শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মাদকবিরোধী অভিযান বন্দুকযুদ্ধে সাত জেলায় নিহত আরও ১০ জন

| প্রকাশের সময় : ২৫ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 

ইনকিলাব রিপোর্ট : দেশজুড়ে চলা মাদকবিরোধী অভিযানে গতকালও সাত জেলায় বন্দুকযুদ্ধে ১০ জন নিহত হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় ৬ পুলিশও আহত হয়েছে। জানা গেছে, ফেনী, মাগুরা ও কুমিল্লায় দুজন করে এবং নারায়ণগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরও দুজন নিহত হয়েছে। গতকাল ৯জন নিয়ে মাদক বিরোধী অভিযানে দেশজুড়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৩ জন।
যার মধ্যে গত পাঁচ দিনে নিহত হয়েছে ৪১ জন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, নিহত সবার বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা ছিল এবং তারা মাদক ব্যবসায়ী। আর প্রত্যেকেই নিহত হয়েছে বন্দুকযুদ্ধে। আইন-শ্ঙ্খৃলা বাহিনী নিজেদের জীবন বাঁচাতে গুলি চালালে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে আমির খাঁ (৪০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহত আমির জেলার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ৯টি মাদক ও একটি হত্যাসহ মোট ১২টি মামলা রয়েছে আখাউড়া থানায়। বন্দুক যুদ্ধে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছে।
তবে নিহতের পরিবারের দাবী, তাকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ ৩টি মামলা রয়েছে। সবগুলো মামলায় সে জামিনে রয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ স্টিল সেতুর কাছে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আমির উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের মৃত সুরুজ খার ছেলে। আখাউড়া থানার ওসি মোশাররফ হোসেন তরফদার বলেন, গত বুধবার রাতে বনগজ স্টিল সেতু এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আমির ও তার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ৮/১০রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে ৬ রাউন্ড শর্ট গানের গুলি চালায়। এ সময় সহযোগীদের গুলিতে মারা যান আমির। গতকাল সকালে জেলা সদর হাসপাতালে নিহতের মেয়ের জামাতা শরীফ জানান, গত সোমবার বিকেলে তাকে ২জন পুলিশের পোশাক পরিহিত ও ৪জন অন্য পোশাকে আমার শ্বশুরকে বাড়ি থেকে ধরে গাড়ি করে নিয়ে আসে। গতকাল বুধবার বিকেলে তাকে আদালতে চালান দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে ফেস বুকের মাধ্যমে জানতে পারি বন্দুক যুদ্ধে তিনি মারা গেছেন। তিনি কৃষি কাজ করতেন। তার বিরুদ্ধে গ্রামের একটি হত্যা মামলাসহ ৩টি মামলা রয়েছে। হত্যা মামলায় ৯ মাস জেল খেটে জামিনে বের হয়। বাকী মামলাগুলোতে জামিনে রয়েছেন।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে বাবুল প্রকাশে লম্বা বাবুল (৩৫) এবং সদর দক্ষিণে রাজিব (২৬) নামের দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন আমানগন্ডা সলাকান্দী নতুন রাস্তার মাথায় এবং রাত সোয়া ২টার দিকে সদর দক্ষিণ উপজেলার চৌয়ারা সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাাম পুুরাতন ট্যাংক রোডের গোয়ালমথন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত বাবুল চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বৈদ্দেরখিল গ্রামের হাফেজ আহাম্মদের ছেলে এবং রাজিব সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি সংলগ্ন চাঙ্গিনী গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে। দুজনই তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী বলে পুলিশ দাবি করেছে। উভয় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র ও মাদক। থানার ওসি মো. আবুল ফয়সাল জানান, নিহত বাবুলের বিরুদ্ধে মাদক আইনে ৫টি মামলা রয়েছে। নিহত রাজিবের বিরুদ্ধ থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে।
কক্সবাজার ব্যুরো জানায়, কক্সবাজার শহরতলীর উত্তরণের উত্তর পাশের পাহাড়ি এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আস্তানা থেকে মো. হাসান (৩৫) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এটিকে ইয়াবা ব্যবসায়ীর মোঃ হাসানের লাশ বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দিবাগত সাড়ে তিনটায় লাশটি উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ। নিহত হাসান কলাতলী আদর্শগ্রাম এলাকার মৃত খুইল্যাল মিয়ার পুত্র বলে জানাগেছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দীন খন্দকার জানান, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দু’গ্রæপের গোলাগুলি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায় একদল পুলিশ। অভিযানের খবর টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইয়াবা ব্যবসায়ী মো. হাসানের লাশ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে একটি দেশীয় বন্দুক ও দু’রাউন্ড গুলি পাওয়া যায়।
নিহত হাসানের বড় ভাই শহর মুল্লুক দাবী করেন, গত মঙ্গলবার সেহেরী খাওয়ার সময় বাড়ি থেকে সাদা পোশাকধারী কিছু লোক হাসানকে তুলে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে নিজের চিকিৎসা করতে গেলে ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখতে পান। প্রতিপক্ষরা হাসানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে দাবী করেন নিহতের স্ত্রী আমেনা খাতুন। বিভিন্ন সূত্রে জানাগেছে, নিহত মো. হাসানের কক্সবাজার বাসটার্মিনাল ও আদর্শগ্রাম কেন্দ্রিক ইয়াবা ব্যবসার বিশাল সিন্ডিকেট রয়েছে। শ্যামলী পরিবহণের একটি সিন্ডিকেটও হাসানের সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। দু’সিন্ডিকেট মিলে শ্যামলী পরিবহনে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার করে থাকে। ইয়াবা ব্যবসার টাকা দিয়ে হাসান টেকনাফ লাইনের বাস, ছাপরোকা গাড়ি ও কয়েকটি টমটমের মালিক হয়েছেন। স¤প্রতি আদর্শগ্রাম এলাকায় দু’টি বাড়ির কাজ চলছে বলেও জানান ওই সূত্র।
মাগুরা জেলা সংবাদদাতা জানান, মাগুরায় মাদক ব্যবসায়ীদের দুটি গ্রæপের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ২ জনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মাগুরার সহকারি পুলিশ সুপার মোঃ ছয়রুদ্দিন জানান, বুধবার দিনগত রাত ১ টার দিকে মাগুরা শহরতলীর পারনান্দুয়ালী হাউজিং প্রজেক্ট এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রæপের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বন্দুক যুদ্ধ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে ২ জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে। এ সময় সেখান থেকে কয়েক রাউন্ড বন্দুকের গুলি কিছু পরিমান হীরোইন উদ্ধার করা হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত মাদক ব্যবসায়ীর একজন মাগুরার ভায়না টিটিডিসি পাড়ার মিজানুর রহমান কালু (৪৩) ও মাগুরা শহরের পাশ্ববর্তী নিজ নান্দুয়ালী গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী আইয়ুব হোসেন (৫০)। মাগুরা সদর থানাসহ বিভিন্ন থানায় নিহত কালুর নামে ২১টি ও আয়ুবের নামে ১৮টি মাদকের মামলা রয়েছে।
সাতক্ষীরা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলায় আব্দুল আজিজ (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের চৌবাড়িয়া গ্রাম থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত আব্দুল আজিজ সদর উপজেলার পরানদহ গ্রামের কেরামত আলির ছেলে বলে জানা গেছে। ভাড়াশিমলা ইউপি সদস্য পিয়ার আলী জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে চৌবাড়িয়া গ্রামের সিদ্ধেরপুকুর সংলগ্ন পাকা রাস্তার পাশে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তাকে খবর দেয়। বিষয়টি তিনি থানায় জানালে সকাল ৭টার দিকে কালিগঞ্জ থানার পুলিশ লাশটি উদ্ধার করেন। লাশের চোয়ালে ও গলায় দু’টি গুলির চিহ্ন ছিল। লাশের পাশ থেকে একটি দেশী তৈরি পিস্তল, পাঁচ রাউন্ড গুলি, একটি নতুন গামছা ও একটি পলিথিনের বস্তায় থাকা ৪৮ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছে। কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসান হাফিজুর রহমান জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। এদিকে, নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে তাদের বাড়িতে খবর যায় যে, সে মারা গেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ (না:গঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, বুধবার দিবাগত গভীর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাসারী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সেলিম ওরফে ফেন্সি সেলিম (৩২) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি শূটার গান, ৬ রাউন্ড গুলি, একটি ছুরি, ৬শ’ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৫ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসিসহ পুলিশের ৬ জন সদস্য আহত হয়েছে। নিহত সেলিম সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে। নিহত সেলিম ডেমরা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের তালিকা ভূক্তশীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে ডেমরা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ২টি মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুস সাত্তার জানান, অভিযানের সময় পুলিশের আহত ৬ জন সদস্যকে শহরের খানপুর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ওসি আরও জানান, গত বছরের ২০ নভেম্বর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলাম সানারপাড় বাঘমারা এলাকায় ডিউটিরত অবস্থায় সেলিমকে আটক করে। এসময় সেলিমকে তার সহযোগীরা ছিনিয়ে নিতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। হামলায় উপ-পরিদর্শক মোঃ রফিকুল ইসলামের বাম হাতে দায়ের কোপ লাগে ও শরিরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পায়। পরে ৬’রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে মাদক সম্্রাট সেলিমকে রামদাসহ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশের উপর হামলার এ ঘটনায়ও একটি মামলা হয়েছিল। নিহত সেলিমের বাবা আবুল কাশেম এবং মা মর্জিনা বেগমের বিরুদ্ধে মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।
আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ফেনীর ফুলগাজীতে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সাহমিত হোসেন শামীম (২৫) ও মজনু মিয়া মনির (২৩) নামে দুইজন নিহত হয়েছে।
ফুলগাজী থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবীর বলছেন, বুধবার মধ্যরাতে ফুলগাজী উপজেলা আনন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামে মাদক চোরাকারবারিদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির সময় ওই দুইজন নিহত হয়। তাদের দুজনের বিরুদ্ধেই থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা রয়েছে বলে ওসির ভাষ্য। তবে স্বজনদের দাবি, ওই দুইজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পুলিশে টাকা দাবি করে, পরে রাতে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়।
ফুলগাজী থানার ওসি বলেন, চোরাকারবারিরা মাদকের চালান নিয়ে ভারত সীমান্ত দিয়ে দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামে প্রবেশ করেছে খবর পেয়ে পুলিশ রাতে সেখানে অভিযানে যায়। জামুয়া রাস্তার মাথায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি করে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। একপর্যায়ে উপজেলার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শামীম ও মনির গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান ওসি। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি এলজি, তিন রাউন্ড কার্তুজ, ৭০০ ইয়াবা ও দুই শতাধিক বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।
পুলিশ ওই ঘটনাকে বন্দুকযুদ্ধ বললেও শামীমের পরিবার বলছে, ফুলগাজী থানা পুলিশ বুধবার দুপুরে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।
শামীমের মা আনোয়ারা বেগম বলেন, বুধবার দুপুরে বাড়ির পাশের জমিতে গরুর জন্য ঘাষ কাটছিল তার ছেলে। বেলা ২টার দিকে ফুলগাজী থানার এসআই শফিক এসে সেখান থেকে শামীমকে নিয়ে যায়। পরে পুলিশ আমাদের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় রাতে ওকে গুলি করে হত্যা করেছে। একই ধরনের অভিযোগ করেছেন মজনু মিয়া মনিরের বোন রেজিনা বেগম। তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে এসে একদল লোক বুধবার রাতে ফেনী শহরের বড় মসজিদ এলাকায় মনিরের বোনের বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তার পরিবারের কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করা হয়। রাতে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গেলে আমাদের তাড়িয়ে দেয়। টাকা দিতে না পারায় ভোর রাতে পুলিশ মনিরকে গুলি করে মেরেছে। রেজিনা বলছেন, তার ভাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। তার চাচা বিএনপির রাজনীতি করেন। পুলিশ ষড়যন্ত্র করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। দফায় দফায় তারা পুলিশকে মোটা অংকের টাকাও দিয়েছেন। ওসি হুমায়ুন কবীর এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ কাউকে বাড়ি থেকে তুলে আনেনি। টাকা চাওয়ার কোনো ঘটনাও ঘটেনি। মাদকের টাকায় তাদের পরিবার চালাত বলে স্বজনরা এসব মনগড়া অভিযোগ করেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

 

পৃথক দুর্ঘটনায় তিন জেলায় নিহত ৯
ইনকিলাব ডেস্ক
দেশের পৃথক স্থানে দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম, ফেনী, পাবনায় ২ জন এবং চট্টগ্রাম বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ৩ জন নিহত হয়েছেন। আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য নিয়ে রিপোর্ট:
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নগরীর কোতোয়ালী থানায় পৃথক দুর্ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে খাতুনগঞ্জে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় মোঃ কামাল (৪০), গতকাল (বৃহস্পতিবার) পাথরঘাটা এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মোঃ বেলাল (২২ ) ও ফৌজদারহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক মারা যায়। পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় নিহত কামাল কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার জারু মিয়ার ছেলে। তিনি নগরীর বাকলিয়ায় মিয়া সওয়াদগরের ভাড়া বাসায় থাকতেন। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত বেলালের বাড়ি বাঁশখালী উপজেলায়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আমির হোসাইন জানান, পাথরঘাটা এলাকায় গণেশ বাবু নামে এক ব্যক্তির ভবনের তিন তলায় এসির কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বেলালের মৃত্যু হয়।
এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুÐ ফৌজদারহাট জলিল টেক্সটাইল গেট এলাকায় একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কার্ভাড ভ্যানের পিছনে ধাক্কায় নিহত ট্রাকচালকের নাম মোহাম্মদ আরিফ (৪৬)। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন দুইজন। ফৌজদারহাট পুলিশ ফাড়ির ইনর্চাজ রফিক আহম্মদ মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া, চট্টগ্রামের সীতাকুÐে বন্য শূকর ধরার জন্য নিজেদের পাতানো তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন বেসরকারি একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের দু’জন নিরাপত্তারক্ষী। তারা হলেন ক্যাসাচিং মারমা (৪০) ও উবাচিং মারমা (৪০)। তাদের বাড়ি রাঙামাটি জেলার চন্দ্রঘোনায়। গতকাল (বৃহস্পতিবার) উপজেলার ভাটিয়ারি এলাকার একটি পাহাড় থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সীতাকুÐ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, বুধবার রাতেও শূকর ধরার জন্য ফাঁদ পেতেছিলেন তারা। রাতের কোনো একসময় অথবা গতকাল ভোরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’জন মারা যান। সকালে অন্যান্য নিরাপত্তা রক্ষীরা তাদের খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তাদের লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
সোনাগাজী ( ফেনী) সংবাদদাতা জানান, ফেনীর সদর উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পথচারী নিহত হয়েছেন। তবে তাদের নাম-পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোল এলাকায় এবং বুধবার রাতে মুহুরীগঞ্জ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মহিপাল হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল আউয়াল বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, পাবনায় বাস ও মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও একজন আহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে পাবনা-চাটমোহর অভ্যন্তরীণ সড়কের আটঘরিয়া উপজেলার উত্তর চক কেরানীর ঢাল নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুইজন মটর সাইকেল আরোহীরা হলেন, পাবনা সদর উপজেলার মজিদপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের পুত্র রাফাত হোসেন ও রাজু প্রামানিকের পুত্র রোহান হোসেন। মটর সাইকেলের অপর আরোহী রূপম গুরুতর আহত হয়েছেন। আটঘরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আনোয়ারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, পাবনা-চাটমোহর এই সড়কটির ১০ কিলো মিটার জুড়ে খালা-খন্দ, চলাচলের অযোগ্য। সওজের কোন মাথা ব্যথা নেই। সংষ্কার করার পর ৬ মাস না পেরুতেই রাস্তার অবস্থা ফের সাবেক অবস্থায় ফিরে আসে ।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন