শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কঠোর নিরাপত্তায় নববর্ষ উদযাপন

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ‘একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই। সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।’ গত বৃহস্পতিবার রাজধানীজুড়ে সৈয়দ শামসুল হকের এ চরণগুলোরই প্রতিচ্ছবি দেখা গেল। বাংলা নববর্ষের এ দিনে পুরো নগরী মেতে ওঠে উৎসবে। ছোট-বড়, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষ সব মানুষের পদচারণায় রাজধানী ওয়ে ওঠে প্রাণোচ্ছল। বৈশাখের প্রথম দিনকে বরণ করতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জীর্ণ পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে শুভ সম্ভাবনার নতুন দিন আনবার প্রত্যয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে রাজধানীবাসী। বৈশাখে নতুন বছরের সূর্যোদয়ের সাথে রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণ শুরু হয়।
রমনায় প্রভাতি অনুষ্ঠান: গত বৃহস্পতিবার বৈশাখের প্রথম প্রহরে আলো ফোটার সাথে সাথে উৎসবে মেতে ওঠে পুরো জাতি। রমনার বটমূলে শিল্পীদের গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন বছরের নতুন সূর্য। শুভ দিনের প্রত্যাশায় উপস্থিত মানুষ গুনগুনিয়ে গেয়ে ওঠে ‘নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে’। স্বাগতম ১৪২৩, সুস্বাগত।
প্রতিবছরের মতো এবারো ছায়ানটে একটি বিশেষ বিষয়ের উপর নিজেদের আয়োজনটি সাজানো হয়। এবার ছায়ানট তাদের আয়োজন সাজিয়েছে ‘মানবতা’র কথা তুলে ধরবার প্রত্যয়ে। মূল প্রতিপাদ্য- ‘শান্তি, মানবতা ও মানুষের অধিকার’। বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সঙ্গীত ও কবিতা পাঠের মধ্যে সম্প্রীতি ও শান্তির বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেন সকলে।
চারুকলার শোভাযাত্রা: ‘মা ও শিশু’কে চেতনায় ধারণ করে “অন্তর মম বিকশিত কর অন্তর তর হে” এই প্রতিপাদ্যকে সামনের রেখে নববর্ষ আবাহনের বর্ণময় আকর্ষণ শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে ভিসির নেতৃত্বে শোভাযাত্রা বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সম্মিলনে শাহবাগ মোড় হয়ে হোটেল রূপসী বাংলা থেকে টিএসসি হয়ে চারুকলায় এসে শোভাযাত্রা শেষ হয়।
সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় সংগীত বিভাগের সংগীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনের কর্মসূচী। এ সংগীতানুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ভিসি। এরপর বাংলা বিভাগ ও বাংলা অ্যালামনাইয়ের উদ্যোগে আয়োজিত কলাভবন প্রাঙ্গণের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানও উদ্বোধন করেন ভিসি। অনুষ্ঠানে এমিরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানসহ বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সকল শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের উদ্যোগে নাট-ম-ল প্রাঙ্গণে বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় পট-গান ও দেশের গান। বিভাগের চেয়ারম্যান সুদীপ চক্রবর্তী এ অনুষ্ঠানের সূচনা করেন।
সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও নন্দন চত্বরের উদ্বোধন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সহিদ আকতার হুসাইন ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সম্পাদক ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ বি এম শহিদুল ইসলাম। ভিসি উদ্বোধন করেন ক্লাব প্রাঙ্গণের দৃষ্টিনন্দন চত্বরের। পরিশেষে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শোভাযাত্রা উদ্বোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা জানান। ভিসি সকলের মঙ্গল কামনা করে বলেন, মা ও শিশুর মঙ্গল কামনার অর্থ হচ্ছে বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনা। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশবাসীর মঙ্গল কামনা করে মানবিকতার শক্তি দিয়ে দেশ ও সমাজের অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশের মঙ্গল কামনা করে বিকশিত অন্তরের প্রত্যাশা জানান ভিসি।
হাজারো কণ্ঠে বর্ষবরণ: পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রহরে এক হাজার শিল্পীর কণ্ঠে বর্ষবরণের গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় হাজারো কণ্ঠে কোটি বাঙালির বর্ষবরণ ১৪২৩ বঙ্গাব্দের মূল অনুষ্ঠানের কার্যক্রম। চ্যানেল আই ও সুরেরধারার এটি দ্বিতীয়বারের মতো যৌথ আয়োজন যা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। এ আয়োজনের সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। অনুষ্ঠানে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন দেশের গুণী ও বরেণ্য শিল্পীবৃন্দ। অনুষ্ঠানস্থলে বৈশাখী উপলক্ষ্যে পিঠা-পুলি, মাটির তৈরি তৈজসপত্র, বেত, কাঁথা, পিতল, পাট-পাটজাত দ্রব্যের নানা জিনিসপত্রসহ রকমারি ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ নানা পণ্যে সুসজ্জিত মেলার আয়োজন করা হয়।
বাংলা একাডেমি: বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ উদযাপনে বাংলা একাডেমি হাতে নেয় দিনব্যাপী নানা ধরনের কর্মসূচি। সকাল ৭টা থেকে নজরুল মঞ্চসহ একাডেমির বিভিন্ন অডিটোরিয়ামে একক বক্তৃতা, কবিতা আবৃত্তি, সংগীত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিকাল চারটায় বিসিক ও বাংলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে ১০ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ‘আসুন গড়ে তুলি সত্য, ন্যায় ও সম্প্রীতির স্বদেশ’ সেøাগান নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজন করে নববর্ষ বরণ ১৪২৩ বঙ্গাব্দ। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে সকাল ৯টায় নববর্ষ বরণের এ আয়োজনে নৃত্য পরিবেশনা, বাউল গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিশু একাডেমি: ‘নতুন আশা-নতুন প্রাণ, নতুন সুরে-নতুন গান, নতুন ঊষার-নতুন আলো, নতুন বছর-কাটুক ভালো’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ বঙ্গাব্দ উদযাপন করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে একাডেমির শহীদ মতিউর মুক্তমঞ্চে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একাডেমি চত্বরে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে অনূর্ধ্ব ১৬ বছরের ছেলে ও মেয়ে শিশুদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিস্কুট দৌড়, মোরগ লড়াই, যেমন খুশি তেমন সাজো। এছাড়াও অভিভাবক, কর্মকর্তাদের জন্যও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ছিল ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ, হাঁড়ি ভাঙা। দুপুর ১২টায় শহীদ মতিউর মুক্তমঞ্চে থাকছে পুরস্কার বিতরণী। এছাড়া একাডেমি চত্বরে ১৪ থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী আনন্দ-উৎসব ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিনই সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে এ মেলা।
শিল্পকলা একাডেমি: বিকাল ৫টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চ অনুষ্ঠিত হয় পহেলা বৈশাখের সাংস্কৃতিক আয়োজন। বর্ষবরণের এ অনুষ্ঠানের প্রথমেই ছিল মো. মনিরুজ্জামানের বাঁশি বাদন। এছাড়াও ছিল একক গান, সমবেত গান, সমবেত নৃত্য, আবৃত্তি, পুঁথি পাঠ, পাঠ ও অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী।
ঋষিজ: গত ৩৩ বছরের ঐতিহ্য নিয়ে শিশুপার্কের প্রবেশদ্বারে নারকেলবিথি চত্বরে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আয়োজন করে ফকির আলমগীরের নেতৃত্বে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। সকাল পৌনে ৮টায় ঋষিজের এই বৈশাখী আয়োজনের উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন।
অন্যান্য:
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে এবং বৈশাখী টেলিভিশন ও ক্লাব ইলেভেন ইনসেপশন বৈশাখী কনসার্টের আয়োজন করে ধানমন্ডির শেখ জামাল মাঠে। এতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গান পরিবেশনে করে জেমস, শিরোনামহীন, ভাইকিংস, ফকির শাহাবুদ্দিন, শফি ম-ল, দিঠি, আশিক, রন্টি দাস, শাহীন, মনিরসহ এই প্রজন্মের জনপ্রিয় শিল্পীবৃন্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে ‘মোজো বৈশাখী কনসার্ট লাইভ’ সকাল আটটা থেকে সরাসরি সম্প্রচার হয় বাংলাভিশনে। এই কনসার্টে গান করেন জেমস, ফিডব্যাক, শিরোনামহীন, হৃদয় খান, মিলা, চিরকুট, ইনসাইড ইউ। মাছরাঙা টেলিভিশনের আয়োজনে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় ‘মাছরাঙার কনসার্ট’। কনসার্টে গান করেন এলআরবি, ফিডব্যাক ও দলছুট। আরও থাকবে বাউল এক্সপ্রেসের গান।
পয়লা বৈশাখে বনানী গুলশানের বিভিন্ন ফুডকোর্টের পাশাপাশি হোটেল সোনারগাঁও, রেডিসন, ওয়েস্টিন, ঢাকা রিজেন্সিসহ হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোর উদ্যোগেও উদযাপিত হয় নতুন বছরের উৎসব। এ ছাড়া ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, ধানমন্ডি ক্লাব, উত্তরা ক্লাবের উদ্যোগে পয়লা বৈশাখ উদযাপিত হয়ে। ঢাকার অদূরে থিমপার্কগুলোতেও করা হয় নানা বৈশাখী আয়োজন।
এছাড়াও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটসমূহও নানা আয়োজনে বৈশাখ বরণ করে। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় জাদুঘর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।
কঠোর নিরাপত্তা: এবার বর্ষবরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব সদস্যরা আকাশ পথেও নজরদারি রাখেন। যে কোন অবস্থার জন্য মেডিকেল টিম ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদেরও প্রস্তুত রাখা হয়। জনসমাগম এলাকাগুলো রাখা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সেন্ট্রাল মাইকের আওতায়।
পয়লা বৈশাখ উদযাপনে যেখানেই ভিড়, সেখানেই নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলে পুলিশ। ভিড়ের স্থানগুলো চিহ্নিত করে নিরাপত্তার নিশ্চিত করা হয়। ভিড়ের মধ্যে গত বছরের মতো যৌন হয়রানির ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তা এড়ানোর লক্ষ্যেই পুলিশের এ উদ্যোগ। রমনা বটমূল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমন্ডি লেক, হাতিরঝিল, উত্তরা, বনানী ও গুলশান এলাকার যেসব স্থানে কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা হয়েছে সেখানে পুলিশ বাড়তি নিরাপত্তা দিয়েছে। বিকাল সাড়ে ৫ টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করে দেয়া হয়েছে।
ডিএমপি জানায়, ঢাকার ৭০টি স্থানে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়। প্রতিটি স্থানে র‌্যাব-পুলিশ একত্রে দায়িত্ব পালন করে। চারুকলার শোভাযাত্রার সঙ্গে স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিক্স টিম দায়িত্বরত ছিল। গুরুত্বপূর্ণ ও অধিক জনসমাগমের স্থানে র‌্যাব-পুলিশের ডগ ও বোম্ব স্কোয়াড দায়িত্ব পালন করেছে। ১৯টি ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। ঢুকতে ও বের হতে পৃথক গেট রাখা হয়। দর্শনার্থীরা আর্চওয়ে গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেন এবং মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশির পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের ভিতরে প্রবেশ করতে দেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, বিএনসিসি, গার্লস গাইড ও চারুকলার সেচ্ছাসেবকরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করেন।
চট্টগ্রামে নানা আয়োজনে বর্ষবরণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নানা আয়োজনে চট্টগ্রামে বর্ষবরণ করা হয়েছে। তবে আগের রাতের ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট আতঙ্কে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে অন্যবারের চেয়ে মানুষের উপস্থিতি ছিল কম। বরাবরের মতো নগরীর নববর্ষের মূল আয়োজন ছিল ডিসি হিল ও সিআরবি শিরিষ তলায়। তিন দশকের বেশি সময়ের ধারাবাহিকতায় ডিসি হিলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে ‘সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ’। তারই ধারাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় বাংলা ১৪২৩ সালকে বরণের আয়োজন শুরু হয় দলীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের মধ্য দিয়ে; একে একে পরিবেশিত হয় দলীয় ও একক গান ও নৃত্য। এবার আট বছরে পা রেখেছে সিআরবি শিরিষ তলার নববর্ষ আয়োজনের অনুষ্ঠান। ‘অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ সেøাগানকে সামনে রেখে এই আয়োজন করে ‘নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম’। সকাল সাড়ে ৭টায় সিআরবি শিরীষ তলায় ‘ভায়োলিনিস্ট চিটাগাং’ নামে একটি সংগঠনের দলীয় বেহালার সুরে শুরু হয় নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আয়োজন। বিকেলে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সাহাবউদ্দিনের বলি খেলা। বলির লড়াইয়ে সেরাবলির খেতাব পান উখিয়ার শাসমু বলি। সোয়া ১০টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ষবরণ উদযাপনের আলাদা আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চবির বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে আশপাশে জমে উঠে বৈশাখী মেলা; লোকগীতি, বাউল গান, আদিবাসী ঐতিহ্য উপস্থাপন, বলী খেলা, সাপখেলা ও পুতুল নাচসহ নানা আয়োজন।
রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহীতে নববর্ষকে বরণ করতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালন করে। ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এসো হে বৈশাখ, এসো এসো... গানের মধ্যে দিয়ে মহানগরীর পদ্মাপাড়ের ফুদকিপাড়ার উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। সেখানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনও আয়োজন ছিল। দিনভর চলে সংগীত পরিবেশন, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, গ্রামীণ খেলা, গম্ভীরা ইত্যাদি। রাজশাহী কলেজ থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রা। রেডক্রিসেন্টর যুব সদস্যরা অভিনয়ের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে গ্রাম বাংলার চিত্র।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাজশাহী কলেজিয়েট গভ. স্কুল থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুল মাঠে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে এ মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ স্কুল প্রাঙ্গণে দুই দিনব্যাপী বৈশাখী, শিশু আনন্দ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যায়, রুয়েট, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থবেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয়েরও আয়োজন ছিল দিনটি ঘিরে।

সিলেট অফিস জানান, নগরজুড়ে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে স্বাগত জানাতে যেন মানুষের ঢল নেমেছে সিলেট নগরীতে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্লু-বার্ড উচ্চ বিদ্যালয়, সুরমার তীর ও শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানমালার। ওইসব স্থানে সকাল থেকে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলা।
বাংলা নববর্ষ ১৪২৩ উদযাপন উপলক্ষে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলা, চিত্রাঙ্কন ও সাঁতার প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল ১০টায় বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগর ভবন প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে চৌহাট্টা পয়েন্ট ঘুরে ভিআইপি সড়ক দিয়ে শারদা স্মৃতি ভবনে গিয়ে শেষ হয়। বর্ষবরণ উপলক্ষে শারদা স্মৃতি ভবন সংলগ্ন সুরমা নদীর তীরে পয়লা বৈশাখ থেকে দেশীয় ঐতিহ্য সামগ্রীর ১৫ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা আয়োজন করা হয়।
খুলনায় বর্ষবরণ
বিশেষ সংবাদদাতা, খুলনা জানান, সারাদেশের ন্যায় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে নিজস্ব সংস্কৃতির আবহে নববর্ষ বরণ করলো খুলনাবাসীও। বর্ণিল আয়োজন আর প্রাণের উচ্ছ্বাসে বর্ষবরণের উৎসব-আনন্দে উদ্বেল মানুষের ঢল নামে খুলনায়।
গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহানগরীর শিববাড়ি মোড় থেকে মঙ্গলশোভা যাত্রা বের করা হয়। যা হাদিস পার্ক গিয়ে শেষ হয়। সাড়ে ৭টায় জেলা প্রশাসকের বাংলোর বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পান্থা উৎসব। এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আবদুস সামাদ, জেলা প্রসাশক নাজমাল আহসানসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা। পরে নগরীর শান্তিধাম মোড়ে জাতিসংঘ শিশু পার্কে ‘বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্য ও ইতিহাস’ নিয়ে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, খুলনা সিটি কর্পোরেশন, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, খুলনা শিশু একাডেমি, খুলনা শিপইয়ার্ড, উদীচী, রূপান্তর, কলাকেন্দ্র দৌলতপুর, খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জোহরা খাতুন শিশু বিদ্যানিকেতন, চলন্তিকা যুব সোসাইটি, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ ও সোনাডাঙ্গা সমাজ কল্যাণ পরিষদ, মাগুরা জেলা কল্যাণ সমিতি, আব্বাসউদ্দীন একাডেমী, খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমী, খুলনা সাংস্কৃতিক উন্নয়ন পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে নতুন বর্ষকে বরণ করে। নববর্ষ উপলক্ষে জাতিসংঘ ও খালিশপুর শিশু পার্কে চলছে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। খুলনার কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
যশোরে নববর্ষ
যশোর ব্যুরো জানায় ঃ নববর্ষের প্রথম প্রহরে যশোরের পৌরপার্কে বসেছিল মিলনমেলা। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব শ্রেণী পেশার মানুষ সমাবেত হয় এখানে। শহরের সব পথ যেন শেষ হয় পৌরপার্কে গিয়ে। উৎসব-আনন্দে-মাতোয়ারা পার্ক অঙ্গন। একে একে উদীচী, চাঁদেরহাট, নন্দন, বিবর্তন, সুরধনিসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন আহমেদ বাংলোতে পান্তা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। নববর্ষেও পরদিন পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান পান্তা উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন, নববর্ষের দিন পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যস্ত থাকার কারণে। যশোরে এবার প্রতিবছরের মত তিন’শ জনের অধিক শিল্পী অংশগ্রহণ করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে।
এদিকে, নববর্ষ উপলক্ষে যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর বিকেলের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। অনুষ্ঠান বন্ধের প্রতিবাদে শহরে মিছিল করা হয়। বন্ধ হয়ে যাওয়া অনুষ্ঠান গুলোর সংগঠকরা শহরের টাউন হল ময়দানে জড়ো হয়ে সম্মিলিত অনুষ্ঠান করে। বিকাল পাঁচটার মধ্যে খোলা স্থানে নববর্ষের সব অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে বলে ঘোষণা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত মানবে না বলে যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো আগে থেকেই ঘোষণা দেয়।
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুমিল্লায় বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে পার্কসংলগ্ন স্টেশন ক্লাবে। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বৃহস্পতিবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কুমিল্লা স্টেশন ক্লাবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ সুরসংগীতের মধ্যদিয়ে বর্ষবরণের সূচনা ঘটে। একই স্থানে সকাল সাড়ে ৬টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি শিল্পীদের পরিবেশনায় চলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এর আগে বর্ষবরণ উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন কুমিল্লা সদর আসনের এমপি হাজী আকম বাহাউদ্দিন বাহার।
কুমিল্লা ষ্টেশন ক্লাবে আয়োজিত বর্ষবরণ আলোচনায় কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন বক্তব্য রাখেন। অপরদিকে নগরীর ধর্মসাগর পাড়ের মহিলা মহাবিদ্যালয় মাঠে দুই দিনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু করে কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জোট। পহেলা বৈশাখের সকালে নগরীর প্রতিটি রাস্তাঘাট লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। কুমিল্লা টাউনহল মাঠে নানা পণ্য-পসরা ঘিরে জমে উঠে ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পৃথক পৃথক কর্মসূচী পালিত হয়েছে।
‘এসো হে বৈশাখ’ গান দিয়ে বরিশালের বিএম স্কুল মাঠে উদীচীর প্রভাতী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাতীয় সংসদ সদস্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি উপাচার্য, বরিশালের জেলা প্রশাসক, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষগণ, মেট্রোপলিটান পুলিশের উপ-কমিশনার সহ উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বরিশাল বিশ্বাবিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও মেলার আয়োজন করা হয়। জেলা প্রশাসনও মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে আয়োজন করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালার। চারুকলা বিদ্যালয় সিটি কলেজ মাঠ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। সিটি কলেজ মাঠে চারুকলা আয়োজিত ২ দিনব্যাপী লোকজ সংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন