বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত শিক্ষা পদ্ধতির একটি অপরিহার্য অংশ প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফলাফল প্রকাশ ইত্যাদি। শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বহুধাপের মধ্যে এগুলোর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত শিক্ষার্থীরা এবং তাদের ভবিষ্যৎ। শিক্ষকরা তাদের হাতে প্রশ্ন তৈরি করে দেবেন, প্রশ্নের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা নিবেন এবং শিক্ষকরা তাদের লিখিত খাতা দেখে ফলাফল ঘোষণা করবেন এবং এ ফলাফল নির্ধারণ করবে তাদের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ।
আলোচ্য বিষয় হচ্ছে প্রশ্নে সঠিক জবাব দিতে পারা, না পারা। নৈতিকতা হচ্ছে জানা জ্ঞান মতে প্রশ্নের জবাব দান করা। অনৈতিকতা হচ্ছে, নকল বা অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে পরীক্ষা দেওয়া। আগেকার দিনেও পরীক্ষায় নকল বা টুকি টাকি হত, কিন্তু প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার মত জঘণ্য অন্যায়-অপরাধের দৃষ্টান্ত তেমন নেই। সাম্প্রতিকালে আমাদের দেশে নকল প্রবণতা একেবারে প্রশ্ন পত্রে ফাঁসে পরিণত হয়ে গেছে, যা নৈতিকতা অবক্ষয়ের চরম পরিণতি। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্র নব পর্যায়ে একটি অবৈধ ও গর্হিত ব্যবসা শুরু করে দিয়েছে। এরূপ, জাতির মেধা শূণ্য করার এ জঘণ্য তৎপরতার অন্তরালে প্রধাণত: অর্থলোভ সক্রিয় তা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই।
বস্তুত শিক্ষা ও শিক্ষকতার মত একটি সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ পেশা রীতিমত ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিণত হয়ে গিয়েছে। এটা কি সেই ব্যবসা-বাণিজ্য, যার সম্পর্কে ইসলাম নানা ভাবে উৎসাহিত করেছে এবং যার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে? অবশ্যই তা নয়। কেননা, শিক্ষার নামে এ নৈতিকতা বর্জিত ব্যবসার মূল আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈষয়িক অর্থলোভী মন-মানসিকতা এবং যাকে গ্রাস করে চলেছে অবৈধ পন্থা অবলম্বন ও দুর্নীতি গ্রস্থ ব্যবস্থাপনা। এ অভিযোগ সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য, একথা আমরা বলছিনা। আমরা জানি, শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এরূপ অভিযোগ হতে মুক্ত। তারা অবৈধ পন্থা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার, তাদের অজান্তে, গোপনে যারা অনেক কিছু ঘটিয়ে থাকে তারা এরূপ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত। ফলে এরূপ অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হয়ে উঠে না।
শিক্ষা সংক্রান্ত সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন বিভাগ সংস্থায় অর্থলোভী কিছু আমলা কর্মচারী লোক থাকে। উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে ওরা উৎকোচ প্রদানকারী চক্রগুলোকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিবেশনে মদদ যোগায়। এতে অবৈধ পন্থা ও অনিয়ম তথা দুর্নীতির পথ সম্প্রসারিত হতে থাকে। বিশেষভাবে পরীক্ষা ক্ষেত্রে নকল বা অসাদুপায় অবলম্বন এবং প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষার খাতায় জালিয়াতি ইত্যাদির কথা উল্লেখ করতে হয়। এসব অবৈধ, অনৈতিক কাজ এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হাজার চেষ্ট-তদবির করেও তা থামাতে পারছে না।
বলতে হয়, সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে পথ না খুঁজলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন, সময়ের চাহিদার আলোকে অভিযুক্ত প্রচার ও প্রকাশনা মাধ্যমগুলোকে কঠোর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা। আধুনিক প্রকাশনা যন্ত্র ও প্রচারণা মাধ্যমগুলো যেখান থেকে প্রশ্নপত্র গুলো বের হয়ে থাকে, সেগুলো কে কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনা এবং এ কাজের জন্য সৎ দায়িত্ববান গোয়েন্দা নিয়োগ করা এবং তাদের কাছে প্রশ্নকর্তাদের নামের তালিকা প্রদান করা। জালিয়াত চক্রের গতিবিধির প্রতি দৃষ্টি রাখা। বয়স্ক এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের নৈতিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং সকল প্রকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার কোন বিকল্প নেই। ইসলামে নিষিদ্ধ উৎকোচ হতে শিক্ষাঙ্গণকে মুক্ত করা না গেলে প্রশ্নপত্র ফাঁস সহ সকল প্রকারের দুর্নীতি বিরাজমান থাকবে। আমরা মনে করি, শিক্ষার সকল স্তরে নৈতিকতা শিক্ষাদানের বিশেষ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা সময়ের বড় চাহিদা। শুরু থেকে এর ব্যবস্থা না থাকলে পরবর্তী সময়ে শিক্ষাঙ্গণসহ সকল স্তরে দুর্নীতির প্রসার ঘটতে থাকবে। তখন হয়তো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। বর্তমান উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে সে শিক্ষা গ্রহণ না করলে জাতিকে নৈতিক ভাবে মারাত্ম ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হতে হবে। যার থেকে উদ্ধার পাওয়া সহজ নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন