শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঊর্ধ্বগামী শিপিং বাণিজ্য

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০১৮, ১২:০৩ এএম

আমদানি-রফতানিতে শিপিং বাণিজ্যের প্রবাহ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে শিপিং বাণিজ্যের সূচক প্রতিবছর রয়েছে ঊর্ধ্বগামী ধারায়। শিপিং খাতে পণ্য পরিবহন ব্যয় সড়ক-মহাসড়ক, রেলপথের তুলনায় অনেকাংশে সুলভ, নিরাপদ এবং সময় সাশ্রয়ী। এয়ার শিপমেন্ট আরও ব্যয়বহুল হওয়ায় রফতানিমুখী তৈরি পোশাকসহ হরেক পণ্যসামগ্রীর পরিবহন মূলত শিপিং-নির্ভর হয়ে উঠেছে। এরফলে শিপিংয়ে পণ্য পরিবহনের চাহিদা বেড়েই চলেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয়, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি-রফতানি বছর বছর বাড়ছে। এরজন্য বাড়তি চাহিদা ও চাপ সামাল দিতে গিয়ে প্রসারমান রয়েছে শিপিং বাণিজ্য। সদ্যবিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কন্টেইনার শিপিং খাতে প্রবৃদ্ধির হার ১২ দশমিক ১৯ শতাংশ। প্রতবছর চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহনের রেকর্ড অতিক্রম করে চলেছে।
তবে শিপিং বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, চাহিদার তুলনায় অবকাঠামো সুবিধা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। আরও পর্যাপ্ত ও সুপরিসর কন্টেইনার টার্মিনাল, ইয়ার্ড-শেডসহ অবকাঠামো এবং কী গ্যান্ট্রি ক্রেন, আরটিজিসহ প্রয়োজনীয় ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের ঘাটতি, বেসরকারি আইসিডিসমূহের (অফডক) কারিগরি দক্ষতার অভাব রয়েছে। সমুদ্রবন্দর এবং কাস্টমসের সমন্বিত যুগোপযোগী পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন প্রয়োজন হলেও তা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। তাছাড়া অভ্যন্তরীণ নৌপথে কন্টেইনার পরিবহন ব্যবস্থা চালু করা হলেও দক্ষতা, ব্যয় সাশ্রয়, সর্বোপরি সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়ের অভাবে থমকে আছে। এসব সমস্যা-সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতিতে আরও ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হবে শিপিং বাণিজ্য। কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে প্রসারিত।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে সমগ্র দেশের শিপিং বাণিজ্যে ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার পরিবহন করা হয়। এ বন্দরে সার্বিক পণ্য পরিবহন ৯২ শতাংশ। প্রধান এই বন্দরভিত্তিক কাস্টমসের মাধ্যমে বার্ষিক রাজস্ব আয় ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এনবিআর-এর এটি একক বৃহৎ উৎস। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ২৮ লাখ ৮ হাজার ৫৫৪ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। যা আগের বছরে ছিল ২৫ লাখ ৩ হাজার ৪৭১ টিইইউএস। মোট পণ্য ওঠানামার পরিমাণ ৯ কোটি ২৯ লাখ ২৩ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন। আগের বছরে ছিল ৭ কোটি ৯৯ লাখ ৮২ হাজার ৫১৯ মেট্রিক টন। কন্টেইনার ও খোলা সাধারণ পণ্য মিলে প্রবৃদ্ধির হার ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পণ্যসামগ্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী সাগর-মহাসাগর, উপসাগর ও উপকূলীয় শিপিং বাণিজ্যের নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। এর পেছনে মূল কারণটি হলো কম জ্বালানি ব্যয়ের মাধ্যমে অধিক পরিমাণে কন্টেইনারবাহী কিংবা খোলা সাধারণ (ব্রেক বাল্ক) পণ্যসামগ্রী অসায়াসে আনা-নেয়া করা যায়। আবার এ ক্ষেত্রে কন্টেইনার বোঝাই পণ্য পরিবহন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে কন্টেইনার শিপিং পরিবহনে গত দশ বছরে গড় প্রবৃদ্ধির হার ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের পানিসীমার আয়তন বৃদ্ধির ফলে শিপিং বাণিজ্যের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। শিপিং বাণিজ্য প্রসারের আরও সুযোগ রয়েছে। তবে বিভিন্নমুখী সহায়ক উদ্যোগ ও সমন্বয়ের অভাবে সুযোগ-সম্ভাবনা আটকে আছে। জ্বালানি তেল, খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, নিত্য ও ভোগ্য পণ্যসামগ্রী অধিক পরিমাণে দেশী-বিদেশী বানিজ্যিক জাহাজবহরে যোগান দেয়ার মাধ্যমে দেশের শত শত কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ সুগম করা সম্ভব। তাছাড়া দেশের ব্যাপক আয়তনের সমুদ্রসীমা বা মেরিটাইম বাউন্ডারি স্বীকৃত হওয়ার ফলে আন্তঃদেশীয়, আন্তঃমহাদেশীয় এবং দেশের অভ্যন্তরে নৌপথেও জাহাজ, ট্যাংকার, ফিডার জাহাজ, কার্গোজাহাজ, কোস্টার, বার্জ, ফেরিসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট ও মাঝারি আকারের নৌযানের বাজার চাহিদা তৈরি হয়েছে। এরফলে জাহাজ নির্মাণ শিল্পখাত বিকশিত হওয়ার বিরাট সুযোগ রয়ে গেছে।
দেশের পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থা বর্তমানে সড়ক-মহাসড়ক নির্ভর একমুখী সীমাবদ্ধতায় আটকে আছে। আমদানি-রফতানিমুখী বিশেষত কৃষি-খামার ও স্থানীয় শিল্পে উৎপাদিত দেশজ পণ্যসামগ্রীর বাজারজাতকরণ সুবিধা প্রসার, নিত্যপণ্য পরিবহনে ব্যয় হ্রাসের জন্য বিকল্প হচ্ছে নদীমাতৃক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-রুটগুলো সচল করে যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থাকে গতিশীল করা। সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে পণ্য পরিবহনে আনুপাতিক খরচ সম্পর্কে পরিবহন বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা যায়, সড়ক মহাসড়ক পথে নিত্য ও ভোগ্যপণ্য, শিল্প কাঁচামাল পরিবহন বাবদ ‘প্রতি মেট্রিক টনে প্রতি কিলোমিটার’ হারে খরচ পড়ে সাড়ে ৪ টাকা থেকে সাড়ে ৬ টাকা। রেলপথে খরচ পড়ে আড়াই টাকা থেকে সাড়ে ৩ টাকা। অথচ নৌপথে পণ্য পরিবহন ব্যয় গড়ে মাত্র এক থেকে দুই টাকা।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের শিপিং বাণিজ্য খাতকে আরও বিকশিত করা হলে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। কর্মসংস্থানের পথ হবে সুগম। প্রতিবেশী দেশগুলো শিপিং বাণিজ্যে অধিক আকৃষ্ট হলে বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধ ও পেটেন্ট সামগ্রী, ভেষজ দ্রব্য, শাড়ী, বস্ত্র ও তৈরিপোশাক, ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক পণ্য, সিরামিক পণ্য, প্লাস্টিকজাত দ্রব্যাদি, আসবাবপত্র, কৃত্রিম অলংকার-গহনা, তথ্য-প্রযুক্তি, আসবাবপত্র, হালকা ও মাঝারি আকৃতির কার্গো কোস্টার নৌযান, হালকা যন্ত্রপাতি, কেবলস, লোহা ও স্টিল সামগ্রী, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য ও বেকার্স খাদ্যদ্রব্য, খেলনা, হরেক সৌখিন পণ্যসামগ্রী এবং সেবা পণ্য রফতানির ক্ষেত্র প্রসারিত হবে। এরজন্য চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামো সুবিধার অভাব, যন্ত্রপাতির ঘাটতিসহ নানামুখী সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে বন্দরকে আরও দক্ষ ও গতিশীল করা প্রয়োজন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোঃ রাজিব পাশা ১৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:৩৮ এএম says : 1
চট্রগ্রাম বন্দর থেকে ভালো হবে আমাদের ফেণীর সোনাগাজিতে বন্দর করলে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন