শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কাঁটায় ঘেরা বিএনপির সম্ভাবনা

প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফজাল বারী : বিএনপি নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিতে দলটির সামনে অপার সম্ভাবনা। শুধু প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টিকে থাকা বড় কথা। আর রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে- তাদের সামনে রাজনৈতিক ও জাতীয় বহু ইস্যু আসে-যায় কিন্তু সে ইস্যু পুঁজি হিসেবে নিতে পারছে না বিএনপি। প্রতিবেশী দেশ ভারতের অংশীদারিত্বে সুন্দরবন ধ্বংসের প্রকল্প রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ, রাজকোষ থেকে অর্থ লোপাট, বাঁশখালীতে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ হত্যা, সেনানিবাসের অভ্যন্তরে তনু হত্যাসহ সর্ব শেষ গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিসহ জনদুভোগ ইস্যুতে এ দলটি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে কিংবা নীরবতা পালন করেছে। এমনকি দলীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের দীর্ঘসূত্রিতায় হিতে-বিপরীত টানছে। ফলে কাঁটায় ঘেরা হচ্ছে সে নেতাদের সম্ভাবনা। এ অবস্থায় কতটা ‘মুন্সিয়ানার’ পরিচয় দিয়ে বিরোধী দল এগোতে পারে, তা-ই দেখার বিষয়।
রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির মতো একটি বৃহৎ দল জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চলছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রাষ্ট্র বিজ্ঞানী। ইনকিলাবের কাছে নিজের নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘ইস্যু আসে ইস্যু যায় কিন্তু বিএনপি তা কোন দিনই কাজে লাগাতে পারেনি। যার কারণে সম্ভাবনার পথক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে’।
আলাপকালে বিএনপির নীতি নির্ধারকদের কয়েকজন ইনকিলাবকে জানান, বিএনপির ভিশন-২০৩০ মূলত রাষ্ট্র ক্ষমতাকে টার্গেট করেই। কাউন্সিলে উত্থাপিত খসড়া ভিশনই হচ্ছে আগামীর নির্বাচনী ইশতেহার। এ লক্ষ্যেই শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া তার সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচন করছেন। কমিটি ঘোষণা করে ঘরগোছানোর পরই আবার সচল হবে নির্দলীয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।  
কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন মনোভাবে তুষ্ট হতে পারছেন না তৃণমূল নেতাকর্মীরা। অনেকটাই চুনে পোড়া মুখে দধি খাবার মতোই ভীতসন্ত্রস্ত তারা। প্রশ্নের উত্তরে ক্ষোভের সাথেই ইনকিলাবকে বলছেন- আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাদের কর্মের উপর ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। স্বামীর ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি (সেনানিবাসের) ছাড়া হয়ে, পুত্র হারানোর শোক এবং কঠিন দুর্দিনে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) চোখের পানিও যাদের আন্দোলনের মাঠে নামাতে পারেনি। যারা অতীতে অনেক আখের গুছিয়েছেন, এখন মন্ত্রী-এমপি হওয়ার জন্য নিত্যদিন যারা ছক আঁকেন এবং বছরের পর বছর দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ আকড়ে রয়েছেন; আন্দোলনের সময় তারা কোথায় ছিলেন? তাদের ভূমিকা কী ছিল? সেসব বিষয়ও বিবেচনা নেয়ার সময় এসেছে। দল এবং দেশের স্বার্থেই ম্যাডামকে এখন বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুতে হবে। দলীয় দুর্বত্তায়নের বলয় ভাংতে হবে।
কারণ সামনে প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও বিচারের নামে সাজানো রায়, অব্যাহত গুম-খুন, লুটপাট, জবর-দখল এমনকি গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মতো দলীয় এবং জাতীয় ইস্যুকে আন্দোলনের ইস্যু হিসেবে গ্রহণ করে রাজপথ দখলে নিতে না পারলে জিয়া পরিবারকে বাড়ি ছাড়া করার মতো শহীদ জিয়ার মাজারও বিলীন করার অপচেষ্টায় সফল হবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।  
দলীয় সূত্রমতে, ২০০৯ সালের মে মাসে ৪০ বছরের স্বামীর স্মৃতি বিজরিত বাড়ি ছাড়া হয়ে উঠেছেন ভাড়া বাসায়। এখানেই শেষ নয়, খালেদা জিয়া, তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর (মরহুম) বিরুদ্ধে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন আদালতে ২৬টি মামলা। কোকোর মৃত্যুর পর তার নাবালিকা দুই কন্যাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২৫ মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। চার্জগঠন ও প্রক্রিয়াধিন রয়েছে আরো ৬১ মামলা। সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহম্মেদের নামে অর্ধশতাধিক মামলা। রাজনৈতিক অঙ্গনে তার চেয়ে বেশিদিন কোন নেতাই রিমান্ডের মুখোমুখি হননি। দলের এক নম্বর থেকে শুরু করে কর্মী পর্যন্ত সবাই দুই থেকে শতাধিক মামলার আসামি। ফেরারি জীবনযাপন করছেন অনেকেই। প্রতিষ্ঠালগ্নের পর এমন পরিস্থিতিতে পড়েনি বিএনপি
বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের দলের শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে প্রায় দুই শতাধিক নেতাকে আগামী নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার ছক এঁকেছে শাসক দল। মামলা-হুলিয়ায় বিপর্যস্ত নেতাকর্মীরা। এ পরিস্থিতিতে নতুন নেতৃত্ব গঠন করে সরকারের নিপীড়নের খড়গ মোকাবেলা করাই বিএনপির জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সব কিছুই গৌন হবে যদি জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট জাতীয় ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা না যায়। গত সংসদ নির্বাচনের পর বহির্বিশ্ব যে ভূমিকা রেখেছে তা নার্সিং করে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরেকটু উন্নয়ন দরকার বলেও মত বিএনপি নেতাদের।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বিএনপির সামনে এখন অনেক কঠিন কাজ। দল গোছানোর জন্য প্রত্যাশিত নেতার সমন্বয়ে কাক্সিক্ষত কমিটি ঘোষণা করা, কঠিন মনোভাব পোষণ করে দলীয় দুর্বৃত্তায়নের বলয় ভাঙ্গা, বিএনপির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন, রাজনৈতিক মামলা-হুলিয়া থেকে নেতা-কর্মীদের বের করে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরমে আনা এখন খুবই জরুরি। দল গোছানোর পাশাপাশি দেশজুড়ে গুম-খুন, নারী-শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। আরেকটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবির সাথে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির কাধে দায় বর্তায়। আন্দোলন জোরালো করতে না পারলে সরকার প্রতিহিংসার পরায়ণ হয়েই শহীদ জিয়ার মাজার সরাতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই নেতা।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সাবেক সেনা কর্মকর্তা আ স ম হান্নান শাহ ইনকিলাবকে বলেন, কমিটি হচ্ছে এমন অনেক নেতাই গুরুত্বপূর্ণ পদ বাগানোর বদিচ্ছায় ঘুরঘুর করছেন। কিন্তু স্বামীর ৪০ বছরের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ছাড়া হয়ে, পুত্র হারানোর শোক এবং কঠিন দুর্দিনে ম্যাডাম জিয়ার  চোখের পানিও দলের ওইসকল নেতাদের আন্দোলনের মাঠে নামাতে পারেনি। অথচ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে অনেকে আখের গুছিয়েছেন। বিএনপি প্রধানের কাছে এই নেতার পরামর্শ হলো- দল এবং  দেশের স্বার্থেই ম্যাডামকে এখন বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আন্দোলনের সময় কোন নেতার  ভূমিকা কী ছিল? কোথায় ছিলেন, কী করেছেন। সেসব বিষয়ও বিবেচনা নেয়ার সময় এসেছে। সরকার যে কার্যকলাপ করছে তাতে প্রতিনিয়তই তারা জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে। এটা বিএনপির জন্য পজেটিভ। সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করতে পারলে বিএনপির অপার সম্ভাবনা রয়েছে তবে সামনের পথ যে একেবারেই মসৃণ হবে সেটা বলার উপায় নেই।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, নতুন কমিটি এমন হতে হবে যাতে  সারা দেশের নেতা-কর্মীরা একটা নতুন ভাবনা নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। তিনি বলেন, এক-এগারোর পর থেকে জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর নির্যাতন চলছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা-হুলিয়া। নিখোঁজ-গুম করে নেয়ার মতো ঘটনার হিসাব অনেক দীর্ঘ। তারপরও বিএনপির নেতা-কর্মীদের দমিয়ে রাখা যায়নি। ফিনিক্স পাখির মতোই তারা আবার জেগে উঠেছে। প্রত্যাশা পূরণ হবেই ইনশাল্লাহ।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু ইনকিলাবকে বলেন, সরকারের অপকর্মের মধ্যে বিএনপির সম্ভাবনা বিরাজ করছে। তাদের অপকর্মের চিত্র জনসম্মুখে উপস্থাপন করতে হবে। জনগণের চাপা ক্ষোভের বিস্ফোরণেই সরকারের বিদায় হবে। তার আগে বিএনপিকে জনতার কাছে কিছু প্রতিশ্রুত দিতে হবে, বিশ্বাস করার মতো কিছু কাজ করতে হবে। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, মেধাবি শিক্ষার্থীদের খুন-ধর্ষণের ঘটনার বিচারের জন্য জনতার যে দাবি তার সাথে বিএনপিকে মিলিত হতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন