সাদিক মামুন,কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সদস্য সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লা সেনানিবাসের আবাসিক এলাকার যে স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সেই জায়গাটি পরিদর্শন করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মাহবুব মোহসিন। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় কুমিল্লায় পৌঁছে ডিআইজি মাহবুব মোহসিনের নেতৃত্বে সিআইডির একটি দল ময়নামতি সেনানিবাস এলাকায় প্রবেশ করেন।
দেশব্যাপী আলোচিত তনু হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব সিআইডির উপর ন্যাস্ত হবার দশদিনের মাথায় তদন্ত সংস্থার শীর্ষ পদমর্যাদার কেউ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন। মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় সিআইডির ডিআইজি মাহবুব মোহসিন কুমিল্লায় এসেছেন এমনটি মনে করছেন অনেকেই। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টায় ডিআইজি মাহবুব মোহসিন কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় প্রবেশ করেন। এসময় তার সাথে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি আলাউদ্দিন আল আজাদ, ঢাকা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান আবদুল কাহহার আকন্দ, কুমিল্লা অঞ্চলের সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করীম খান ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমসহ প্রায় ১৪ কর্মকর্তা ছিলেন। ডিআইজি মাহবুব মোহসিনের নেতৃত্বে সিআইডির ১৪ সদস্যের দলটি বেলা পৌনে একটায় তনুর লাশ উদ্ধারের স্থান পরিদর্শন করেন। এছাড়াও তনু যে বাসায় টিউশনি করতো সেখানেও যান ডিআইজি। তিনি তনুর টিউশনির স্থানসহ আশপাশের জায়গা পরিদর্শন করেন। পরে ডিআইজি মাহবুব মোহসিন তনুর বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারি ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম, দুই ভাই নাজমুল হোসেন, আনোয়ার হোসেন ও চাচাতো বোন লাইজু জাহানের সাথে সেনানিবাসের বাসায় কথা বলেন। এছাড়া তিনি কুমিল্লা সেনানিবাসের ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের এরিয়া কমান্ডার ও জিওসি মেজর জেনারেল এনায়েত উল্লাহ, স্টেশন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার মীর শওকত হোসেনের সাথেও তনু হত্যাকান্ডের বিষয়ে কথা বলেন। প্রায় তিন ঘন্টা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থান শেষে ডিআইজি মাহবুব মোহসিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা বেলা সাড়ে তিনটায় কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে ফিরে আসেন।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় সিআইডি কার্যালয়ে প্রবেশের সময় গণমাধ্যম কর্মীরা তনু হত্যা মামলা বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইজি মাহবুব মোহসিন কোনরকম মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কুমিল্লা অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নাজমুল করীম খান সাংবাদিকদের বলেন,‘আমরা এঘটনাকে সারাদেশের ঘটনা মনে করি। আলোচিত এ মামলার বিষয়ে ডিআইজি স্যার কুমিল্লায় এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ অনেকের সাথে কথা বলার মানে এ মামলাকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া। আমরা সবার সহযোগিতায় চেষ্টা করছি এঘটনার কুলকিনারা করতে।’
এদিকে গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সোহাগী জাহান তনুর লাশের প্রথম ময়নাতদন্তকারি চিকিৎসক কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ফরেনসিক বিভাগের কনিষ্ঠ প্রভাষক ডা. শারমিন সুলতানাকে কুমিল্লা সিআইডি কার্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার সাথে ওই বিভাগের প্রধান ডা. কামদা প্রসাদ সাহাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিআইডির ডিআইজি মাহবুব মোহসিন তাদেরকে অনেকক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
হত্যার ৩ সপ্তাহ পরে কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার তিন সপ্তাহ পার হলেও এখনো পর্যন্ত ঘটনার রহস্য যেমন উদঘাটন সম্ভব হয়নি তেমনি এ ঘটনায় সন্দেহভাজন কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারি সংস্থা। তনু হত্যা মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডির সামনে শুরু থেকেই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছিল লাশ উদ্ধারের কতোক্ষণ আগে তনুকে কোথায় এবং কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা বের করা। আর এ প্রশ্নের উত্তর বের করার জন্য সিআইডির তদন্ত সহায়ক দলসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তনুর পরিবারসহ সামরিক, বেসামরিক লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু ঘটনার কুলকিনারা করতে পারছেন না। কুমিল্লা ও ঢাকা থেকে আসা সিআইডির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের মেধা মনন অভিজ্ঞতা দিয়ে মামলাটি তদন্ত করছেন। সিআইডির হাতে মামলার তদন্তভার ন্যাস্ত হবার পর থেকে তাদের কাছে তনু হত্যাকান্ড নিয়ে অনেক তথ্যই আসছে। সিআইডি এসব তথ্য বিচার বিশ্লেষন করছেন। অন্যদিকে তনুর পরিবারসহ সারা দেশের মানুষ আলোচিত এই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও ঘাতকরা চিহ্নিত হয়েছে এমন খবর জানতে আশায় আশায় দিন পার করছেন। সবার একই প্রশ্ন বেরিয়ে আসবে তো তনু হত্যা রহস্য ? আটক হবে তো অপরাধীরা ? ন্যায় বিচার পাবে তো তনুর পরিবার?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন