স্টাফ রিপোর্টার : চলতি অর্থবছরে বার্ষিক দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হওয়ার সরকারি দাবি নাকচ করে দিয়েছে বিএনপি। ক্ষমতাসীনরা টিকে থাকার জন্য চমক ও মিথ্যা পরিসংখ্যান দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে বলে মনে করে বিএনপি। একই সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ পরিসংখ্যানের চমকে জনগণকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের দাবি নাকচ করে এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের জিডিপির ৭ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি প্রবৃদ্ধি দেশবাসীর জন্য একটি সুসংবাদ হতে পারত। কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, দেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক চালকগুলো সে রকম আশাবাদ সৃষ্টি করছে না। তাই ক্ষমতাসীনরা টিকে থাকার জন্য মিথ্যা পরিসংখ্যান দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) হবে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। অথচ বিশ্বব্যাংক ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে। অর্থনৈতিক কর্মকা-ের বাস্তবতার আলোকে সরকারের প্রাক্কলন এই দুই সংস্থার তুলনায় অনেক বেশি। সঙ্গতভাবেই সরকার-নির্ধারিত প্রবৃদ্ধি হার নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
বিএনপি দাবি করেছে, পরিসংখ্যান ব্যুরো তাড়াহুড়ো করে এই হিসাব প্রকাশ করেছে। অন্যান্য বছর নয় মাসের (জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত) তিন প্রান্তিকের পূর্ণাঙ্গ হিসাব পেয়েই জিডিপির প্রাক্কলন করা হয়। সব হিসাব পাওয়া যায় এপ্রিলের শেষে। এবার তাড়াহুড়ো করে প্রাক্কলন প্রকাশ উদ্দেশ্যমূলক। সরকার পরিসংখ্যান ব্যুরোকে নির্দেশনা দিয়ে বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করতে চাপের মধ্যে ফেলেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার দাবি করেছে, এবারই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ঘরে যাবে। এ দাবি সঠিক নয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সরকারের শেষ সময়ে, অর্থাৎ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৬-০৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। ওই সময় জিডিপির হিসাবে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি, পোনা মাছ, চাষের মাছ, মিনারেল ওয়াটার, ইন্টারনেট ক্যাবল সেবাসহ অনেকগুলো অর্থনৈতিক কর্মকা- অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সেগুলো ২০০৯ সালে পরিবর্তিত ভিত্তি বছরের নিরিখে জিডিপি প্রাক্কলনে যোগ হয়। ২০০৬-০৭ অর্থবছরে এই কর্মকা-গুলো জিডিপি হিসেবে যদি যুক্ত করা হতো, তাহলে প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৬ শতাংশের বেশি হতো।
বিএনপি মনে করে, দেশের গণতন্ত্রহীন অবস্থা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি, লুণ্ঠন চলছে। এ পরিস্থিতিতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি বলতে বোঝায় পণ্য ও সেবার উৎপাদন বৃদ্ধি। এ দু’টির উৎপাদন বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন ধরনের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে। অথচ চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি।
বিএনপি বলেছে, রাজস্ব আদায় বাড়ল না, অথচ প্রবৃদ্ধি বেড়ে গেলÑ এ দুটোর বিপরীতমুখী অবস্থা ৭ শতাংশের অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের দাবিকে প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দেয়।
বিএনপির মতে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ব্যাপক জনগোষ্ঠীর প্রকৃত কল্যাণের সূচক নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জাতীয় আয় নির্ধারণে ভিত্তি বছর পরিবর্তন করার ফলে বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯ সালে মাথাপিছু আয় ১২১ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছিল, যা নেহাতই পরিসংখ্যানগত চমক। বাস্তবে সাধারণ মানুষের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ কারণে পরিসংখ্যানের চমকে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান, পরিসংখ্যানের চমকে বিভ্রান্ত হবেন না। আপনাদের জীবনমানের পরিপ্রেক্ষিতে আপনারাই জানেন, আপনারা কেমন আছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আব্দুুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এম ওসমান ফারুক, ইনাম আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন