শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যয়ভার দলের -ড. মোশাররফ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন - ফাইল ফটো


 কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যয় দল বহন করবে বলে জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দলটির পক্ষ থেকে অতি দ্রুত সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির দাবিও জানান তিনি। গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
ড. মোশাররফ বলেন, কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেছেন, কারাবিধি অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এমন কোনো সিদ্ধান্ত না থাকায় খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নিতে হবে। আইজি প্রিজন আরও জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসা ব্যয় কে বহন করবে, সে সম্পর্কেও সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে। খন্দকার মোশাররফ বলেন, তাঁর (আইজি প্রিজন) এই বক্তব্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত এবং আমাদের বারবার অনুরোধ সত্তে¡ও ইউনাইটেড হাসপাতালে দেশনেত্রীকে ভর্তির ব্যাপারে সরকারের অনীহার কারণ বোঝা গেল। আমরা দেশনেত্রীর উপযুক্ত চিকিৎসা চাই বলেই আপনাদের (গণমাধ্যম) মাধ্যমে সরকারকে জানাতে চাই যে তাঁর চিকিৎসার সমুদয় ব্যয় আমাদের দল বহন করবে।
ড. মোশাররফ বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অন্যায়ভাবে এবং তাঁর দেয়া জবানবন্দী বিকৃত করে একটি আদালত তাঁকে পাঁচ বছরের জেল দিয়ে সরকারের ইচ্ছা পূরণ করেছে। বর্তমানে তাঁকে একটি পরিত্যক্ত ঘোষিত নির্জন কারাগারের একমাত্র বন্দী হিসেবে রাখা হয়েছে। ৭৩ বছর বয়স্কা এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে যে পরিবেশে রাখা হয়েছে তা যেকোন সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে ফেলার মতো। এই পরিস্থিতিতে গত ৫ জুন তিনি হঠাৎ করে অচেতন হয়ে পড়েন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি জেল কর্তৃপক্ষ তাঁর পরিবারের কোন সদস্যকেও জানায়নি এবং কেন তিনি অচেতন হয়ে পড়লেন তা পরীক্ষার জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়নি। গত ৮ জুন তাঁর পরিবারের সদস্যগণ নিয়মিত সাক্ষাতে গিয়ে এই বিষয়টি জানতে পারেন। ৫ দফা আবেদনের পর গত ৯ জুন কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে দেশনেত্রীর চিকিৎসা করতেন এমন ৪ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও ঢাকা সিভিল সার্জনের উপস্থিতিতে তাঁকে দেখতে গিয়ে এই ঘটনার কথা জানতে পারেন। ৫ জুন দুপুর ১টার দিকে দেশনেত্রীর ৫/৭ মিনিট আনকনশাস থাকা এবং সেসময়ের কোন কিছু মনে করতে না পারার বিষয়টিকে চিকিৎসকগণ মারাত্মক বলে মনে করেন। তাদের মতে এটা ছিল ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিক এ্যাটাক-টিআইএ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, যেটা সবচেয়ে বিপজ্জনক সেটা হচ্ছে টিআইএ যদি কারও হয়-তাহলে সেটা ইন্ডিকেট করে যে, সামনে তার একটা বড় ধরণের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী।
তিনি বলেন, ওই ৪ জন বিশেষ কিছু পরীক্ষা এবং যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়ার জন্য দেশনেত্রীকে অবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রেস ব্রিফিংয়ের পর এ বিষয়ে সরকারের আইনমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুখ খোলেন। এরপর থেকে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ-তে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু দেশনেত্রীকে এর আগে সেখানে নেয়া হলে সেখানকার ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ এবং চিকিৎসা সেবার বিষয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
বিএনপির এই নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার বিষয়ে রাজনৈতিক কারণে অবহেলা কিংবা বিলম্ব করা হলে তার পরিণাম সরকারের জন্য শুভ হবে না। দেশবাসী বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সরকারের অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যয়ভার বিএনপি বহন করবে এ নিয়ে কোনো আবেদন করেছেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমাদের জানা মতে, খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা এই বিষয়ে আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সচিবালয়ে গিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পরিবারের সদস্যরা লিখিত আবেদন করেছেন, যাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ব্যয়ভার দল থেকে বহন করা হবে, তাও আবেদনের মাধ্যমে জানানো হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে ঈদের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তিও দাবি করা হয়।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবারের আবেদন: খালেদা জিয়ার নিজ/পারিবারিক খরচে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের অনুমতির জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কানদার। গতকাল সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে তারা চিকিৎসার জন্য লিখিত আবেদন করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া চিঠির অনুলিপি স্বরাষ্ট্র সচিব (সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ), মহাপরিচালক (প্রিজন), জেল সুপার, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নাজিমউদ্দিন রোড বরাবরেও দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয় বর্তমানে আমার বড় বোন বেগম খালেদা জিয়াকে নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন অসুখে আক্রান্ত। কারা অভ্যন্তরে তিনি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে দীর্ঘ কারাবাসে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। গত ৯ জুন কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কারা অভ্যন্তরে তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। ওই চিকিৎসকগণ জানিয়েছেন যে, বেগম জিয়া ৫ জুন মাইন্ড স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ফলে ভবিষ্যতের জন্য এ ধরণের বিষয় বড় রকমের ঝুঁকির পূর্বাভাস বহন করছে। তাকে অনতিবিলম্বে বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রদানের আবেদন করেন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন