শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

উদ্ভট কথা বলে বাঁশখালীতে মানুষের জীবন নেওয়া হলো প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কা সম্পর্কে তিনি বলেন, কিছু উদ্ভট চিন্তাভাবনা আছে। এগুলো কোথা থেকে আসে জানি না। উদ্ভট কথা বলে অযথা কতগুলো মানুষের জীবন পর্যন্ত নিয়ে নেওয়া হলো। এটা দুঃখজনক। গতকাল রোববার কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করার পর এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কারাগারে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাঁশখালীর পরিস্থিতির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, আজকাল বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলেই একদল পরিবেশ রক্ষার নামে আন্দোলনে নামে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করতেই দেবে না। দিনাজপুরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। ওই এলাকায় কোনো ক্ষতি হয়নি। জমির উর্বরতা বেড়েছে। ধান হচ্ছে। গাছ হচ্ছে। কিছু উদ্ভট চিন্তাভাবনা কিছু মানুষের আছে। এগুলো কোথা থেকে আসা জানি না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, অক্সফোর্ডসহ সারা বিশ্বে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই সিমেন্ট কারখানায় ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বলা হয়ে থাকে অ্যাসিডবৃষ্টি হবে। এগুলো কোথা থেকে আসে জানি না। দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সরকার মানুষকে স্বস্তি দিয়েছে। তাতে বাধা দিতেই এ ধরনের চেষ্টা করা হয়।
কয়লাবাহী কার্গো ডুবে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একদল বলল, পানি নাকি দূষিত হয়ে গেছে। এটা কতটা বিজ্ঞানসম্মত জানি না। কারণ, ছোটবেলা থেকে দেখেছি, বাসার পানির ফিল্টারে কয়লা দেওয়া পাত্র ছিল। সেখান থেকে কয়েক স্তরে গিয়ে পানি বিশুদ্ধ হতো। গ্রামেও এ ধরনের ফিল্টার আমরা দিয়ে থাকি। কয়লা পানিকে বিশুদ্ধ করে।
কেরানীগঞ্জ কারাগার দ্রুত নির্মিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। ছোটবেলার কথা মনে করে তিনি বলেন, কারাগারের সঙ্গে তাঁদের একটা সম্পর্কই হয়ে গেছে। কারণ, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তাদের অসংখ্যবার কারাগারে আসতে হয়েছে। স্কুল, কলেজ শেষে কারাগারে থাকা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে ছুটে গেছেন। সে সময় ১৫ দিনে এক দিন তারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেতেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবনের মূল্যবান সময়টা কারাগারে ছিলেন। একটানা দুই বছর তিনি কখনো কারাগারের বাইরে থাকেননি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, মানুষের কল্যাণ করতে গিয়ে জাতির পিতাকে সারা জীবন জেল-জুলুম, অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। জাতীয় চার নেতাকে কারাগারেই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নিজের কারাজীবনের কথাও স্মরণ করেন। বলেন, জেনারেল এরশাদের সময় মিন্টো রোডে সাবজেলে ছিলাম। পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংসদে একটি ভবনে সাবজেলে বন্দী করে রাখা হয়।
অপরাধীদের সংশোধন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কারাগারগুলোকে সংশোধন কেন্দ্রে পরিণত করতে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কারাগারগুলোকে শোধনাগার হিসাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে প্রত্যেকে সুস্থ জীবনে ফিরে যেতে পারে। অপরাধীদের সংশোধন করতে হবে; সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে। তারা না থাকলে পরিবারের কী অবস্থা হয়, তা তাদের জানা দরকার। শুধু অপরাধের পর গ্রেপ্তারের চিন্তা না করে অপরাধ প্রবণতা থেকে মানুষকে কীভাবে বের করে আনা সেদিকে চিন্তা-ভাবনা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। অপরাধ করলে শাস্তি দিলাম- এতেই শেষ না। একজন ছিঁচকে চোর যদি জেলখানায় গিয়ে আরও বড় চোরদের সংস্পর্শে আসে, তাহলে জেলখানা থেকে বেরিয়ে সে পাকা চোর হয়ে ওঠে; ট্রেনিংটা সেখানেই পেয়ে যায়।
কারাবন্দীদের প্রশিক্ষণের ওপর উপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য, তাদের উৎপাদনমুখী কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা, সেজন্য তারা মজুরি পাবে এবং সেটা জমা থাকবে। যখন সে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরবে, তখন একটা ছোটোখাটো ব্যবসা বা দোকান দিয়ে সমাজে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। সে কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তার মজুরির একটা অংশ পরিবারকেও দেওয়া হবে। কারণ, অপরাধ করে একজন কিন্তু তার জন্য ভুক্তভোগী হয় গোটা পরিবার।তিনি বলেন, কাজের মধ্যে দিয়ে কাজের প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। সংশোধন করে বন্দীদের জীবন কর্মমুখর করতে হবে। কেরানীগঞ্জ নবনির্মিত কারাগারে প্রচুর জায়গা। উৎপাদমুখী বিভিন্ন খাতে এই জায়গা কাজে লাগানো যেতে পারে।
কেরানীগঞ্জ অবহেলিত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু নির্মাণ করে দিয়েছি। কেরানীগঞ্জ এখন আধুনিক জায়গা হিসেবে গড়ে উঠছে। যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। পদ্মা সেতু হলে আরও উন্নত হবে।
কারাগারে বিদ্যুৎ নিরবচ্ছিন্ন করতে সোলার প্যানেল করা অপরিহার্য, বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেকোনো স্থাপনায় যেন সোলার প্যানেল থাকে। কারাগারে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার আছে। সোলার প্যানেলেরও ব্যবস্থা করতে হবে। কারারক্ষী ও কারা কর্মকর্তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টাও চলছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। কারাগারে কর্মরত ও বন্দীদের জন্য কেরানীগঞ্জে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হবে বলেও তিনি জানান। সেখানে ২০০ থেকে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল করার কথা বলেন। এই হাসপাতালে কারাবন্দী নয়, কেরানীগঞ্জবাসীও যাতে চিকিৎসা নিতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
বন্দীদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় এনে শেখ হাসিনা বলেন, চুরি করে এখানে সবাই মুঠোফোন ব্যবহার করে। কারাগারে পাবলিক টেলিফোনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বন্দীরা মাসে একবার যাতে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে তারা মানসিকভাবে স্বস্তি পাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, স্বরাষ্ট্র সচিব মোজাম্মেল হক খান এবং মহা কারাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী কারাগার প্রাঙ্গণে একটি গাছের চারা রোপণ করেন এবং কারাগারের উদ্বোধন উপলক্ষে কেক কাটেন।
১৭৮৮ সালে স্থাপিত নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-মাওয়া সড়কের দক্ষিণে রাজেন্দ্রপুরে নতুন এই কারাগারের অবস্থান। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার স্থানান্তরের আলোচনা শুরু হয়েছিল সেই আশির দশকে। তার তিন দশক পর ২০০৬ সালে বিষয়টি একনেকে পাস হলে শুরু হয় জমি অধিগ্রহণ। পরের বছর সেপ্টেম্বরে ৪০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
ব্রিটিশ আমলে তৈরি বাংলাদেশের পুরনো কারাগারগুলোর মতো কেরানীগঞ্জ কারাগারের দেয়াল লাল নয়। তুলনামূলকভাবে খোলামেলা এ কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অন্যগুলোর তুলনায় আধুনিক। ছয়টি ছয়তলা ভবনে হাজতি এবং একই ধরনের দুটি ভবনে কয়েদিদের রাখা হবে। এসব ভবনের প্রতি তলায় ৪০টি করে কক্ষ; প্রতি কক্ষে ১৩ জন করে বন্দি রাখার ব্যবস্থা। ২০ হাত দৈর্ঘ্য ও ১০ প্রস্থের প্রতিটি কক্ষে থাকবে চারটি করে সিলিং ফ্যান। পাশেই বাথরুম। চারটি চারতলা ভবন হবে ডেঞ্জার সেল। ৪০০ দুর্ধর্ষ জঙ্গি ও সন্ত্রাসীকে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে। ডিভিশনপ্রাপ্ত (ভিআইপি) বন্দিদের জন্য ১৬টি বিশেষ কারাকক্ষ। ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’, জঙ্গি ও গুরুতর মামলার আসামিদের এ কারাগারে চারটি ভবনে রাখা হবে, যেগুলোকে বলা হচ্ছে ডেঞ্জার সেল। কারাগার ঘিরে আছে ১৮ ফুট উচ্চতার সীমানা প্রাচীর। তার ওপর দুই ফুট বৈদ্যুতিক তারের সেন্সর। প্রতিটি ভবনের রয়েছে আলাদা ছোট প্রাচীর। কোনো আসামি ১৮ ফুট দেয়াল টপকে যেতে চাইলে তারের সেন্সরে স্পর্শ লাগামাত্র নিরাপত্তা ঘণ্টা বেজে উঠবে। সেই সঙ্গে পলায়নপর কয়েদীকে খেতে হবে বৈদ্যুতিক শক। এখানে এক ভবনের আসামি অন্য ভবনের যাওয়ার কোনো উপায় নেই। কারাগারের ভেতর চিকিৎসা কেন্দ্র, সেলুন ও ল-্রি ভবন রয়েছে। বন্দিদের কাজের জন্য রয়েছে দোতলা ওয়ার্ক শেড। ব্যারাকে থাকতে পারবেন ৪০০ কারারক্ষী। আর সবকিছু পর্যবেক্ষণের জন্য কারাগারের চারপাশে রয়েছে ৪০ ফুট উঁচু চারটি ওয়াচ টাওয়ার ।
হানিফ ফ্লাইওভার অতিক্রমকালে টোল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ঃ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার রাজধানীর বাইরে কেরাণীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন উপলক্ষে তাঁর সরকারি গাড়িবহরের মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার অতিক্রমকালে টোল পরিশোধ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেরাণীগঞ্জে যাওয়া এবং সেখান থেকে ফিরার পথে তাঁর গাড়িবহরের সকল যানবাহনের জন্য টোল পরিশোধ করেন। প্রেস সচিব আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে টোল পরিশোধ করেন। উল্লেখ্য, গত বছর ১২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করার পর মুন্সীগঞ্জ থেকে রাজধানীতে ফিরার সময় তাঁর সরকারি গাড়িবহরের জন্য ধলেশ্বরী সেতু ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার করার জন্য টোল পরিশোধ করেছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
রাসেল ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:১১ এএম says : 1
জনমতকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে।
Total Reply(0)
Laboni ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ২:১৮ পিএম says : 0
ar jonno kara dai ????????????
Total Reply(0)
Arif ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ২:২০ পিএম says : 0
আমরা তো প্রতিদিনই টোল দেই
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন