শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অনুমোদন ছাড়াই হানিফ ফ্লাইওভারের নকশা পরিবর্তন

ডিএসসিসি মেয়র ও প্রকল্প পরিচালক জানেন না কিছুই

প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : যাত্রীবাহী বাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা ও সিঁড়ি তৈরির মাধ্যমে হানিফ ফ্লাইওভারের মূল নকশার পরিবর্তন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে পিএসসিসির অনুমোদনও নেয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এ কাজটি করে পিপিপি এবং পিএসসিসির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনও কিছুই জানে না। সিটি কর্পোরেশনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নূরুল আমীন বলেছেন, হানিফ ফ্লাইওভারের দায় দায়িত্ব নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অরিয়ন গ্রুপের। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে নামমাত্র একজন প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা আছে। যা কিছু করার অরিয়নই করছে। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনও বলেছেন, ফ্লাইওভারের পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ফ্লাইওভার তৈরির উদ্দেশ্যই হলো যানবাহনকে দ্রুতগতির সাথে পারাপার করা। এজন্য ফ্লাইওভারের উপরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারে না। গণপরিবহনের যাত্রীরা থাকবে ফ্লাইওভারের নিচে। কিন্তু আমাদের দেশে এটা মানা হচ্ছে না। এখানে ফ্লাইওভার তৈরিতেও ভুল করা হচ্ছে। গণপরিবহন ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে চলাচলের কারণে ঝুঁকির বিষয়টা থেকেই যাচ্ছে। দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারের ওপরে বাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা মানেই পথচারীদের উপরে ওঠার সুযোগ করে দেয়া। এজন্য সিঁড়িও লাগানো হয়েছে। এটা খুবই বিপদজনক। নিরাপত্তাকে কমপ্রোমাইজ করে এখানে বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এটা একেবারেই ঠিক হয় নি। তিনি বলেন, নির্মাতা প্রতিষ্ঠান একার সিদ্ধান্তে এরকম পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারে না। এ বিষয়ে অবশ্যই সিটি কর্পোরেশনের মতামত লাগবে। সিটি কর্পোরেশন যদি বিষয়টা না জানে তবে তা দুঃখজনক। এর ফলে ফ্লাইওভারের উপরে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। প্রাণহানী হতেই থাকবে। যার দায় দায়িত্ব সরকারের উপর বর্তাবে।
বাংলাদেশ পরিবশে বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, ফ্লাইওভারের উপরে বাস বা অন্য কোনো গণপরিবহন দাঁড়াবে এটা তো মূল নকশাতে ছিল না। এখন বাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা মানেই মূল নকশার পরিবর্তন। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান একা এটা করতে পারে না। এজন্য অবশ্যই জবাবদিহির ব্যবস্থা আছে। তিনি বলেন, একজন যাত্রী টাকা খরচ করে গাড়ি নিয়ে ফ্লাইওভারে ওঠেন। তিনি কেনো বাড়তি ঝামেলা পোহাবেন। ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলেই যা খুশি তা করতে পারে না। এতোই যদি দরকার ছিল বিষয়টা আগে করা হয়নি কেনো। আবু নাসের বলেন, মূল নকশার মধ্যে বাসের জন্য পৃথক একটা বে তৈরি করা হলে এই সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন যা করা হচ্ছে তাতে রাস্তার উপর একটা বাস দাঁড়ালে আরেকটা গাড়ি চলাচলের জায়গা থাকবে না। এতে করে যানজটের সৃষ্টি হবে। ভোগান্তি বাড়বে। এমনিতেই ফ্লাইওভারে উঠতে এবং নামতে গিয়ে যানজটের কবলে পড়তে হয়।
এদিকে, গতকালও হানিফ ফ্লাইওভারে দেখা গেছে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তার ঠিক উপরে ধোলাইপাড়ের দিক থেকে ওঠার রাস্তার মুখে বাস ও মিনিবাস দাঁড়ানো অব্যাহত রয়েছে। একই স্থানে টেম্পু দাঁড়ানোরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাস দাঁড়ানোর স্থানে আসার জন্য চারিদিক থেকে যাত্রীরা আসছে এলোপাথারিভাবে। ডিভাইডার পেরিয়ে যাত্রীরা আসছেন অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে। যাত্রীদেরকে সহযোগীতার জন্য ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ কয়েকজন কর্মীও নিয়োগ দিয়েছে। তারা লাল পতাকা হাতে যাত্রীদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছে। কখনও কখনও পতাকা উঁচিয়ে গাড়ি থামাতে বাধ্য হচ্ছেন। ফ্লাইওভারের উপরে বাস দাঁড়ানোতে অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। গতকাল কয়েকজনের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তাদের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, এতোদিন ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তায় চলার মতো কোনো পরিবেশ ছিল না। টার্মিনালে গাড়ি প্রবেশ ও বের হওয়ার মতো রাস্তাও বন্ধ ছিল। আমরা মেয়রের কাছে কয়েকবার অনুরোধের পর ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এখন আবার ফ্লাইওভারের উপরেই বাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করে তারা পুরো ফ্লাইওভারকেই কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। গুলিস্তান হকার্স মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যারা চলে তারা তো কারও দয়া নিয়ে চলে না। টাকা দিয়ে আমরা সময় বাঁচাতে, ভোগান্তি থেকে রেহাইয়ের জন্য ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে চলাচল করি। কিন্তু সেই ভোগান্তি আর যানজটই যদি থাকে তবে আমরা কেনো ফ্লাইওভারে উঠবো। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য অরিয়ন গ্রুপের মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের চিফ কোঅর্ডিনেটর আসফাকের মোবাইলে গতকাল কয়েকবার কল করার পরেও তিনি কল রিসিভ করেন নি। এরপর তার সাথে কথা বলার কারন জানিয়ে এসএমএস করার পরেও তিনি কল রিসিভ করেন নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন