শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বৈশাখে চট্টগ্রামে ইলিশ ‘না’ তিন ট্রাক জাটকা আটক

প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে ইলিশের পদ থাকছে না। খাবারের পাতে থাকবে না পান্তা-ইলিশও। শুধু তাই নয় বৈশাখ মাসে প্রজনন মওসুমে ইলিশ শিকারের নামে মা ইলিশ ও জাটকা ধরা কঠোরভাবে বন্ধ রাখা হবে। এই ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহউদ্দিন জানিয়েছেন, পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে গিয়ে খাবার-দাবারের প্রধান মেনু হিসেবে ইলিশ কিংবা পান্তা-ইলিশ থাকার ব্যাপারে এহেন সংস্কৃতির পক্ষে জোরালো কোন উদাহরণ, ইতিহাস বা যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তদুপরি সবচেয়ে বড় কথা হলো, মওসুমের এ সময়টাতে সাগর-উপকূল-নদীতে মা ইলিশ ও জাটকা নিধন হয়ে থাকে ব্যাপকভাবে। এ কারণে নেহায়েৎ ইলিশ দিয়েই বৈশাখ উদযাপনকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল (সোমবার) বন্দরনগরীর পাথরঘাটা ফিশারীঘাটে র‌্যাব-৭-এর অভিযানে তিন ট্রাক বোঝাই বিপুল পরিমাণ জাটকা ইলিশ আটক করা হয়েছে। পাথরঘাটার আড়ত ও মোকাম থেকে ইলিশের বিশাল চালান মাছের বাজারে নেয়া হচ্ছে মর্মে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে র‌্যাব এ অভিযান চালায়। এ সময় মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। গত ৮ এপ্রিলেও ফিশারীঘাট থেকে বিপুল পরিমাণ জাটকা আটক করা হয়। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান এ অভিযান পরিচালনা করেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নগরী, জেলায়, মাছের মোকাম ও আড়তগুলোতে জাটকা ইলিশ আনা, মজুদ ও বেচাকেনার বিরুদ্ধে নিয়মিত কঠোর অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
মা ইলিশ ও জাটকা নিধন রোধে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য মওসুমের বর্তমান সময়ে ইলিশের পদ ছাড়াই চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে। কেননা এ সময় যে সব ইলিশ ধরা পড়ছে তার সবই জাটকা। এমনকি মা ইলিশও ধরা পড়ছে। তাই ইলিশ সুরক্ষা, প্রজনন ও বর্ধনশীলতার স্বার্থে প্রতিবছর জেলা প্রশাসন কেন্দ্রীয়ভাবে যে বৈশাখী আয়োজন করে থাকে এতে এবার ইলিশের কোন পদ রাখা হচ্ছে না। তবে অন্যসব আয়োজন যথারীতি চলবে। সেই সাখে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য দফতর চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ও ফিশারীঘাটে কড়া নজর রাখছে। জাটকা বিক্রি হতে দেখা মাত্রই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে এখন ইলিশের আকার ছোট, অর্থাৎ জাটকা। কয়েক মাস পরে ধরলে বড় আকারের ইলিশ পাওয়া যাবে। ইলিশের প্রজননেও সহায়ক হবে। পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়া একটি সাম্প্রতিক প্রচলন। সম্প্রতি পহেলা বৈশাখকে পুঁজি করে উপকূলে বিভিন্ন স্থানে চলছে জাটকা নিধন। জাটকা নিধন নিষিদ্ধ জেনেও নিছক বেশি দাম পাওয়ার লোভে পড়েই এহেন অপরাধে লিপ্ত হচ্ছে। বৈশাখ উদযাপনের হুজুগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইলিশের দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে ইলিশের দাম। এ অবস্থায় বৈশাখেই রুটিন করে ব্যাপকভাবে ইলিশ খেতে গিয়ে সমাজের দরিদ্র, অভাবী, নিম্নআয়ের এমনকি নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সাথে উপহাস করা হয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্পের জাটকা নিধন প্রতিরোধ কার্যক্রম ২০১৫-১৬-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত জানুয়ারি মাসে ২৩টি জেলা থেকে ১৮ দশমিক ৬৮১৫ মেট্রিক টন জাটকা ইলিশ আটক করা হয়। এতে জরিমানা করা হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকারও বেশি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাটকা ইলিশ আটক করা হয়েছে ৬৬ দশমিক ৩৫৩ মেট্রিক টন। জরিমানা করা হয়েছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। গত মার্চে জাটকা উদ্ধার করা হয়েছে ৮৯ দশমিক ৪২৪ মেট্রিক টন এবং জরিমানা করা হয়েছে ১০ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রভাতী দেব জানান, বাংলা নববর্ষের এ সময়টা হচ্ছে রূপালি ইলিশের প্রজনন মওসুম। এ সময় পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে গিয়ে ইলিশ খাওয়া মানে হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা।
জাটকা গেল এতিমখানায়
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে মাছের জন্য খ্যাত ফিশারিঘাটে গতকাল ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে প্রায় আড়াই কোটি মূল্যের সাড়ে ৯ মেট্রিক টন বিক্রয় নিষিদ্ধ জাটকা উদ্ধার করেছে জেলা প্রশাসন। একই সাথে জাটকা বিক্রির অপরাধে ৩ ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-সহ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভোর ৬টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিলুর রহমান মুক্ত।
চট্টগ্রাম র‌্যাবের এএসপি মিফতানুর রহমান, এসপি আমীরুল্লাহ, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রভাতী দেব, মৎস্য জরিপ কর্মকর্তা মো: কামাল উদ্দিন চৌধুরী, সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান ও ফিল্ড অফিসার জাহেদ আহমদ ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সহযোগিতা করেন। জাটকাগুলো উদ্ধারের পর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এনে বিভিন্ন এতিমখানায় বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট র‌্যাব ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে গতকাল ভোরে নগরীর পাইকারি মাছের বাজার ফিশারিঘাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় ফিশারিঘাটের ৯টি কোল্ডস্টোরেজ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের সাড়ে ৯ মেট্রিক টন বিক্রয় নিষিদ্ধ জাটকা উদ্ধার করে। একই সাথে মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন ১৯৫০-এর ৪ ধারার অপরাধে অসাধু জাটকা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাবিবকে দেড় বছর, নয়ন দাশকে ১ বছর ও মোহাম্মদ সাহেদুজ্জামানকে ১ মাসের কারাদ- প্রদান করা হয়।
নগরীর মাঝিরঘাট বাংলাবাজার এলাকা থেকে পারটেক্স গ্রুপের একটি জাহাজ আটক করে ১৫ কেজি জাটকা জব্দ করে কোস্টগার্ড। এ সময় পারটেক্স গ্রুপের মো: সেলিমকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, অভিযানে ফিশারিঘাটের ৯টি কোল্ডস্টোরেজ থেকে জাটকার ৩৩৭টি ব্লক উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিটি ব্লকে আনুমানিক ২৮ কেজি করে প্রায় সাড়ে ৯ মেট্রিক টন জাটকা উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত জাটকার মূল্য আড়াই কোটি টাকা।
এদিকে ফিশারিঘাট থেকে উদ্ধারকৃত সাড়ে ৯ মেট্রিক জাটকা ইলিশ দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে নিয়ে আসার পর জাটকা বিভিন্ন এতিমখানায় বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন