স্টাফ রিপোর্টার : আগামী জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ পুঁজা উদযাপন কমিটির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আইনি লড়াই চালিয়ে যান, আদালতে আমাদের কোনো হাত নেই। খুলনা সিটি করপোরেশন ও বার কাউন্সিল নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি আগামী নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে জিতবে, বিএনপি এ আশা হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে নানান ছল ছুতায় নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে। বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা নির্বাচনে আসবে কি আসবে না। এর জন্য আওয়ামী লীগকে দোষ দিয়ে কোনও লাভ নেই।
‘সুপরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে জামিনের পরও সরকার তাকে মুক্তি দিচ্ছে না’ বিএনপির এমন অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মামলা কয়টা, জামিন কয়টার হবে? এটা আমাদের বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ তো মামলাও দেয়নি, জামিনও দেয়নি। এই মামলা করেছে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকার। কিন্তু বিএনপি অবিরাম মিথ্যাচার করছে, মনে হচ্ছে এই মামলা যেন আওয়ামী লীগ দিয়েছে। দশ বছর এই মামলার কার্যক্রমকে বিঘিœত করে মামলার রায় হয়েছে মাত্র কিছু দিন আগে। তিনি বলেন, একশত বায়ান্ন দিন তিনি হাজিরা দেননি। অনেক আগেই এই মামলার নিষ্পত্তি হতো। মামলার দন্ড দিয়েছেন আদালত, তাকে মুক্তিও দিতে পারেন আদালত জামিনও দিতে পারেন আদালত। আওয়ামী লীগ সরকার জামিন দিতে পারে না। এক মামলার জামিন হয়েছে। তার মানে হচ্ছে এই সরকারের আমলে বিচার বিভাগ স্বাধীন। অপেক্ষা করুন।
বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আন্দোলন আপনারা পারবেন না, মরা গাঙ্গে জোয়ার আসে না। এটা পারবেন না। নির্বাচনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে কাদের বলেন, আইনি লড়াইয়ে যান, আইনি লড়াইয়ে আপনারা এক মামলায় জামিন হয়েছে, আরো মামলা আছে। আরো লড়াই করুন আদালতই জামিন দিতে পারেন। আমি পরিস্কার করে বলতে চাই এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।
বিএনপির নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ট্রেন্ড শুরু হয়ে গেছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে বিএনপির হেরে যাওয়ার ট্রেন্ড শুরু হয়ে গেছে। পর্যবেক্ষকরাও বলছে খুলনায় দু-তিনটা অনিয়ম ছাড়া প্রত্যেকটাতেই নির্বাচন ফ্রি এন্ড ফেয়ার হয়েছে। শুধুমাত্র বিএনপি এই নির্বাচন মেনে নিতে পারেনি। এক লাখ দশ হাজার ভোট পেয়েছে। নির্বাচন ফেয়ার না হলে বিএনপি এত ভোট পেত? এখন বার কাউন্সিল নির্বাচন খুলনার সঙ্গে মিলিয়ে বলে, গেলরে গেল বার কাউন্সিলও গেল।
কাদের বলেন, বার কাউন্সিলেও শুনি নতুন অভিযোগ, এখানেও কারচুপি হয়েছে। কোথায় হলো? বার কাউন্সিলের নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসাররা প্রত্যেকেই কিন্তু জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এখানেও কারচুপি? এরা আসলে আগামী নির্বাচনে জিতবে এ ধরণের আশা হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার ভয়ে নানান ছলছুতা, নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে বিএনপি। আমরা নির্বাচনে শক্তিশালী প্রতিদ্ব›দ্বী চাই। আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চাই না। বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নির্বাচনে আসবে কি, আসবে না। এর জন্য আওয়ামী লীগকে দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই। ভোট দিবে জনগণ, জনগনের উপর তাদের বিশ্বাস কম। সেজন্যই তারা বারে বারে ঘরে বসে এয়ার কন্ডিশন রুমে বসে প্রেস ব্রিংফিং করে পুরোনো ভাঙ্গা রেকর্ড বাজায়। কথায় কথায় বিদেশিদের কাছে নালিশ দেয়।
এ পর্যায়ে অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসা ভারতীয় হাই কমিশনার শ্রী হর্ষবর্ধন শ্রিংলার দৃষ্টি আকর্ষন করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিদেশিরা কি আমাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিবে। মি. হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, তার দেশ কি আমাদের ক্ষমতায় বসাবে? আমাদের ক্ষমতায় বসাবে বাংলাদেশের জনগণ, তারা আমাদের বন্ধু। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আমরা সুদৃঢ় করতে চাই। আমরা আমাদের নিজেদের স্বার্থে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। বাংলাদেশের স্বার্থে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে।
এসময় দেশের হিন্দু ধর্মালম্বীদের সংখ্যালঘু না ভেবে মাথা উচু করে দাঁড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিজেদেরকে মাইনরিটি ভাবেন কেন। আপনাদের ভোটের মূল্য কম আর মুসলমানদের ভোটের মুল্য বেশী এটা কি সংবিধানে আছে? ভোটের অধিকার সবার সমান। নিজেদেরকে দূর্বল ভাববেন না। মাথা উচু করে, শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ান।
পাকিস্তানের দোষরদের আওয়ামী লীগের বিকল্প না ভাবার পরামর্শ দিয়ে দলটির এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা চেয়ে আরকি কেউ আপনাদের আপনজন আছে। ছোট খাটো ভুলক্রটি নিয়ে বসে থাকলে বড় ভুলক্রটি হবে। মনে নেই ২০০১ এর নির্বাচনের পরের কথা। ২০০১, ২০০৩ এর নির্যাতনের কথা ভুলে গেছেন? আপনাদের জন্য আমাদের চেয়ে বেটার কেউ না। যারা পাকিস্তানের বন্ধু, তারা আপনাদের বন্ধু হতে পারে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির আমলে আপনাদের উপর যে নির্যাতন হয়েছে সেটা ওই সরকারের কেন্দ্রীয় পলিসির অংশ। আমাদের আমলে যে ছোট খাটো ঘটনা ঘটেছে সেটা শেখ হাসিনা সরকারের পলিসির অংশ না। আওয়ামী লীগেও দূর্বৃত্ত আছে। কেউ কোনো অন্যায় করলে আমি তাদের দূর্বৃত্ত বলি। জমি, বাড়ি, সম্পত্তি দখল এ ব্যপারে আমাদের সরকার জিরো টলারেন্স। আপনাদের জন্য বিকল্প আমরাই। আমাদের বিকল্প পাকিস্তানের দোসররা। ভুল করে পাকিস্তানের দোসরদের আমাদের বিকল্প ভাববেন না। কেউ হুমকী দিলে শক্ত হয়ে দাঁড়াবেন।
অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমলে দুই দেশের মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এই সম্পর্ক আরো উচ্চমাত্রায় যাবে। সুখে-দু:খে ভারত সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বাংলাদেশে সকল স¤প্রদায়ের মানুষ বিশেষ করে সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মানুষ সবাই সমান অধিকার ভোগ করছে। এটা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশরা করি। তিনি বলেন, পুজা উদযাপন পরিষদের এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যে পরিষদের একটি নতুন কমিটি আসবে। এই কমিটি প্রয়োজনীয় এজেন্ডা তৈরি করে কাজে যাবে বলে আমি আশা করি।
পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত দাস দিপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, হিন্দু, বৌদ্ধ খীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন