ইনকিলাব ডেস্ক : বাজি প্রতিযোগিতা চলাকালীন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার কোল্লামে মন্দিরে ভয়াবহ আগুন লেগে পদপিষ্ট হয়ে মারা গেছে ১১০ জন। আহত হয়েছে ৩শ’রও বেশি। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল ভোর সাড়ে তিনটে। কেরালার কোল্লাম পুত্তিঙ্গল মন্দিরে তখন বাজি পোড়ানোর আনন্দে মশগুল অসংখ্য পুণ্যার্থী। হঠাৎই বিপত্তি দেখা দেয়। বিস্ফোরণ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা মন্দির চত্বরে। শুরু হয় বাজির স্তূপে জোরাল বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, মন্দিরের ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। প্রাণে বাঁচতে যে যেদিকে পারেন দৌড়াতে থাকেন পূজারীরা। অগ্নিদগ্ধ ও পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ যায় শতাধিক মানুষের। জখম ৩শ’রও বেশি।
কিন্তু কীভাবে ঘটল এতবড় বিপর্যয়?
বার্ষিক উৎসব উপলক্ষে শনিবার কয়েক হাজার পুণ্যার্থী ভিড় জমান কেরালার কোল্লামের পুত্তিঙ্গল মন্দিরে। শুরু হয় বাজি প্রতিযোগিতা। পুলিশ-প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বাজি পোড়ানোর সময় হঠাৎই আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়ে মন্দির চত্বরে জমা করে রাখা বাজির স্তূপে। আর তা থেকেই বিপত্তি।
দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে দমকল। পুলিশের সঙ্গে উদ্ধারকাজে হাত লাগায় বিপর্যয় মোকাবিলা দলও। কিন্তু, ততক্ষণে মৃত্যু হয় বহু মানুষের।
আহতদের উদ্ধার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মৃতদের পরিবারপিছু ২ লাখ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্র সরকার।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পরিস্থিতি সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করতে এবং হতাহতদের জন্য শোক-সহানভূতি জানাতে উড়ে যান ঘটনাস্থলে। তিনি প্রথমে তিরুবনন্তপুরমে অবতরণ করেন। সেখান থেকে নৌবাহিনীর বিমানে কোল্লামে আসেন। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চান্ডি। কোল্লামে এসেই প্রধানমন্ত্রী প্রথমে আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান। এর আগে মোদী ফোনে চান্ডির সঙ্গে ঘটনা সম্পর্কে কথাবার্তা বলেন। চান্ডি এই দুঃসময়ে পাশে থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও মন্দিরে অগ্নিকা-ের ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে ও হতাহতদের প্রতি শোক-সহানুভূতি জানাতে গতকাল আকস্মিক সফরে কেরালা যান। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন।
মালায়ালাম পঞ্জিকা অনুযায়ী, মেদাম মাসের প্রথম দিন এই উৎসব হয়, যার নাম বিশু। নতুন পোশাকে সেজে বিপুল সংখ্যক মানুষ এই উৎসবে অংশ নেন। আর কেরালায় বিশু উৎসবে অন্যতম অনুষঙ্গ হলো আলোকসজ্জা ও আতশবাজির প্রদর্শনী। বিবিসি জানিয়েছে, বিশুর জন্য পুতিঙ্গাল মন্দিরের কাছেই গাদা করে রাখা হয়েছিল আতশবাজি। সেখানে রাত সাড়ে ৩টার দিকে বিস্ফোরণ ঘটলে বিস্ফোরণের ধাক্কায় মন্দিরের একটি ভবন ধসে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা রোববার সকাল সাড়ে ৬টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন, শুরু হয় উদ্ধারকাজ। মারাত্মক দগ্ধদের পাঠানো হয় কেরালার রাজধানী থিরুভানানথাপুরামে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পার্বণে যোগ দিতে হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত রাতে ওই মন্দিরে জড়ো হয়েছিলেন। বিস্ফোরণে ভবন ধসের কারণেই বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এক কিলোমিটার দূর থেকেও বিস্ফোরণের ধাক্কা টের পাওয়া যায়। ভবন কেঁপে ওঠার সঙ্গে বিকট শব্দে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন অনেকে জ্বলন্ত মন্দির এলাকা থেকে আকাশে উঠে বিস্ফোরিত হতে দেখা যায় হাউই বাজি। জয়শ্রী হরিকৃষ্ণ নামের একজন বলেন, বিস্ফোরণের পর বাতাসে যেন কংক্রিটের টুকরো উড়ছিল। কেরালার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ চেন্নিথালা বলেন, এ মন্দিরে প্রতিবছরই আতশবাজির উৎসব হয়। আমরা মন্দিরে আটকে পড়াদের উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কেরালার বিধান সভা নির্বাচনের আগে আগে এই ঘটনার পর ভোটের প্রচার স্থগিত রেখে ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চ্যান্ডি।
কেরালা পুলিশের প্রধান টিপি সেনকুমারকে উদ্ধৃত করে বিবিসি লিখেছে, অনেকের দেহ পুড়ে এতোটাই বিকৃত হয়ে গেছে যে, সেগুলো আর চেনার উপায় নেই। পরিচয় শনাক্ত করতে তাদের ডিএনএ সংরক্ষণ করা হবে। ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, নিরাপত্তার বিবেচনায় স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট এবছর আতশবাজির প্রদর্শনী আয়োজন নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারপরও ওই মন্দিরে বিপুল পরিমাণ আতশবাজি মজুদ করায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ জানান, এ ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, জি নিউজ ও এবিপি আনন্দ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন