স্টাফ রিপোর্টার : ‘অবৈধ সরকারের শত নির্যাতন ও নিপীড়নেও বিএনপি হতাশ নয়’ বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল (সোমবার) দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘আমার দেশ বন্ধ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের কারাবন্দিত্বের ৩ বছর’ উপলক্ষে এক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। আমার দেশ পত্রিকা এ সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সরকারের নির্যাতন, অপশাসন ও দুঃশাসনের অবশ্যই অবসান হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। যেমন করেছিল পাকিস্তানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। এ দেশের মানুষ পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। বাংলাদেশের মানুষ কখনই এ ধরনের দুঃশাসন সহ্য করবে না। আমরা এ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে বিজয় অর্জন করব। এই লড়াইয়ে দেশবাসী জয়ী হবেই।
বর্তমান সরকার ক্ষমতার দাম্ভিকতায় ভুগছে এমন মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, কারো সমালোচনা সরকার সহ্য করতে পারে না। তারা সহিষ্ণুতার রাজনীতি করে না। একইভাবে কারোর কথাও আমলে নেয় না। তাদের কর্মকা- সম্পর্কে নতুন করে আমাদের আর জানার দরকার নেই। দেশে কার্যত ‘এক ব্যক্তি ও এক দল’-এর শাসন চলছে।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। তিনি আবারো আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কটের সমাধান করতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ কঠিন সময় অতিক্রম করছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ’৭২ সালে ৪টি পত্রিকা রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দিয়ে বাকশাল কায়েম করেছিল। এখন আবার আওয়ামী লীগ সরকার একে একে টিভি ও পত্রিকা বন্ধ করে দিচ্ছে। কারো কথা বলার সুযোগ নেই।
বিরোধী দলের ওপর সরকারের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যারা গণতন্ত্রের কথা বলছি, গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য কাজ করছি; তারা সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছি। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী নির্যাতিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ৫০০ নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। প্রায় তিন শ’র ওপরে নেতাকর্মী গুম-নিখোঁজ হয়েছে। ৭৪ হাজার মামলায় প্রায় সাড়ে চার লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আমাদেরকে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।
বিএনপির অতীত ভুলত্রুটির কথা স্বীকার করে মহাসচিব বলেন, নিশ্চয়ই আমাদের ভুলত্রুটি আছে, অবশ্যই আছে। তবে সেসব ভুলত্রুটিকে এখন বড় করে না দেখে সেগুলোকে শুধরে নিয়ে গণতন্ত্রের জন্য আমাদেরকে সঠিক পথে অগ্রসর হতে হবে। সে জন্য দলের মধ্যে যেমন ঐক্য দরকার, তেমনি গণতন্ত্রকে ফিরে পেতে জাতীয় ঐক্যও প্রয়োজন। বেগম খালেদা জিয়াও জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। তিনি (খালেদা) আহ্বান জানিয়েছেন, আসুন দেশের মানুষ ও সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করি। আলোচনা করে সুদিনের পথ ঠিক করে একসঙ্গে সেই পথে চলি। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের এ কথা শোনার মতো এখানে কেউ নেই।
মির্জা ফখরুল বলেন, মাহমুদুর রহমান দীর্ঘ নির্যাতনেও হতাশ হননি। কারো সঙ্গে আপস করেননি। তিনি সত্য কথা বলতেন, এটাই তার অপরাধ। সরকারের অপকর্ম-দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরার কারণে তাকে বন্দী করে রেখেছে। মাহমুদুর রহমান ইতোমধ্যে ৭২টি মামলায় জামিন পেয়েছেন এবং ৭৩ নম্বর মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে আমরাও আজ নির্যাতিত। আমরা বন্দী হয়ে আছি। আমাদের সমস্ত মুখে তালা মেরে দেয়া হয়েছে। আমাদের কথা বলতে দেয়া হয় না। আমি যেখানে মিটিং করতে যাই সেখানেই তা বন্ধ করে দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আমাদেরকে কাজ করতে হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফর উল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আ ন ম আখতার হোসেন, শিক্ষক নেতা অধ্যাপক সেলিম ভূইয়া, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, আমার দেশ পত্রিকার সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কাদের গনি চৌধুরী, কবি আব্দুল হাই শিকদার, এম আব্দুল্লাহ, ডিইউজে (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন