শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বাঁশখালীতেই হবে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার দ্বিমত

প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : আন্দোলন যতই হোক না কেন, বাঁশখালী থেকে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প সরানোকে সমর্থন করবে না সরকার। বাঁশখালী বিদ্যুৎ প্রকল্প সরানো নিয়ে দু’দিন আগে দেয়া বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বক্তব্যের সাথে সরাসরি দ্বিমত প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এস আলম গ্রুপ বাঁশখালী থেকে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নিতে চাইলে সরকার এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে। আর উপদেষ্টা জানালেন, বাঁশখালীতেই এই প্রকল্প হবে। এখান থেকে প্রকল্পটি সরানোর কোনো প্রশ্নই আসে না।
দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে গতকাল (রোববার) বিদ্যুৎ ভবনে বিদ্যুৎ বিভাগ আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা একথা বলেন।
ড. ইলাহী বলেন, কাছেই সমুদ্র এবং প্রকল্প এলাকায় বসতি কম হওয়ায় সব দিক বিবেচনার্থে বাঁশখালীর নির্ধারিত স্থানেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সরকারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে একটি গ্রুপ সেখানে উন্নয়নকাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে। বাঁশখালীতে প্রাণহানির ঘটনার ব্যাপারে কোনো তদন্ত কমিটি হচ্ছে কি না এবং এর দায় কাদের জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, এত অধৈর্য হলে চলবে না। জেলা প্রশাসক একটি কমিটি করেছেন। আগামী সাত দিনের মধ্যেই ওই কমিটি রিপোর্ট পেশ করবে বলে আশা করছি। রিপোর্ট পাওয়ার পরই আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। তবে সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতির ব্যাপারে সরকার অবগত রয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে গত সোমবার ত্রিমুখী সংঘর্ষে কমপক্ষে চারজন গ্রামবাসী প্রাণ হারান। এছাড়াও ওই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরো অনেকে।
বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, অব্যাহতভাবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে অপপ্রচার চলছে। তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে যেসব কয়লা আমদানি করা হবেÑ তাতে সালফারের পরিমাণ অনেক কম থাকবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকার অধিবাসীদের উন্নয়নের জন্য প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ থেকে ৩ পয়সা কেটে রাখবে। এই অর্থ স্থানীয় এলাকাবাসীর উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
বিদ্যুৎ সচিব বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চাহিদা। অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্লান অনুযায়ী কয়লাকে প্রধান জ্বালানি রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ১৩২০ মেগাওয়াটের প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে ৩২ কোটি টাকা প্রতি বছর সংরক্ষিত হবে, যা স্থানীয় অধিবাসীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে ব্যবহৃত হবে। তাই এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থানীয় জনগণের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উন্নত দেশে গড়ে মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণের হার বার্ষিক যেখানে ২০ টন; সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ০.২৫ টন। তবু সরকার দূষণের মাত্রা ন্যূনতম রাখতে বদ্ধপরিকর।
এদিকে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, বাঁশখালীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে কিছু উদ্ভট চিন্তাভাবনা আছে। এগুলো কোথা থেকে আসে জানি না। উদ্ভট কথা বলে অযথা কতগুলো মানুষের জীবন পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হলো। এটা দুঃখজনক।
অপরদিকে প্রকল্প বাতিলে সরকারকে ২৫ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে উল্টো ১৫ দিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করেছে স্থানীয় ‘বসতভিটা ও কবরস্থান রক্ষা কমিটি’। শনিবার স্থানীয় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানান কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী।
এর আগে সাতকানিয়া সার্কেলের এসপি কামরুল হাসান, বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ কবির লিটনের সঙ্গে বৈঠক হয় ‘বসতভিটা ও কবরস্থান রক্ষা কমিটি’র। এসপি জানান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তদন্ত করা হবে। এই আশ্বাসের ভিত্তিতেই আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছে তারা।
কমিটির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা সরেজমিন পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন। প্রতিবেদনে পরিবেশ ও মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না এমন নিশ্চয়তা পেলেই জনগণের মতামতের ভিত্তিতে আন্দোলন থেকে সরে আসা হবে, অন্যথায় আবারো আন্দোলন শুরু হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন