স্টালিন সরকার : বাংলাদেশের অবিসম্বাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এ কি হাল! ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে উঠা, ’৭১ সালের ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ’৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ, ’৭২ সালের ১০ জানুয়ারী স্বাধীন দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধুর প্রথম সমাবেশসহ কত স্মৃতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে। ইতিহাসের সাক্ষী সবুজের সমারোহ গাছ-গাছালির ছায়াঢাকা পাখিডাকা সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন কাটাছেঁড়া ছিন্ন ভিন্ন! বাংলাদেশের স্থপতির স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নেই; অথচ ইহুদি ধর্মাবলম্বী লুই আই কানের নকশায় পাকিস্তান সরকার নির্মিত জাতীয় সংসদ ভবনের মূল অবস্থান ফিরিয়ে আনতে নকশা বহির্ভূত স্থাপনা সরানোর তোড়জোড় চলছে। রাজধানীর অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত সংসদ ভবনের আশপাশে গত ৪০ বছরে লুই কানের নকশার বহির্ভূত শত শত কোটি টাকা খরচে স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে নির্মিত ওই সব স্থাপনা উঠিয়ে দেয়া হবে? লুই কানের মূল নকশা রক্ষা করা প্রয়োজন বেশি; না জাতির জনকের স্মৃতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে রক্ষা করা জরুরী? শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কি চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরানোর পরিকল্পনায় লুই আই কানের মূল নকশার জন্য এতো অর্থ ব্যয় হচ্ছে? দেশের মানুষ মনে করে, লুই কানের মূল নকশার সংসদ ভবন নয়; বরং বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে আগে বাঁচানো উচিত। দেশের নতুন প্রজন্ম, পরবর্তী প্রজন্ম বংশপরম্পরায় শত শত বছর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দেখবে এবং বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে। ৭ মার্চে ঐতিহাসিক ভাষণ যারা শোনেন তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্বের আকৃতি মনে মনে কল্পনা করেন। বাস্তবে স্পটে গিয়ে সেটা দেখতে পান না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যদি গাছ-গাছালিতে ছেয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেখবেন তাদের পূর্ব পুরুষেরা এই মাঠে ইতিহাস রচনা করেছেন। অথচ সেই স্মৃতি মুছে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
দেড় কোটি মানুষের শহর ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। পরিবেশ দূষণ, বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ এবং জনসংখ্যার চাপে রাজধানী ঢাকা বিশ্বের বসবাস অনুপযোগী শহরগুলোর অন্যতম। ইট-পাথরের এই শহরে নির্মল বাতাস পাওয়া দুষ্কর। পরিবেশবাদীরা এ জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ রমনা পার্ক ও চন্দ্রিমা উদ্যানসহ সংসদ ভবন এলাকার নাম দিয়েছেন রাজধানীর ‘ফুসফুস’। এই দুই উদ্যানের গাছ-গাছালি যে অক্সিজেন ছড়ায় সেটাই গ্রহণ করে ঢাকার মানুষ বেঁচে আছে। ওই অক্সিজেন না পেলে ঢাকা শহর এতোদিনে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো মরুভূমি শহরে পরিণত হতো। প্রশ্ন হলো এই দুই উদ্যানের গাছ-গাছালি কি আগের মতো আছে? ইদানিং আবার শুরু হয়েছে রাজনীতির ভিতরে পলিটিক্স! বিএনপির নেতারা অভিযোগ করছেন, চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরানোর পলিটিক্স থেকেই লুক আই কানের নকশার খোঁজে সরকারের কিছু লোক মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির বিরোধ বাঁধিয়েই রাখতে চায়। হঠাৎ করে জাতীয় সংসদ এলাকাকে লুই আই কানের মূল নকশায় নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল কেন?
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারো তুলনা চলে না। বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশ কল্পনাও করা যায় না। আবার জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। তাঁকে ছাড়া ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ কল্পনা অবান্তর। ২৫ মার্চ কালোরাতে যখন পাকিস্তান বাহিনী ঢাকার মানুষের ওপর অতর্কিতে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে; তখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রাণ বাঁচাতে ভারতে পালিয়ে যেতে মরিয়া হয়ে উঠে। জাতি হয়ে পড়ে দিশেহারা। তখন সেনাবাহিনীর অফিসার হয়ে বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে নির্ঘাত ফাঁসি জেনেও স্বাধীনতার ঘোষণা দেন মেজর জিয়া। ঘোষক জিয়ার স্মৃতির প্রতি এদেশের কোটি কোটি মানুষের আবেগ-স্মৃতি জড়িত। সেই সূর্য সন্তানের কবর সরানোর কেন এই চেষ্টা? বিএনপির নেতারা প্রতিদিন সভা-সেমিনারে প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে জানাচ্ছেন ইহুদি লুই কানের নকশা কার্যকরের নামে চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে জিয়ার কবর সরানো হলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। তাহলে কি সরকারের ভিতরে থাকা কিছু মানুষ দেশকে আবার সংঘাতের পথে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন?
খবরে প্রকাশ জাতীয় সংসদের লুই আই কানের তৈরি মূল নকশা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কাইভে। গত সংসদ অধিবেশনে গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, লুই আই কান প্রণীত নকশার মূলকপি বাংলাদেশে সংরক্ষিত নেই। নকশা সংগ্রহের পর মূল নকশা বহির্ভূত স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করে অপসারণ করা হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, জাতীয় সংসদ ভবনটি বিখ্যাত মার্কিন স্থপতি এস্তোনীয় ইহুদি বংশোদ্ভূত লুই আই কানের নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। সময়ের পরিক্রমায় সামরিক-বেসামরিক বিভিন্ন সরকার কিছু স্থাপনা নির্মাণ করে। কিছুদিনের মধ্যেই লুই আই কানের নকশা দেশে নিয়ে আসা হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়। ওই নকশা বহির্ভূত চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবর, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, চীফ হুইপের বাড়িসহ অনেক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঃ মোগল আমলে রাজধানী ঢাকার ভিতরে গড়ে উঠে রমনা উদ্যান। মোগল সাম্রাজ্যের পতনের সঙ্গে রমনাও হারায় সৌন্দর্য। উপনিবেশিক যুগে ১৮২৫ সালে ঢাকার ইংরেজ কালেক্টর মি. ড’স ঢাকা নগরীর উন্নয়নে পদক্ষেপ নেন এবং কারাগারে বন্দীদের দিয়ে রমনার জঙ্গল পরিষ্কার করে বের করেন ডিম্বাকৃতির একটি অংশ। পরিষ্কার করা অংশটিকে কাঠের রেলিং দিয়ে ঘিরে তৈরি করা হয় রেসকোর্স। ইংরেজদের আমলে এই রেসকোর্সের উত্তর-পশ্চিমে একটি টিলাঘর তৈরি করে চারপাশে লাগানো হয় গাছ-গাছালি। তখনকার ঢাকার শিক্ষিত লোকজন টিলেঘরের নাম দেয় ড’সের ফুল। প্রতিদিন সকালে সাহেবরা রমনায় বেড়াতে আসেন এবং প্রাতঃভ্রমণ শেষে মিলিত হতেন ড’সের টিলায় কফি খেতে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর রমনা রেসকোর্স ময়দানের নাম পরিবর্তন করে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নামানুসারে রাখা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এই উদ্যানে ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’। শোনার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত বাংলার জনতা ‘না না’ প্রতিবাদ করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে মুক্তি পেলে ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়। ওই সংবর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয় ছাত্র-জনতা। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ রেসকোর্স ময়দানে মহাসমাবেশের আয়োজন করে। জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলটির নির্বাচিত এমপিরা ওই মাঠের মহাসমাবেশে শপথ গ্রহণ করেন পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের চাপের মুখে তারা বাংলার মানুষের স্বার্থের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। একাত্তরেই রেসকোর্স হয়ে ওঠে এ দেশের মানুষের তীর্থক্ষেত্র। ’৭১-এর ৭ মার্চ এখানেই জন্ম নেয় নতুন ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা সংগ্রামের জ্বালাময়ী ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাীনতার সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। তোমাদের যা যা আছে তা দিয়ে প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো -----’। ’৭১-এ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের পর এই ময়দানেই পাকিস্তানি বাহিনীর ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন নিয়াজী। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক লে. জে. এ এ কে নিয়াজির আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্ববৃহৎ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে বাংলাদেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু এই উদ্যানেই প্রথম ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওই সভায় মুুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী উপস্থিত ছিলেন। জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণআদালত গঠন করে। এই গণআদালতে গোলাম আযমের বিচার করা হয়। ঐতিহাসিক সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাংশে শিশু পার্ক নির্মাণ করা হয়। পার্ক হারিয়ে ফেলে তার আকৃতি। অতঃপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১৯৯৯ সালে ‘শিখা চিরন্তন’ স্থাপন করে। নির্মাণ করা হয় স্বাধীনতা স্তম্ভ। গাছ-গাছালি কেটে সবুজ উদ্যানে নির্মিত হয় সুউচ্চ টাওয়ার এবং তার তিন পাশে কৃত্রিম ওয়াটার বডি। স্বাধীনতা স্তম্ভের সঙ্গে তৈরি করা হয় ভূ-গর্ভস্থ জাদুঘর। জাদুঘরের মধ্যে অডিও ভিজ্যুয়াল কক্ষে আলোকচিত্র দেখানোর জন্য ১৫৬টি আসনের অডিটোরিয়াম গড়ে তোলা হয়েছে। বাংলা একাডেমির দিকে নির্মাণ করা হয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কেটেছেঁটে শুধু ইতিহাস নষ্ট করা হয়নি; পাশাপাশি রাজধানীর মানুষকে নির্মল বাতাস থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
সংসদ ভবন এলাকা ঃ ১৯০১ সালে এস্তোনিয়ায় এক ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন লুই আই কান। অতঃপর পিতা-মাতার সঙ্গে আমেরিকায় অভিবাসী হন। পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে স্থাপত্যে গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফিলাডেলফিয়ায় কর্মজীবন শুরু করেন। পাশাপাশি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা। ফিলাডেলফিয়ার রিচার্ড মেডিক্যাল ল্যাবরেটরি নকশার মাধ্যমে তিনি প্রথম খ্যাতি অর্জন করেন। এদিকে মূলত ১৯৫৯ সালে প্রথম ঢাকায় জাতীয় সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুূব খান প্রস্তাবিত দ্বিতীয় রাজধানী ঢাকার শেরে বাংলা নগরে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংসদ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে বর্তমান সংসদ ভবনটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তিনি সংসদ ভবন নির্মাণের নকশা ও পরিকল্পনার জন্য স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে নিয়োগ দেন। মাজহারুল ইসলামের প্রস্তাবেই সামরিক সরকার আমেরিকার ইহুদি লুই আই কানকে এ প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। ইহুদি ধর্মাবলম্বী স্থাপতি লুই কান সংসদ ভবন কমপ্লেক্স নকশা প্রণয়নের দায়িত্ব পান। প্রথমে তাঁকে সরাসরি কাজে নিযুক্ত না করে ভবনের প্রাথমিক নকশা প্রদানের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়। ১৯৬২ সালের মার্চ মাসে নকশা তৈরির পর তিনি আনুষ্ঠানিক কাজ পান। এর আগে ১৯৬১ সালে বর্তমান মানিক মিয়া এভিনিউ-এর উত্তর পার্শ্বে ২০৮ একর জমি দ্বিতীয় রাজধানী প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। ওই জমির ওপর ১৯৬২ সালে জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৬৪ সালে ১৫ মিলিয়ন ডলারের অনুমানিক ব্যয় ধরে বর্তমান সংসদ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যাবতীয় সুবিধাদিসহ ৩২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সংসদ ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৮২ সালে। এই কমপ্লেক্সের মধ্যে মূল সংসদ ভবন ছাড়াও সংসদ সদস্য, মিনিস্টার ও সেক্রেটারিদের হোস্টেল, অতিথি ভবন ও কমিউনিটি বিল্ডিং। রাস্তা, হাঁটার পথ, বাগান ও লেকসহ স্থাপনাকে আকর্ষণীয় করে তোলা হয়। মসজিদ ও প্রেসিডেন্টের বাসভবনের ক্ষেত্রে মূল মাস্টারপ্ল্যানে পরিবর্তন করা হয়। এ ভবনগুলো কম আকর্ষণীয় করে সেগুলো প্রধান সংসদ ভবন এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে নির্মিত ভবনগুলোর মধ্যে প্রেসিডেন্টের বাসভবন (বর্তমানে গণভবন) ছিল একটি। ১৯৬৪ সালে সংসদ ভবনের কাজ শুরু হলেও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ ছিল। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার ভবনের মূল নকশায় কোনো রকম পরিবর্তন না করেই নির্মাণ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়। মূল ভবন কমপ্লেক্সের ৯ স্বতন্ত্র বিভাগে বিভক্ত। দৃষ্টিনন্দন এ ভবনে কোথাও কোনো কলাম নেই। শূন্য স্থানের অংশ হিসেবে ফাঁপা কলাম রয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা শুধুই কাঠামো নকশায় ভারসাম্য রক্ষার্থে। রাজনৈতিক পালাবদলের মধ্যেই সংসদ ভবনের কাজ এগিয়ে চলে এবং সম্পন্ন হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে কাজ সমাপ্ত হয়। তবে জিয়ার মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সংসদ ভবনের উদ্বোধন করেন। ১৯৮২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এ ভবনে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
কংক্রিটের রাজধানী ঢাকার বাতাসে সিসা উড়ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও চন্দ্রিমা উদ্যানের গাছপালা রাজধানী ঢাকার বাতাস কিছুটা হলেও ঠা-া রাখছে। দুই উদ্যানের গাছ-গাছালি অক্সিজেন দিচ্ছে মানুষকে। পরিবেশের জন্য দু’টি উদ্যানকে বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন। অথচ একদিকে গাছ-গাছালি কেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ধ্বংস করা হচ্ছে উন্নয়নের নামে। অন্যদিকে জিয়ার কবর সরানোর লক্ষ্যে চন্দ্রিমা উদ্যান ধ্বংসের পরিকল্পনা চলছে। বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই সূত্রে গাঁথা। নির্মল বাতাস আর আগামী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি দেখাতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত। অথচ সেটা না করে পাকিস্তান সরকারের মস্তিষ্ক প্রসূত ইহুদি স্থপতির গড়া সংসদ ভবনের মূল নকশা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। জিয়ার কবর সরালেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন