ইনকিলাব ডেস্ক : মিসরের সবচেয়ে পুরণো ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় সউদী আরবের বাদশাহ সালমানকে আরব ও মুসলমানদের প্রতি তার অনুপম সেবার জন্য তাকে সন্মানজনক ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত করেছে। লোহিত সাগরে দুইটি দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ রিয়াদের কাছে হস্তান্তরে কায়রোর অভিপ্রায়ের বিরোধিতা মিসরে বাদশাহ সালমানের ৫ দিনের সফরের চূড়ান্ত অনুষ্ঠানে কালোছায়া ফেলে।
কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় তার প্রশংসাসূচক মানপত্রে বলেছে, বাদশাহ সালমান এক বৈশ্বিক ও কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। আরব ও আন্তর্জাতিক অঙ্গণে তার প্রভাব ব্যাপক। মানপত্রে মিসর ও এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সমর্থনের কথা প্রশংসার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।
গত বছরের জানুয়ারিতে সিংহাসনে আরোহণকারী বাদশাহ সালমান মিসরের পার্লামেন্টে ভাষণ দেয়ার একদিন পর সোমবার এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সউদী ও মিসর সরকার এক ডজনের বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকও সাক্ষর করেছে। এসব চুক্তির আওতায় সউদী আরব মিসরে সাহায্য ও বিনিয়োগে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করবে।
এর একটি চুক্তিতে আকাবা উপসাগরের মুখে তিরান ও সানাফির দ্বীপ দুটির নিয়ন্ত্রণ সউদী আরবের কাছে হস্তান্তরে মিসরের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা হয়েছে। এই চুক্তির বিরোধিতাকারীরা সোচ্চার হতে সোসাল মিডিয়াকে বেছে নিয়েছে, তারা বলছে, এটা সাহায্যের বিনিময়ে নিজেকে বিক্রি করে দেয়ার শামিল।
এসব অভিযোগের পাল্টা অনেক জবাব মিসর সরকারের কাছে রয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ১৯৫০ সালে দ্বীপগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করতে রিয়াদই মিসরকে অনুরোধ করেছিল। ইসরাইলি হামলার আশঙ্কায় রিয়াদ কায়রোকে এই অনুরোধ করেছিল। কর্মকর্তারা কয়েক দশকের পুরণো কূটনৈতিক চিঠিপত্রের উদ্ধৃতি দিয়েছেন যাতে দেখানো হয়েছে যে মিসর দ্বীপগুলোর উপর সউদী মালিকানা স্বীকার করে।
মিসরের শীর্ষ স্থানীয় সংবাদপত্র আল-আহরাম সোমবার তার সম্পাদকীয়তে বলেছে যে মিসর কোন অবস্থাতেই তার ভূখ-ের এক ইঞ্চি জমিও সমর্পণ করেনি। তবে সকল দলিলপত্র যখন রিয়াদের মালিকানা প্রমাণ করছে তখন নিজস্ব ভূখ-ের উপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণে আমাদের বন্ধুদের অধিকার অস্বীকার করা হবে খুবই অযৌক্তিক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমেদ আবু জেইদ বলেন, কায়রো কখনোই দ্বীপ দুটির উপর সার্বভৌমত্ব দাবি করেনি। রোববার দিনের শেষে এক টিভি সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, দ্বীপ দুটিতে মিসরের উপস্থিতির অর্থ এই নয় যে তাদের উপর আমাদের সার্বভৌম অধিকার রয়েছে। দ্বীপ দুটি সউদীকে ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ মিসরের বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
আকাবা উপসাগরের প্রবেশমুখে গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দ্বীপদুটি থেকে ইসরাইলের ইলাত ও জর্দানের আকাবা বন্দরে প্রবেশ কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দুটির মধ্যে তিরানের অবস্থান মিসর উপকূলের সবচেয়ে কাছে। এটা মিসরের শার্ম আল শেখের লোহিত সাগর অবকাশ কেন্দ্র থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইল মিসরের কাছ থেকে দ্বীপগুলো দখল করে নেয়। তবে ১৯৭৯ সালে দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত এক শান্তি চুক্তির আওতায় সেগুলো মিসরের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মিসর দ্বীপগুলোতে সামরিকবাহিনী মোতায়েন করতে পারেনা এবং তিরান ও মিসরের সিনাই উপকূলের মাঝামাঝি এই সংকীর্ণ জাহাজ চলাচল পথে অবাধ নৌচলাচল নিশ্চিত করতে কায়রো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পেছনে অন্যতম কারণ ছিল এই নৌপথটি বন্ধ করে দেয়ার মিসরের জাতীয়তাবাদী প্রেসিডেন্ট জামাল আবদেল নাসেরের সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে লোহিত সাগরে ইসরাইলের প্রবেশের অধিকার অস্বীকার করা হয়েছিল। অনেকেই মনে করেন ৬৭ সালের যুদ্ধের পেছনে এটা ছিল বড় কারণ।
ইসরাইল মিসরের কাছে তিরান দ্বীপ হস্তান্তর করার পর একে একটি প্রাকৃতিক আশ্রিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তারপর থেকে এটি সমুদ্রে ডাইভিংয়ের একটি জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠে।
সউদী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদেল আল জুবেইর মিসরের পত্রিকা সম্পাদকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সউদী আরব এ দুটি দ্বীপ নিয়ে মিসরের দেয়া সকল আইনগত ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারের প্রতি সন্মান প্রদর্শন করবে।
ইসরাইলের সঙ্গে সউদী আরবের কোন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং ইসরাইলীদের প্রতি রিয়াদের অঙ্গীকার কিভাবে রক্ষা করা হবে তাৎক্ষণিকভাবে তা পরিস্কার নয়। ইসরাইলী পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় মিসর-সউদী চুক্তি সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেনি। Ñসূত্র : নিউজ রিপাবলিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন