বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রের উপর বিশ্বাস হারাচ্ছে উপসাগরীয় দেশগুলো

প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : উপসাগরীয় দেশগুলোতে এ সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফরের সুস্পষ্ট লক্ষ্য ছিল ইরানের প্রতি মার্কিন নীতির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ আরব দেশগুলোকে আশ্বস্ত করা। তবে কেরির একটি সমস্যা আছেঃ যার পালক আছে, সাঁতরায় ও ডাকে, তখন তা হাঁস হওয়ারই সম্ভাবনা।
বাস্তবতা হচ্ছে, কেরি যতই পুনরাশ্বাস দিন না কেন, একটি উদ্ভূত বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় নাঃ ইরানের সাথে ওবামা প্রশাসনের পারমাণবিক চুক্তি কয়েক দশকের সংঘাতের পরিবর্তন ঘটিয়ে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে শুরু করেছে। এ থেকে আর পিছু ফেরা সম্ভব বলে মনে হয় না। উপসাগরীয় দেশগুলো ও ইসরাইল এ চুক্তিকে ইরানের পারমাণবিক সমস্যাকে বিলম্বিত করার কিছুটা সুযোগ হিসেবে দেখলেও ইরানের আঞ্চলিক খায়েশ সম্পর্কে তাদের ভীতি কাটানোর জন্য যথেষ্ট হবে না। অথবা তাদের উদ্বেগ নিরসনে আমেরিকার ইচ্ছার পর্যাপ্ত প্রতিফলনও তা নয়।
কেন?
ইরানের আইনজীবীঃ জন কেরি একটি ইরানি শাসকগোষ্ঠিকে সমর্থন করতে গিয়ে নিজেকে অস্বস্তিকর অবস্থায় দেখতে পাচ্ছেন যারা কিনা পারমাণবিক চুক্তি মেনে চলবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের নিজের অঙ্গীকার সত্ত্বেও চুক্তির চেতনা ধরে রাখেনি। তবে কেরি ইরানের সকল নিয়ম লংঘনের কথা উল্লেখ করলেও এ যুক্তি দেয়া অব্যাহত রেখেছেন যে পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়া ইরান পারমাণবিক বোমার অধিকারী ইরানের চেয়ে কম বিপজ্জনক।
এটা হয়ত অনেকটাই সত্য। কিন্তু উপসাগরীয় দেশগুলো, বিশেষ করে সউদি আরব শুধু দেখছে যে ইরানের আঞ্চলিক আচরণ ক্রমেই খারাপ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ইউএই-র রাষ্ট্রদূত এ সপ্তাহে বলেন, তেহরান যেমন বিপজ্জনক ছিল তেমনি রয়ে গেছে। তিনি বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে ইরানের সাথে ইউএই-র চুক্তি হয়েছিল। বস্তুত যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে ইরানের কর্মকা-ের যথেষ্ট জোর নিন্দা জানায়নি, প্রতিবারই সে অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অঙ্গীকার করেছে অথবা বলেছে সে ডলার একাউন্টে ইরানের প্রবেশ সুবিধা দেবে। উপসাগরীয় দেশগুলো বিস্মিত যে তেহরানের আচরণে এমন কি আছে যা ওয়াশিংটন বুঝতে পারছে না?
ইরানের আচরণঃ এটা নিশ্চিতই কোনো বিস্ময়কর বিষয় নয় যে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরের পরও ইরান তার প্রভাব ও ক্ষমতার আঞ্চলিক লক্ষ্য অব্যাহত রাখবে। এখন সে আগের চেয়ে আরো ক্ষমতাশালী। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে, ইয়েমেনে হুছিদের অস্ত্র দিয়েছে এবং সিরিয়ায় বাশার সরকারকে সমর্থন দিয়ে চলেছে। উপরন্তু ইরাকের ইরানপন্থী শিয়া মিলিশিয়াদের সে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
এসব বিষয় বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সুস্পষ্ট ভাষায় কেরিকে এটা বলতে বাধ্য করেছে যে ইরানের আধিপত্যবাদী হস্তক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে গত মাসে তথাকথিত ইরানি সংস্কারক বা উদারপন্থীদের রক্ষণশীলদের ও পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা আছে বলে ধারণা অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয় যখন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা প্রকাশ্যে আগামীর বিশ্ব ক্ষেপণাস্ত্রের নয় আলোচনার বলে সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আকবর হাশেমী রাফসানজানির বক্তব্যের বিরোধিতা করেন এবং পরিবর্তে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সমর্থন করেন।
গভীর সন্দেহঃ ইরানের ব্যাপারে আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী মিত্র সউদি আরব, ইউএই, বাহরাইন ও ইসরাইলের গভীর ভীতি যে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যকে আর অগ্রাধিকার বলে বিবেচনা করে না। ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের ক্লান্তি, সিরিয়ায় অধিকতর ক্ষমতা ব্যবহারের ব্যর্থতা এবং সেখানে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ব্যাপারে নীরবতা পালন থেকে তেলের দরপতন, অন্যদিকে বৈরী ও পুরনো বন্ধুদের সমালোচকদের কাছে পৌঁছতে একজন প্রেসিডেন্টের প্রস্তুতি, এ সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রকৃতই সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। (আটলান্টিকের জেফ্রি গোল্ডবার্গের কাছে ওবামার মন্তব্য যে কিছু মিত্র মুক্ত আরোহী সম্ভবত সউদি আরব ও এমনকি কেরির নিজের স্টাফদেরও বিস্মিত করে)
তবে আটলান্টিকের সাথে সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট ওবামা মিস্টার রজার্সের মত যে মত প্রকাশ করেন যে আঞ্চলিক পক্ষগুলোকে তাদের প্রতিবেশীদের সাথে অংশীদার হওয়া শিখতে হবে, তা ইরানি হুমকির বিষয়ে আরব দেশগুলো ও ইসরাইলের দৃষ্টিভঙ্গির এবং ইরানের উত্থান রুখবার জোরদার মার্কিন অঙ্গীকারের মৌলিক বিরোধী।
মার্কিন মিত্ররা অবশ্যই খাঁটি নয়। উদাহরণ স্বরূপ, সউদি আরবের কথা বলা যায় যারা বছরের পর বছর ধরে ওয়াহাবি মতবাদ রফতানি করছে। তারা শিয়াবিরোধী উদারপন্থীদের কমই সাহায্য করেছে। সুন্নী বিশ্বে ব্যাপক বিস্তৃত ইহুদি বিরোধী ও মার্কিন বিরোধী মনোভাব প্রশমনেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ইসরাইলি নেতৃত্বের সাথে সউদি প্রশাসনের পার্থক্য সুপরিচিত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ইরান নীতির তারা বিরোধী ও এ ব্যাপারে তারা মিত্র।
তেহরানের নীতি উদার হলে তাতে মার্কিন প্রশাসনের গলার জোর বাড়ত। কিন্তু তা হয়নি। এ মাসের শেষ দিকে ওবামা সউদি আরব সফরে যাবেন। তখন হয়ত তিনি সউদিদের এ সিদ্ধান্তে অবিচল দেখতে পাবেন যে  ইরান হচ্ছে সমস্যার অংশ, সমাধানের নয় এবং তারা নিজেরা এটাও ভাবতে পারে যে ওবামা প্রশাসন নিজেই সমস্যার অংশে পরিণত হয়েছে। সূত্র সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মিজান ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:১৪ এএম says : 1
যুক্তরাষ্ট্রের উপর বিশ্বাস রাখার কোন কারণ আছে কি ?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন