংলাদেশের মানুষের মুক্ত চিন্তাকে সমর্থন দিয়ে নির্ভীকভাবে কাজ করে গেছে।
পিয়েরে মায়াদুন বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার যে কোনো উদোগ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থন পাবে। তিনি নাজিমের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং তদন্তের মাধ্যমে খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এক বিবৃতিতে বলেছে, সামাদ হত্যা মনে করিয়ে দেয়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চাকারী মানুষদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক চ¤পা প্যাটেল বলেন, নাজিমুদ্দিন সামাদের নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের কোন যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। দৃশ্যত, নিজের মনের কথা প্রকাশের মতো সাহসী হওয়ার মূল্য নিজের প্রাণ দিয়ে তাকে চুকাতে হয়েছে। এটি ¯্রফে কোন অর্থহীন খুনই নয়। এটি মত প্রকাশের অধিকারের ওপর ভয়াবহ হামলা।
অ্যামনেস্টির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে কমপক্ষে পাঁচ ব্যক্তি নিজেদের সেকুলার মতামত ও লেখনীর কারণে খুন হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের জন্য কাউকে এখন পর্যন্ত বিচারের মুখোমুখি করা হয়নি। কঠোরভাবে এসব হামলার নিন্দা জানাতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ। সরকার বরং লেখনীর মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া বন্ধে সেকুলার অ্যাক্টিভিস্টদের নির্দেশনা দিয়েছে। বেশ কয়েক ডজন ব্লগার প্রাণের ভয়ে লুকিয়ে যেতে বা নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
চ¤পা প্যাটেল বলেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এ হত্যাকান্ডগুলোর খোলাখুলি নিন্দা জানাতে হবে। সহিংসতার এ ভয়াবহ চক্র নির্মুলে সিরিয়াস পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা সেকুলার অ্যাক্টিভিস্টদের হত্যায় জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। এর কম কিছু হলে একটি বার্তা যাবে যে, আক্রমণগুলো সরকারের পক্ষ থেকে মেনে নেয়া ও অনুমোদিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে আরও নিশ্চিত করতে হবে যে, যেসব অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক হুমকিতে আছেন, তাদের চাহিদা অনুযায়ী কার্যকর সুরক্ষা প্রদান করতে হবে।
লেখকদের বৈশ্বিক সংগঠন পেন ইন্টারন্যাশনালও সামাদ হত্যাকান্ডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। সংগঠনটি বলেছে, এ হত্যাকান্ড দ্রুত তদন্ত করা উচিৎ ও দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিৎ।
পেন বাংলাদেশের সাধারণ স¤পাদক ড. সৈয়দা আইরিন জামান বলেন, পেন বাংলাদেশের পক্ষে আমি এ হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। খুনীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই। বর্তমানে সেকুলার ব্লগার, অ্যাক্টিভিস্ট, প্রকাশক ও লেখকদের অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে এ ধরণের ঘটনা আর যাতে না ঘটে।
উল্লেখ্য, গত বুধবার বুধবার রাত ৯টার দিকে বাসায় ফেরার সময় সূত্রাপুরের একরামপুরে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন বিভাগের ছাত্র ২৭ বছর বয়সী নাজিমকে। ফেইসবুক পাতায় তিনি নিজেকে সিলেট জেলা বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করেন। নাজিম অনলাইনে লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি সিলেটে গণজাগরণ আন্দোলনের সংগঠক হিসেবেও কাজ করেছিলেন বলে বন্ধুরা জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন