বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রামে সঙ্কটে গার্মেন্টস শিল্প

দুই বছরে একশ’ কারখানা বন্ধ : গ্যাস বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার ব্যয় বৃদ্ধি

প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৩ পিএম, ৯ এপ্রিল, ২০১৬

শফিউল আলম : বন্দরনগরী চট্টগ্রামে রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প বর্তমানে সঙ্কটকাল অতিক্রম করছে। এই খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ মিলছে না। বরং গ্যাস ও বিদ্যুতের ঘন ঘন আসা-যাওয়ায় উৎপাদন ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উভয় সংকটের সাথে কমপ্লায়েন্সের জটিলতায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে গত দু’বছরের মধ্যে অন্তত একশ’টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। রুগ্ন অবস্থায় পড়েছে ৫০টিরও বেশি গার্মেন্টস কারখানা। দু’বছর আগে চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেখানে ৫৫০টি কারখানা সচল ছিল বর্তমানে কম-বেশি চালু আছে ৪৫০টি কারখানা। অথচ ১৯৭৮ সালে কালুরঘাট শিল্প এলাকায় গড়ে ওঠা ‘দেশ গার্মেন্টসে’র হাত ধরেই বাংলাদেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের পথচলা শুরু। তাছাড়া গার্মেন্টস সামগ্রীর আমদানি ও রফতানির ক্ষেত্রে স্থল কন্টেইনার ডিপোসমূহের (আইসিডি) তথা অফডকের নানামুখী সমস্যা-সংকটের খেসারত দিচ্ছেন শিল্প মালিকরা। চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানি চালান জাহাজীকরণে বর্তমানে জটিল সমস্যা না থাকলেও রফতানির গতি আরও দ্রুতায়িত করা এবং বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল নির্মাণের কাজ অর্থাৎ বন্দর সম্প্রসারণের কাজ অবিলম্বে শুরু করার তাগিদ দিয়েছের সংশ্লিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তারা।
চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সমস্যা ভোগাচ্ছে গার্মেন্টস শিল্প খাতকে। গরমকাল আসার সাথে সাথে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকাভেদে ২ থেকে ৪/৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। সেইসঙ্গে কোথাও হঠাৎ ট্রান্সফরমার অচল আবার কোথাও পুরনো জরাজীর্ণ যন্ত্রপাতি, সিটি সার্কিট ব্রেকার, সঞ্চালন লাইনে জোড়াতালি মেরামত দিয়েই দায়সারা গোছে চালানো হচ্ছে। এসব কারণে ঘন ঘন ‘লোকালশেডিং’ চলছে। দিনে-রাতে একেকটি শিল্প প্রধান এলাকা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় থাকছে। ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ ঘাটতি ও লোডশেডিংয়ের সাথে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিগড়ে যাওয়ার কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে গার্মেন্টস শিল্প-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। পুরোদমে গরমকাল আসার আগে বিদ্যুৎ সমস্যা এখনই যে অবস্থায় চলছে তাতে আসন্ন ভরা গ্রীষ্মে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন শিল্প মালিকরা।
বিদ্যুৎ সঙ্কটের বিকল্প খুঁজতে গিয়ে কারখানায় ডিজেল পুড়িয়ে জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন সচল রাখার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যয়ের তুলনায় আড়াই-তিনগুণ পর্যন্ত বেশি ব্যয়ের বোঝা টানতে হচ্ছে। এতে করে লোকসান গুণতে বাধ্য হচ্ছেন রফতানিমুখী পোশাক শিল্প মালিকগণ। বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় পালাক্রমে বিদ্যুৎ ও জেনারেটর চালুর টানাপড়েন আর ভোল্টেজ ওঠানামা মরাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে পোশাক কারখানাসমূহে মূল্যবান মেশিনারিজ বিনষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়তই। কারখানায় উৎপাদনশীলতা পুরোদমে সচল ও বন্দরের লিড টাইম ঠিক রেখে রফতানি চালান জাহাজীকরণ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অনেক সময় সমস্যা হচ্ছে। তদুপরি গ্যাস ও বিদ্যুতের আরেকদফায় মূল্যবৃদ্ধি করা হলে তা পোশাক শিল্পের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়াবে এমনটি মনে করেন শিল্পোদ্যোক্তারা।
বৃহত্তর ঢাকার পরই চট্টগ্রামে শতভাগ রফতানিমুখী তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার শিল্পখাতের অবস্থান। গ্যাস ও বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান সংকটের কারণে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস শিল্প সর্বাপেক্ষা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বর্তমানে সচল সাড়ে ৪শ’ কারখানায় রফতানি ফরমায়েশ অনুযায়ী উৎপাদনশীলতা বজায় রাখা দুরূহ হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রামের মোট ৭৩০টি গার্মেন্টস কারখানার মধ্যে গত প্রায় দেড় দশকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সঙ্কটসহ বিভিন্ন কারণে প্রায় ২৮০টি কারখানা রুগ্ন ও বন্ধ হয়ে গেছে। সচল কারখানাসমূহে বর্তমানে ৪ লাখ শ্রমিক কর্মরত। কালুরঘাট, নাসিরাবাদ, ডবলমুরিং, দেওয়ানহাট, সল্টগোলা রোড, সাগরিকা, পাহাড়তলী, বায়জিদ, জুবিলি রোড, এনায়েতবাজার, চান্দগাঁওসহ বন্দরনগরী ও শহরতলীতে অবস্থিত অধিকাংশ কারখানা কোন না কোন সমস্যা-সংকটে ধুঁকছে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক ১ম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী গতকাল (শনিবার) দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বর্তমানে বিভিন্ন এলাকা ভেদে বিদ্যুতের লোডশেডিং কিংবা যান্ত্রিক বিভ্রাট হচ্ছে। জুবিলি রোড, দেওয়ানহাটের মতো কিছু এলাকায় বেশি, ২/৩ ঘণ্টা কিংবা ৪/৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। তবে গ্যাসের চাপ হ্রাসের সমস্যা গার্মেন্টস শিল্পের জন্য ব্যাপক ক্ষতির কারণ হচ্ছে। কেননা এতে শিল্পের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন কারখানায় গ্যাস চালিত বয়লার সার্বক্ষণিক সচল রাখা যাচ্ছে না। এতে করে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। তিনি জানান, এই খাতে আইসিডি’র সমস্যা প্রকট। আর বন্দরের দক্ষতা ও গতিশীলতা আরও বাড়াতে বে-টার্মিনালের নির্মাণ কাজ অবিলম্বে শুরু করা প্রয়োজন।
চট্টগ্রামে গার্মেন্টস খাতে গ্যাসের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রতিদিন ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে এখানে ন্যূনতম চাহিদা ধরা হয় ৪শ’ ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু গ্যাসের সরবরাহ মাত্র ২২০ থেকে ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটে ওঠানামা করছে। এক বছর আগেও চট্টগ্রামে দৈনিক ২৭০-২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাচ্ছিল। চট্টগ্রামে গ্যাসের গ্রাহক ৫ লাখেরও বেশি। বর্তমান অবস্থায় জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ বৃদ্ধির দিকেই প্রতিনিয়ত তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিঃ (কেজিডিসিএল)-কে। গ্যাসের সংকটে চট্টগ্রামে অন্যান্য শিল্পখাতের উৎপাদনেও পড়েছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
জাবের ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:৩৯ এএম says : 0
এই সংকটের সমাধান হওয়া দরকার।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১:৪২ পিএম says : 0
সরকারের উচিত এই সেক্টরের প্রতি বিশেষভাবে নজর দেয়া।
Total Reply(0)
ফারজানা শারমিন ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১:৪৫ পিএম says : 0
গার্মেন্টস শিল্পের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে।
Total Reply(0)
ফিরোজ ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১:৪৭ পিএম says : 0
গ্যাস ও বিদ্যুতের আরেকদফায় মূল্যবৃদ্ধি করা হলে তা পোশাক শিল্পের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়াবে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন