উবায়দুর রহমান খান নদভী : প্রতিদিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল গত সন্ধ্যাটিও। দিনের কাজ-কর্ম শেষে মানুষ ঘরে ফিরেছিলেন মাত্র। আকস্মিকভাবে কেঁপে উঠল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি। কমবেশি ৭ রিকটার স্কেলে ভূমিকম্প হয়ে গেল সন্ধ্যা ৭.৫৫ মিনিটে। উৎপত্তিস্থল খুব বেশি দূরে নয়। মাত্র ৪২১ কি.মি. দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের মাওলাইক শহর থেকে ৭৪ কি.মি এর ভেতর। কম্পনটি অনুভূত হয় গোটা উপমহাদেশ জুড়ে। মিয়ানমার, বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত ও পাকিস্তান সর্বত্র। ঢাকায় নগরবাসী যখন নববর্ষের ছুটি উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আকস্মিক এ ভূকম্পনে মানুষের ভেতর আতঙ্ক জন্মায়। মানুষ ঘরবাড়ি, দালানকোঠা ছেড়ে রাস্তা, মাঠ-ঘাট ও উন্মুক্ত জায়গায় নেমে আসে। নারী, শিশু এ বয়স্ক নাগরিকদের কান্নাকাটি ও আর্তনাদ শোনা যায়। ইসলামে বিশ্বাসী সব বয়সের মানুষই কম্পন অনুভবের সময় আল্লাহর নাম নেন। দোয়া দরুদ, তওবা, ইসতেগ্ফার করতে থাকেন। অন্যান্য ধর্মাবলিরাও নিজ নিজ সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেন।
পবিত্র কোরআনের ভাষায়, পৃথিবী, সমুদ্র ও প্রভৃতিতে যত বিপর্যয় সবই মানুষের কৃতকর্মের ফল। এটা মাঝে মাঝে মানুষকে শাস্তিস্বরূপ দেওয়া হয় তাদের অপকর্মের অংশবিশেষের স্বাদ আস্বাদন করানোর জন্য। যেন তারা তওবা করে এবং অন্যায় থেকে ফিরে আসে। (আল-কোরআন) ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, বরফ বৃষ্টি, বন্যা, পানির স্তর নেমে যাওয়া, সিডর, সুনামি ইত্যাদি মানুষকে সতর্ক করার জন্যই আসে।
নেপালে যখন সম্প্রতি ভূমিকম্প হয় তখন সেখানকার হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবন্দ বলেছিলেন, বহু পূর্বেই আমরা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার আধিক্য দেখে সবাইকে সাবধান করেছিলাম। অন্যায় ও পাপাচার বৃদ্ধি পাওয়ায় ভগবান ক্ষুব্ধ হয়ে ভূমিকম্পরূপি শাস্তি পাঠিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে ভারতের মন্দিরে আতশবাজি বিস্ফোরণে শতাধিক ভক্ত নিহত ও প্রায় তিনশ’ গুরুতর আহত হওয়ার পেছনেও ধর্মীয় নেতারা দায়ি করেছেন পাপাচারে মানুষের সীমালঙ্ঘনকে। বছর কয়েক আগে কেদারনাথে প্রবল বন্যায় বহু হতাহতের জন্যে মানুষের পাপ ও সীমালঙ্ঘনকেই দায়ী করা হয়। ইহুদি ও খ্রিষ্ট ধর্মের এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত।
কোরআন ও হাদিসের আলোকে ভূমিকম্প নিয়ে কথা হয় দেশের বিখ্যাত ক’জন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও আলেম-ওলামার সাথে। তাদের তাৎক্ষণিক মূল্যায়ন ছিল এ ভূমিকম্প ইসলামে বিশ্বাসী শতকরা ৯২ জন মানুষের জন্য এক জরুরি সতর্কবাণী।
ভূমিকম্পপ্রবল অঞ্চল বাংলাদেশে, বিশেষত রাজধানী ঢাকায় যে অস্বাভাবিক ঘনবসতি নিয়ে আমরা বাস করছি, এখানে আল্লাহর বিশেষ রহমত ও হেফাজত ছাড়া আমাদের নিরাপদ থাকা অসম্ভব। বেশি মাত্রার একটি ভূমিকম্পই এ দেশ ও রাজধানী ধ্বংস স্তূপে পরিণত হতে পারে। ঢাকা পরিণত হতে পারে মৃত্যুপুরীতে। কেন্দ্রীয় শাহী জামে মসজিদের খতিব প্রফেসর ড. আল্লামা খলিলুর রহমান আজহারি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত আজান ভূমিকম্প থেকে মানুষকে রক্ষা করে। গোনাহ থেকে তওবা জাতিকে গজব থেকে বাঁচায়। পরিবেশ রক্ষার নামে বাংলাদেশে আজানবিরোধী কথা হয় বলে আমরা ভীষণ চিন্তিত। হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, নিরাপত্তার খাতিরে কিছু কর্মসূচি ছাটকাট ও কিছু বিজাতীয় অপসংস্কৃতি রোধ করার কথা শুনে এক শ্রেণীর লোক যেমন যুদ্ধংদেহী হয়ে ওঠেছেন তাদের বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণের জন্য ভূমিকম্প একটি সতর্কবার্তামাত্র। দ্বীন, ধর্ম, আত্মপরিচয় ভুলে যেসব মানুষ শিরক, অপসংস্কৃতি ও যথেচ্ছাচারে
মেতে উঠতে আগ্রহী। তারা ও তাদের অনুসারীরা একটু হলেও সংযত হবে, এটাই দেশবাসী আশা করে। ঢাকা দারুল ইফতা ও ইসলামী গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মাওলানা শাহ্ আবদুল মোমেন বলেন, অন্যায়, দুর্নীতি, পাপাচার ও শিরকভিত্তিক অপসংস্কৃতি যখন বেসামাল পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল তখন প্রকৃতির এ ব্যতিক্রমী রূপ নিঃসন্দেহে একটি সতর্ক সংকেত। আনন্দ উৎসব সুখী সমৃদ্ধি যেন মানুষকে সীমা লঙ্ঘনকারী না বানিয়ে ফেলে সে জন্যেই কিছু নির্দশন আল্লাহ দেখিয়ে থাকেন। যেন মানুষ ধরাকে সরা জ্ঞান না করে। রহমানিয়া খানকাহ ও কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক মুফতি রেজওয়ানুল্লাহ বলেন, নতুন বাংলা বছরের আগমনে মানুষ কিছুটা উদাস হয়ে যায় কি না। আল্লাহ তার বিশ্বাসী বান্দাদের সঞ্চিত ফিরিয়ে দিতেই একটু কাঁপুনি সৃষ্টি করলেন। একটি মাত্র ঝাঁকুনিতেই কোটি কোটি মানুষ রাস্তায় নেমে এলো। মানুষ কিসের বাহাদুরি করে! কী তাদের ক্ষমতা! কোন শক্তির উপর ভিত্তি করে মানুষ নাফরমানি করার দুঃসাহস দেখায়? আল্লাহ প্রকৃতিকে স্থিতি ও স্বাভাবিকত্ব দিয়ে রেখেছেন বলেই তো মানুষ টিকে আছে। একমুহূর্ত যদি আল্লাহ তার সুরক্ষা ও হেফাজতের বিধান তুলে নেন তাহলে চোখের পলকে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এ বিষয় নিয়ে মানুষকে সতর্ক করাই এসব ব্যতিক্রমের উদ্দেশ্য। সকলের উচিত সংযত হওয়া, তওবা করা। আল্লাহর নাফরমানি, শিরক, পাপাচার, অপসংস্কৃতি ও সীমা লঙ্ঘন থেকে দূরে থাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন