ইনকিলাব ডেস্ক : কাবুল সরকারের বিরুদ্ধে বসন্তকালীন অভিযান শুরু করেছে আফগান তালেবান। মিডিয়ার কাছে গতকাল ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভোর ৫টা থেকে এ অভিযান শুরু হয়েছে। মৃত তালেবান প্রধান মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের সম্মানে বসন্তকালের এ অভিযানের নাম দেয়া হয়েছে ‘অপারেশন ওমরী’। বিবৃতিতে বলা হয়, আমেরিকান হানাদারদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা এক পবিত্র দায়িত্ব। খবর নিউজউইক ও এপি।
তালেবানের বিবৃতিতে বলা হয়, এ অভিযানের মধ্যে রয়েছে শত্রুদের মনোবল বিনষ্ট করার লক্ষ্যে আত্মঘাতী হামলা, হত্যা ও অন্যান্য কৌশল।
তালেবান বলেছে, তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হবে যাতে আমাদের জনগণ নিরাপদ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। উল্লেখ্য, তালেবান পল্লী অঞ্চলের কিছু জেলা নিয়ন্ত্রণ করছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, তালেবান বেসামরিক লোকজন হত্যা কিংবা বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস না করার চেষ্টা করবে। পাশাপাশি শত্রুদের মধ্যে থাকা স্বদেশীদের সাথে সংলাপ চালানো হবে যাতে তারা তাদের পক্ষে যোগ দেয়।
জাতিসংঘের হিসাব মতে, ২০১৫ সালে লড়াই ও বোমা হামলায় ১১ হাজার বেসামরিক আফগান নিহত বা আহত হয়। ন্যাটো কমান্ডাররা মনে করেন যে, তালেবান দেশের ৬ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, তবে এক-তৃতীয়াংশ এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
তালেবান প্রধান মোল্লা ওমর ২০১৩ সালে ইন্তেকাল করেন। কিন্তু দু’বছর সে খবর গোপন রাখার পর গত বছর তা প্রকাশ করা হয়। তারপর থেকে তালেবানের মধ্যে শুরু হয় অভ্যন্তরীণ লড়াই। শেষ পর্যন্ত মোল্লা ওমরের ডেপুটি মোল্লা আখতার মনসুর তালেবান প্রধান নির্বাচিত হন। তবে অনেক প্রভাবশালী কমান্ডারই এ নির্বাচনে কারচুপি ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে তাকে মানতে অস্বীকৃতি জানান। তবে এ অন্তর্বিরোধের কারণে তালেবানদের হামলার ওপর কোনো প্রভাব পড়েনি।
মোল্লা মনসুরের নেতৃত্বে তালেবান ইতোমধ্যে কিছু বিজয় অর্জন করার ফলে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বিভিন্ন পদ ও অর্থ দিয়ে বিদ্রোহী কমান্ডারদের অনেককেই পক্ষে আনতে সক্ষম হয়েছেন। এভাবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মনসুর তার ক্ষমতা সংহত করেছেন।
এদিকে কাবুল সরকার তালেবানের সাথে শান্তি আলোচনা শুরুর জন্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও তালেবানের ওপর কিছুটা প্রভাব থাকা পাকিস্তানের সাথে কাজ করছে। তবে এ বছরের গোড়ায় কোনো আলোচনায় অংশ নেয়ার বিষয়টি তালেবান প্রত্যাখ্যান করে।
সদ্য সমাপ্ত শীতে বরফপাত ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে আফগানিস্তানের অধিকাংশ এলাকায় তালেবান হামলা প্রায় বন্ধ ছিল। তবে দক্ষিণের উষ্ণ এলাকায় তাদের তৎপরতা বন্ধ হয়নি। এদিকে হেলমান্দসহ দক্ষিণের প্রদেশগুলোতে আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পপি ফসল সংগ্রহের কাজ শুরু হবে। হেলমান্দের পপি ফসল থেকে বিশ্বের অধিকাংশ হেরোইন উৎপাদিত হয় যার মূল্য প্রায় ৩শ’ কোটি ডলার। তালেবান এ অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে বলে আফগান কর্মকর্তারা জানান।
হেলমান্দের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, তালেবান প্রদেশের অর্ধেকেরও বেশি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রদেশের সাবেক গভর্নর আবদুল জান রসুলবার বলেন, উপযুক্ত নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা না হলে তালেবান আরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেবে।
গত বছর হেলমান্দের অবনতিশীল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সেখানে ৮শ’ মার্কিন সৈন্যের একটি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন