শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন মৃত্যুপুরী’

কোটা আন্দোলন

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০২ এএম

দেশে চলমান কোটা আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রদের উপর বর্বর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেছেন, এ ধরনের হামলা ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। সাধারণ ছাত্রদের উপর প্রকাশ্যে হামলা হলেও অধিকাংশ শিক্ষকলের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা।
মানববন্ধনে যোগ দিয়ে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী বলেন, ‘এটা কেমন বিশ্ববিদ্যালয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয় কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও কেউ এর প্রতিবাদ জানাতে পারে না?’ ‘কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকরা নির্লিপ্ত থাকতে পারে না উল্লেখ করে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে , তাই আর ঘরে বসে থাকলে হবে না।’
সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি স্থাপনা সংগ্রামের চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এবং অতীতের সকল আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থী-কর্মচারী রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু বর্তমানে এমন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যেখানে শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের বিচার চাইতে পারে না, কোনো কিছু বলতে পারে না। সাংবাদিকতা বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, কোটা সংস্কারের দাবি একটি যৌক্তিকি আন্দোলন। তাই সরকারের উচিত দ্রæত এই সমস্যার সমাধান করা।’ অধ্যাপক ফাহমিদুল হকও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন। তবে তিনি বক্তব্য রাখেননি। আন্তর্জাতিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফাও এতে অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে ছাত্রদের ওপর হামলা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল করে শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর স¤প্রতি যারা হামলা করেছে তাদের শনাক্তে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। গতকাল একটি অনলাইন গনমাধ্যমকে তিনি এসব কথা জানান। আখতারুজ্জামান বলেন, কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপরে যারা হামলা করেছে তাদের চিহিৃত করতে প্রশাসন কাজ করছে। এখন তদন্ত চলছে। সব কাজ শেষ হয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত চলছে। এই বিচার হবে, যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে না পারে।
সরকার কোটা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে: আনু মুহাম্মদ
জাবি রিপোর্টার জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেছেন, শুরু থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সরকার ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কোটা বিরোধী আন্দোলন বলে আখ্যা দিয়ে সরকার কোটাধারীদের উস্কে দেওয়া অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
গতকাল বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্য মঞ্চের ব্যানারে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল ও সামাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। দেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে ‘ছাত্রলীগের হামলা ও অভিভাবক সমাবেশে পুলিশি হামলা এবং গ্রেফতারের প্রতিবাদে’ এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এসময় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরো বলেন, ‘দেশে বেকারত্ব দূর করা সরকারের দায়িত্ব। তারা সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ছাত্ররা যখন তাদের দাবি নিয়ে এসেছে তখনই সরকার ছাত্রদেরকে বাধা দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সংসদে যেভাবে কোটা পদ্ধতি বাতিলের কথা বলেছে তা ছিলো রাগের বহিঃপ্রকাশ। আন্দোলনকারীরা কখনোই কোটা ব্যবস্থা বাতিলের কথা বলেনি, তাঁরা সংস্কার চেয়েছে। সরকারের উচিত ছিলো গত কয়েক বছরের কোটা সংশ্লিষ্ট তথ্য পর্যালোচনা ও বিচার বিশ্লেষণ করে এই পদ্ধতির একটি যৌক্তিক সংস্কার করা।’
পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তারা শিক্ষার্থীদের উপর যেভাবে হামলা চালাচ্ছে এটি অবিশ্বাস্য। উপর মহলের নির্দেশ ছাড়া এধরনের হামলা চালানো সম্ভব নয়। ইতিহাস বলে, মামলা হামলা করে ছাত্রদের আন্দোলন দমন করা কখনোই সম্ভব হয়নি।’
সমাবেশে জাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চের আহŸায়ক ও সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, ‘জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ নিয়ে বলুক আর যে উদ্দেশ্যেই বলুক কোটা সংস্কার করা প্রয়োজন এটা তার কাছেও পরিস্কার। তাই কোটার নামে এই অবিচার বন্ধ করে অতি দ্রæত সংস্কার করুন।’
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. দিদারের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, সহযোগী অধ্যাপক জহির রায়হান, জাবি সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মো. আশিকুর রহমান, ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মাহাথির মুহাম্মদ, ছাত্র ইউনিয়নের শিক্ষা ও গবেষনা সম্পাদক আতাউল হক চৌধুরী প্রমুখ।
রাবিতে শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের মারধর : পুলিশকে দিলেন প্রক্টর
রাবি রিপোর্টার জানান, দেশব্যাপী চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও (রাবি) সক্রিয় রয়েছে আন্দোলন। তবে আন্দোলনকারীদের দমনে আগ্রাসী ভূমিকায় নেমেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। গতকালও বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনের সামনে শেখ জসিম উদ্দিন বিজয় নামে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগ নেতাদের অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি মূলক কবিতা লেখার জন্য তাকে আটক করে প্রক্টরের হাতে তুলে দেয়া হয়। তবে বিকাল ৫টার দিকে প্রক্টর জসিমকে মতিহার থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয় বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় আরবী বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
তবে জসীম সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, বিভাগের একটা পরীক্ষা ছিল। আমি মেইনগেট দিয়ে আসছিলাম। আসার পথে ছাত্রলীগের নেতারা আমাকে আটকে রেখে মারধর করে। এসময় ছাত্রলীগ সভাপতি গোলম কিবরিয়া মুখে আঘাত করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
এদিকে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে আহত শিক্ষার্থীকে প্রক্টর দপ্তরে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। বিকাল ৫টার দিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। পুশিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। জানতে চাইলে মতিহার থানার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, জসিম থানায় আছে। এখনো কোন মামলা দেয়া হয়নি। মামলা দিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন