স্টালিন সরকার : ৩২০৩১ স্কুল-কলেজ মাদকের ঝুঁকিতে জানিয়ে এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তাঁর এই তথ্যে শিক্ষার্থী ও দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। দেশের নতুন প্রজন্ম, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী শিক্ষার্থীরা আগামীতে দেশ চালাবেন। শিক্ষা জীবনে তারা মাদকের ছোবলে পড়লে তাদের ভবিষ্যৎ? ভবিষ্যতে দেশ কাদের হাতে পড়বে? প্রশ্ন হলোÑ ‘মানুষ’ গড়ার কারখানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন মাদকের আখড়া হবে? স্কুল-কলেজ কেন মাদকের রমরমা বাজার হবে? কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা কেন অল্প বয়সে মাদকাসক্ত হবে? শিক্ষার্থীদের ক্লাসে মূল্যবোধ, নৈতিক শিক্ষা, গুরুজনে ভক্তি, সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় অনুশাসন, সভ্যতা-ভব্যতা, নিজস্ব সাংস্কৃতির শিক্ষা দেয়া হলে তারা অনৈতিকতা ও মাদকের দিকে ছুঁটবে কেন? এ নিয়ে বোর্ডের পাঠ্যপুস্তক এবং রাষ্ট্রের ভূমিকা কি? পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশকে উৎসাহিত করতে সরকারি চাকুরেদের ‘বৈশাখী বোনাস’ দেয়া হয়। পহেলা বৈশাখের পান্তা-ইলিশ কি এ দেশের কৃষ্টি সংস্কৃতির ধারক-বাহক? খোদ ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন ওলামা লীগের নেতারা বলেছেন পহেলা বৈশাখ পালনের সঙ্গে এদেশের মাটি-মানুষ-কৃষ্টির কোনো সম্পর্ক নেই। আর ৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশের এধরনের দিবস পালন ইসলাম সমর্থন করে না।
প্রবাদে আছে কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে আগে তার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে হয়। এ জন্য অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের মানুষের ওপর সেই অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। আগে শিশুদের পড়ানো হতো মদনমোহন তর্কালঙ্কার ‘শিশু শিক্ষা’ বইয়ে ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি/সারাদিন আমি যেন ভালভাবে চলি/ আদেশ করেন যাহা মোর গুরুজনে?/ আমি যেন সেই কাজ করি ভালমনে’। অথচ এখন পড়ানো হয় ‘আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে/ ঢাক ঢোল ঝাঁঝর বাজে/ বাজতে বাজতে চললো ঢুলি/....’। এই ঢাকঢোলে কি শিশুদের শেখার আছে কিছু? এক হিসেবে দেখা গেছে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে কবিতা-প্রবন্ধ-নিবন্ধ-গল্প রয়েছে ১৯৩টি। এর মধ্যে মুসলমানদের কৃষ্টি কালচারের বাইরে হিন্দুত্ববাদী লেখার সংখ্যা ১৩৭টি। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশের সংস্কৃতি আর ধর্মনিরপেক্ষতার নামে হিন্দুত্ববাদী ভারতের বাংলা ভাষাভাষী কোলকাতার সংস্কৃতি কি এক? আগে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নবম-দশম শ্রেণীর বোর্ডের পাঠ্যবইয়ে কাজী নজরুল ইসলামের অনেক জীবনধর্মী কবিতা, সুফিয়া কামালের ‘প্রার্থনা’, শাহ মোহাম্মদ সগীরের ‘বন্দনা’ কায়কোবাদের ‘বাবরের মহত্ব’ আলাওলের ‘হামদ’ আবদুল হামিকের ‘বঙ্গবাণী’ গোলামা মোস্তফার ‘জীবনের শিক্ষা’সহ অসংখ্য শিক্ষণীয় কবিতা-গল্প ছিল। এগুলো ক্লাসে পড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জীবন গড়তে শিখতো। শিক্ষকরাও এসব কবিতা-গল্প পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ‘মানুষ’ গগে তোলার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এখন? মুসলিম সংস্কৃতি, আচার-আনুষ্ঠান, ধর্মীয় রীতি-নীতিকে পরিকল্পিতভাবে আড়াল করে পাঠ্যবইয়েই হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। শিশুরাও তাই শিখছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাদকের ছোঁবল। নৈতিকতার অভাবে এটা হয়েছে। ‘নৈতিকতা’ ল্যাটিন ‘মোরালিটাস’ শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ চরিত্র, ভদ্রতা। সঠিক আচরণ হল ভাল এবং খারাপ বিষয়সমূহের মাঝে উত্তম সিদ্ধান্ত ও প্রতিক্রিয়াসমূহের পার্থক্য ও পৃথকিকরণ। নৈতিকতাকে একটি আদর্শিক মানদ- বলা যেতে পারে যা বিভিন্ন অঞ্চলের সামাজিকতা, ঐতিহ্য, সংষ্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতির মানদ-ের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। আমরা কি পাঠ্যবইয়ে ছাত্রছাত্রীদের নৈতিক শিক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি? নাকি নৈতিক শিক্ষার বদলে তথাকথিত প্রগতিশীলতা, সাংস্কৃতিমনা, উদারনৈতিক মনোভাবাপন্ন শিক্ষার ওপর জোর দেয়ার নামে বিজাতীয় সাংস্কৃতি শেখাচ্ছি? তথাকথিত আধুনিক শিক্ষার নামে ‘আজেবাজে’ শিক্ষার মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের কি অনৈতিকতার পথে ঠেলে দিচ্ছি না? শিক্ষার্থীদের মাদকের উপর আসক্তি কি এ জন্য দায়ী নয়? পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ, ভ্যালেনটাইন ডে, ভাইফোঁটা, র্যাগ ডে, মঙ্গল প্রতীপ, মঙ্গল যাত্রা, ঋষি, ওঝা, ঢাক, রথ, বাউলের একতারা বিষয়ক টার্মগুলো শেখানোর নামে তরুণ-তরুণী শিক্ষার্থীদের কোন পথে নিয়ে যাচ্ছি?
রাজধানী ঢাকায় পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ উৎসবের তোড়জোর চলছে। ৫শ’ টাকার ইলিশের দাম ৫ হাজার এবং ৮শ’ টাকা ইলিশ বিক্রী হচ্ছে ১০ হাজার টাকায়। চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভা যাত্রার প্রস্তুতি চলছে এক মাস থেকে। এ উপলক্ষে চলছে দেদারসে চাঁদাবাজি। চারুকলায় রং পেন্সিল নিয়ে পেঁচা, ময়ূর, দোয়েলসহ পহেলা বৈশাখের মুখোশ তৈরিতে মহাব্যস্ত কিছু ছাত্রছাত্রী। তাদের কাছে গাঁজা, শিদ্ধি নেয়া নাকি প্রগতির লক্ষণ। এ সাংস্কৃতির চর্চা করতে গিয়ে দেশের স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী ও তরুণ-তরুণীরা মনের অজান্তেই নেশার রাজ্যে ডুবে যাচ্ছে। নেশাগ্রস্তরা নৈতিকতা হারাচ্ছে, এক সময় নেশার টাকা জোগার করতে ছাত্রীরা অনৈতিক পথ বেছে নিচ্ছেন; আর ছাত্র ও তরুণরা বিপথে যাচ্ছেন। ক্যাম্পাসে নেশার টাকা জোগাড় করতে শুধু চাঁদাবাজিই নয়; ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। বখে যাওয়া তরুণ-তরুণীদের ভবিষ্যৎ জীবনের চিন্তা না করে সাংস্কৃতি সেবীরা প্রগতির সাংস্কৃতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সে দিকে ঝুঁকে পড়ার ক্ষেত্র তৈরি করছেন। আর কিছু মিডিয়া ও রাষ্ট্রের শিক্ষা পদ্ধতিও তাদের বিপথে পা বাড়ানোয় উৎসাহিত করছে। এ সবের বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছেন দেশের সচেতন আলেম সমাজ। বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার কিছু বুদ্ধিজীবী ও সুশীল এ নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন। কিন্তু কর্পোরেট হাউজগুলোর কাঁচা অর্থ এবং প্রতিবেশি দেশের সাংস্কৃতি বিকাশের এজেন্সিধারীদের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। অথচ বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে উৎসব পালনকে ‘ইসলামবিরোধী’ ও ‘অনৈসলামিক’ আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে আওয়ামী ওলামা লীগের নেতারা। মানববন্ধন করে তারা বলেছেন, পহেলা বৈশাখের নামে দেশে কোন বেহায়াপনা সহ্য করা হবে না। বাংলাদেশ ওলি আউলিয়া ও পীর মাশায়েখের দেশ। এই দেশের ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা পহেলা বৈশাখের নামে কোন বেলেল্লাপনা-বেহায়াপনা মেনে নেবে না। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে কর্পোরেট মিডিয়া ও পূজিবাদী বেনিয়াগোষ্ঠী বাণিজ্য করছে। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরি বলেন, ইসলামে পহেলা বৈশাখ, পহেলা জানুয়ারি নববর্ষ পালন জায়েজ নেই। তাই রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের দেশে হারাম দিবস পালনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা ও আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ করতে হবে।
কথায় কথায় মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে বিয়োদগার করা হয়। মাদ্রাসা জঙ্গি কারখানা, মৌলবাদের টেনিং কেন্দ্র পশ্চিমাদের দেয়া এসব উক্তি প্রচার করা হয়। মাদ্রাসায় যে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়া হয় সেটা প্রচার করা হয় না কেন? শিক্ষা মন্ত্রী দেশের ৩২০৩১টি স্কুল কলেজ মাদকের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন। দেশের কয়টা মাদ্রাসা মাদকের ঝুঁকিতে আছে? মাদ্রাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে বিয়োদগার ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু আমাদের স্কুল-কলেজে ছাত্রছাত্রীদের চরিত্র গঠনের শিক্ষার প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে না কেন? বাংলাদেশের মাটি ও ৯২ ভাগ মানুষের কৃষ্টি কালচারকে প্রধান্য দেয়া হচ্ছে না কেন? ক্রমান্বয়ে কেন বোর্ড অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকে মুসলিম কালচারের বদলে অন্য কালচারকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে? অন্য কালচারকে প্রাধান্য দেয়ায় শিক্ষার্থীরা নৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন। সে জন্য সমাজে ড্রাগ, হিরোইনসহ নেশায় তরুণ-তরুণীরা আকৃষ্ট হচ্ছে। এ দায় কার? এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নপত্রে পীর, মাজারকে খারাপভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডের প্রশ্নপত্রে মুসলমানকে সন্ত্রাসী এবং হিন্দুকে পরোপকারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। যারা এ প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। কারণ তারা বই থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন। পাঠ্যপুস্তকে যে পাঠ্য থাকে তা ছাত্রদের পড়িয়ে তারাও মনস্তাত্ত্বিকভাবে পীর-মাজার বিদ্বেষী হয়ে পড়েছেন। এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেছে পীর মশায়েখরাই। তাদের চরিত্র হণনের চেষ্টা করে লেখা গল্প কবিতা পাঠ্যপুস্তকে থাকলে তা নিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন হবেই। তাহলে দায় কার? অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপসাংস্কৃতির আধিক্য ও ক্লাসে নৈতিকতা শিক্ষার অভাবে তরুণ-তরুণীরা বিপথে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। সমাজে ক্রাইম বাড়ছে। পাঠ্যপুস্তকে নৈতিক শিক্ষা খুবই প্রয়োজন।
পাঠপুস্তকের দিকে একটু তাকানো যাক। প্রথম শ্রেণীর ‘আমার বাংলা বই’তে অক্ষর পরিচয় দিতে গিয়ে গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধে এবং চতুর্থ শ্রেণীর ‘আমার বাংলা বই’য়ের অন্তর্ভুক্ত, কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের লেখা ‘নেমন্তন্ন’ কবিতায় শিক্ষার্থীরা শিখছে যে, ‘বাবু’ বলে একে অপরকে সম্বোধন করতে হবে, সাথে সাথে ‘ভজন’ হিন্দুদের ধর্মীয় সঙ্গীত শুনতে হবে। মন্দিরের ‘প্রসাদ’ও ভক্ষণ করতে হবে। পঞ্চম শ্রেণীর ‘আমার বাংলা’ বইয়ে ‘শখের মৃৎশিল্প’ এর আলোচনায় শেখানো হচ্ছে রাজা রামনাথ রায়ের ‘কান্তজীর মন্দির’, পাহাড়পুরের ‘বৌদ্ধ বিহার’, বৌদ্ধ সভ্যতার নিদর্শন ময়নামতির ‘শালবন বিহার’, মৌর্য, গুপ্ত এবং পাল হিন্দুসমন্ত রাজাদের রাজধানী ‘মহাস্থানগড়’ সম্পর্কে। ইতিহাস ঐতিহ্যের এগুলো শিক্ষার্থীদের শেখানো উচিত। কিন্তু ‘মহাস্থানগড়’-এ পোড়ামাটির ফলক ও মূর্তি ছাড়াও হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী’র মাজার থাকলেও তার বর্ণনা নেই কেন? বাংলাদেশ ওলি আউলিয়ার দেশ। সেগুলো সম্পর্কে তথা মুসলিম সংস্কৃতি, আচার-আনুষ্ঠান, ধর্মীয় রীতি-নীতিকে শিক্ষার্থীদের শেখার কি প্রয়োজন নেই? পঞ্চম শ্রেণীর ‘আমার বাংলা; বইয়ে’র ‘কাঞ্চনমালা’ ও কাঁকনমালা’ গল্পে হিন্দু রানীদের পরস্পরের প্রতারণার গল্প, ব্রত অনুষ্ঠান, মন্ত্র পাঠ করে কীভাবে আসল রানী উদ্ধার পেল, নকল রানী ধ্বংস হলো শেখানো হচ্ছে। একই বইয়ে সুকুমার রায়ের ‘অবাক জলপান’ অংশে জল, মশাই, আজ্ঞে ইত্যাদি শব্দ শেখানো হচ্ছে। অষ্টম শ্রেণীর বাংলা প্রথমপত্র ‘সাহিত্য কণিকা’ বইয়ে নাটমন্দির, দেবমন্দির, সংকীর্তন, কালী দেবীর পূজা ইত্যাদি শেখানো হয়। এগুলো কি এদেশের মানুষের মাটির সাংস্কৃতির সঙ্গে যায়?
কয়েক বছরের পাঠপ্রস্তুক নিয়ে কাজ করে বেশ কিছু তথ্য তুলে এনেছেন জনৈক ব্যক্তি। তার দেয়া চিত্রে দেখা যায় কয়েক বছরে স্কলের পাঠ্যপুস্তকে বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেমন, দ্বিতীয় শ্রেণীর- ‘সবাই মিলে করি কাজ’ শিরোনামের মহানবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত বাদ দেয়া হয়েছে। এমন তৃতীয় শ্রেণীর ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে জীবন চরিত; চতুর্থ শ্রেণীর হযরত ওমরের সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত বই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীর ‘বিদায় হজ’ নামের নবীর জীবন চরিত বাদ দিয়ে সেখানে স্বঘোষিত নাস্তিক হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ নামের কবিতা সংযোজন করা হয়। যা কোরআনবিরোধী কবিতা। পঞ্চম শ্রেণীতে বাদ দেয়া হয়েছে কাজী কাদের নেওয়াজের লেখা ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ কবিতা। পঞ্চম শ্রেণীর ‘শহীদ তিতুমীর’ প্রবন্ধে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ ছিল সেটি বাদ দেয়া হয়েছে। ৬ষ্ট শ্রেণীতে ড, মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘সততার পুরস্কার’ নামের শিক্ষামূলক কবিতা বাদ দিয়ে সংযোজন করা হয়েছে ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামের একটি কবিতা। সেখানে দেবী দুর্গার প্রশংসা করা হয়েছে। ৬ষ্ট শ্রেণীর ‘নীল নদ আর পিরামিডের দেশ’ ভ্রমণ কাহিনী ছিল। সেটা বাদ দিয়ে আন্তর্ভুক্ত হয়েছে ভারতের হিন্দু ধর্মালম্বীদের ধর্মীয় তীর্থস্থান রাঁচি’র ভ্রমণ কাহিনী। একই বইয়ের কায়কোবাদের ‘প্রার্থনা’ কবিতা বাদ দেয়া দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে গল্প ‘লাল গরুটা’। যা দিয়ে শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মত। ৭ম শ্রেণীর ‘মরু ভাস্কর’ নামের মহানবীর জীবন চরিত বাদ দিয়ে যোগ হয়েছে পাঁঠাবলির নিয়ম শেখানোর কবিতা ‘লালু’ নামক গল্প। ৮ম শ্রেণীতে ‘বাবরের মহত্ব’ কবিতা বাদ দেয়া হয়েছে। আরো বাদ দেয়া হয়েছে বেগম সুফিয়া কামালের ‘প্রার্থনা’ কবিতা। যোগ হয়েছে ধর্মগ্রন্থ ‘রামায়ণ’ সংক্ষিপ্ত রুপ। ৯ম-১০ম শ্রেণীর বাংলা বইয়ে শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ ধর্মভিত্তিক কবিতা কর্তন করে যোগ হয়েছে রাধা-কৃষনের লীলাকৃর্তন ‘সুখের লাগিয়া’। একই বইয়ে কবি আলাওলেরর ধর্মভিত্তিক ‘হামদ’ নামক কবিতা ছেঁটে ফেলে যোগ হয়েছে ‘আমার সন্তান’ নামক কবিতা। এ কবিতায় হিন্দুদের ধর্ম সম্পর্কিত মঙ্গলকাব্যের অন্তর্ভুক্ত। যা দেবী অন্নপূর্ণার প্রশংসা ও তার প্রার্থনাসূচক। একই শ্রেণীর বই থেকে কবি আবদুল হাকিমের ‘বঙ্গবাণী’ কবিতা বাদ দিয়ে যোগ করা হয়েছে ভারতের ‘পালমৌ’ এর ভ্রমণ কাহিনী। গোলাম মোস্তফার মোঘল বাদশা বাবর ও তার পুত্র হুমায়ুনকে নিয়ে লেখা ‘জীবনের বিনিময়’ কবিতা ছেটে ফেলে যোগ হয়েছে বাউলদের বিকৃত যৌনাচার ‘সময় হলে সাধন হবে না’। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ‘উমর ফারুক’ বাদ দিয়ে সংযোজন করা হয়েছে ‘সাকোটা দুলছে’ কবিতা। এ কবিতায় ৪৭ সালের দেশভাগকে হেয় করা হয়েছে। এই যে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সামান্য চিত্র তুলে ধরা হলো তা কি তরুণ-তরুণীদের বখে যাওয়া ও মাদকের প্রতি ঝুঁকে পড়ার জন্য যথেষ্ট নয়? স্কুল-কলেজে ক্লাসের নৈতিক শিক্ষা ছাড়া নতুন প্রজন্ম সুশিক্ষায় শিক্ষত হবে সেটা ভাবা যায় কি? একটি মিডিয়ায় খবর বের হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এমরান নামের এক ছাত লিখেছেন, ‘জীবনের বড় বিপর্যয় এসেছে। চেষ্টা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারছি না। প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম থেকে ধূমপান শুরু। এরপর বড় ভাইদের কথা মত ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়ার নামে গাঁজা, ফেনসিডিল ও মদ পানে অভ্যস্ততা। সেই যে শুরু এখন আর ছাড়তে পারছি না।’ শুধু ইমরান নয়, মাদকের এ ভয়াল থাবায় ধ্বংস হতে চলেছে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ। ক্যাম্পাস ঘিরে মাদকের জাল বিস্তার লাভ করছে। হাত বাড়ালেই মিলছে নানা ধরনের মাদকদ্রব্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়; শিক্ষামন্ত্রী স্কুল-কলেজের মাদকের ছোবলের কথা বলেছেন। তাহলে অনান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক চিত্র কি? দেশের শিক্ষার্থী তরুণ-তরুণীদের অবক্ষয়ের দায় কার? হাজার মিলিয়ন ডলার এই প্রশ্নের জবাব কোথায়?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন