শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

মানব সমাজে তাবলীগের প্রভাব

প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম

॥ শেষ কিস্তি ॥
মানুষকে মসজিদমুখী : বাংলাদেশে মুসলিম জনসংখ্যার তুলনায় মসজিদে তাদের উপস্থিতি নগন্য। সাধারণত : সাপ্তাহিক জুমআর দিনে, বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিলে, পীর সাহেবের খানকাতেই তাদের কিছু কিছু যাতায়াত লক্ষ্য করা যেত। বস্তুতঃ মুসলমানদের সমস্ত কার্যক্রম মসজিদমুখী হতে হবে। তাবলীগ জামা’আতের মসজিদমুখী মেহেনতের দ্বারা মুসলমানদর মধ্যে তাবলীগী কর্মীদের মসজিদে আড়াই ঘণ্টা থেকে আট ঘণ্টা, তালীম আধা ঘণ্টা, বয়াতে, গাশ্তে, তিন দিনে, চল্লিশ দিন, চার মাস, একবৎসর আল্লাহর রাস্তায় ও মসজিদ ওয়ার কাজে সময় দিচ্ছে। আর এ কাজে কিশোর, যুবক, বয়স্ক, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, কৃষিজীবী, সকল শ্রেণীর লোকই অংশগ্রহণ করছে।
শিক্ষা কার্যক্রম ও আমলের মধ্যে সম্বয় সাধন : তাবলীগ জামাআতে একজন অংশগ্রহণকারী একাধারে তিনি নিজে শিক্ষার্থী এবং অপরকেও শিক্ষাদানকারী। তাহারাত, নামাজ, রোজা ইত্যাদি বিষয়ে যা শিক্ষা দেয়া হয় তা কিভাবে আমল করতে হবে সে ব্যাপারেও দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এভাবে শিক্ষাকার্যক্রম ও আমলের মধ্যে তাবলীগ জামাআত এক সুন্দর সমন্বয় সাধন করছে। এর পরিধি যতই সীমিত হউক না কেন অতীব প্রয়োজন ও মৌলিক বিবেচনায় উপরোক্ত সমন্বয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বৃহত্তর অঙ্গনে মুসলিম উম্মাহ গঠনে কিংবা বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মসূচিতেও উপরোক্ত সমম্বিত ধারাটি প্রভাব বিস্তার করছে। এভাবে সমম্বিত ধারাটিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রেও তাবলীগ জামা’আতের অবদান খাটো করে দেখা যায় না।
সর্বস্তরের মানুষের মাঝে দা’ওয়াত : তাবলীগ জামাআত কোনো নির্দিষ্ট স্তরের লোককে দা’ওয়াত দেয় না। বরং ছাত্র, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, মালিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-নেত্রী, ও সাধারণ জনগণকে দা’ওয়াত দিয়ে থাকে। যেজন্য বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসব বিভিন্ন স্তরের জনগোষ্ঠী তাবলীগ জামাআতে অংশগ্রহণ করছে। কমবেশি এ ক্ষেত্রে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সময় দিচ্ছে। ন্যূনতম পক্ষে বছরে ইজতিমায় অংশগ্রহণ করছে। এ ক্ষেত্রে সর্বস্তরের জনসমাজে এক জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। একজন ডাক্তার, একজন শিক্ষক কিংবা উচ্চস্তরের ছাত্র থেকে সাধারণ ব্যক্তিদের জামাআত তৈরির জন্য প্রয়াশ চালিয়ে থাকে। এ সমন্বিত ধারার কারণে ওইসব জামাআতে অভ্যন্তরীণভাবে যেমনি ফলপ্রসূ কার্যক্রম পরিচালনা সহজ হচ্ছে তেমনিভাবে সর্বস্তরের দাওয়াত উপস্থাপনার ক্ষেত্রে পথ সুগম হচ্ছে।
বাংলাদেশের সাথে মুসলিম বিশ্বে সম্পর্ক জোরাল করা : হিন্দুস্থানের বাইরে তাবলীগ জামা’আতের কাজ সম্প্রসারণে বাংলাদেশ থেকে বের হওয়া জামা’আতসমূহ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। একইভাবে বহির্বিশ্ব থেকে বাংলাদেশে বিদেশী জামা’আত আগমন করে থাকে। বিশেষতঃ ইজতিমার মাঠে মুসলিম বিশ্ব থেকে বিভিন্ন দেশের প্রচুর সংখ্যক বিদেশী জামা’আত অংশগ্রহণ করে থাকে। ইজতিমা সমাপনান্তে সেসব জামা’আত এ দেশের গ্রামে-গঞ্জে, বিভিন্ন মসজিদে, মারকাজে ছড়িয়ে যায়। ফালে এ দেশ সম্পর্কে বাইরের মুসলিমদের ভালো ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে।
সামাজিক অপরাধ হ্রাসকরণ : অবশ্য তাবলীগ জামা’আত কৌশলগত কারণে সৎকাজের প্রতি আহ্বান জানায়। কিন্তু অসৎ কাজ প্রতিরোধ মৌখিক বা শক্তিপ্রয়োগমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। তা সত্ত্বেও সামাজিক অপরাধ হ্রাস করণে অন্যদিক দিয়ে তাবলীগ জামা’আত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর তা হলো মানুষকে আত্মশুদ্ধি ও চারিত্রিক নীতিমালা চর্চার মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধে উজ্জীবিত করে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখ। আল্লাহকে ভয় ও আখিরাতের জবাবদিহিতার কারণে তাবলীগী কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ সাধারণতঃ অপরাধ থেকে বিরত থাকে। এর বড় প্রমাণ হলো ইজতিমা মাঠে লাখো লাখো মানুষের উপস্থিত। কিন্তু কারো সাথে হানাহানি মারামারি নেই, বোমাবাজি নেই বা হৈ চৈ নেই। অথচ সুশৃঙ্খলভাবে সকলেই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ইজতিমায় অংশগ্রহণ করছে। এছাড়া একজন লোক অন্তত তিনদিনের চিল্লা দিয়ে আসলে দাড়ি রেখে পরে তা আর কখনও সেপ (মুন্ডন) করে না। এ অবস্থায় সত্যিই বিস্ময়কর যা জাতীয় পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন