শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জীবন বীমা কর্মসূচিতে গড়িমসি কল্যাণ ফান্ডেও শঙ্কা

পোশাক শিল্পে শ্রমিকের নিরাপত্তা

প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি আরো এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার জন্য সম্প্রতি সরকার কেন্দ্রীয়ভাবে একটি শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড গঠন করেছে। তবে যে সংগঠনটি গড়ে তোলা হচ্ছে তা কতটুকু শ্রমিকদের কল্যাণে কার্যকর হবে তা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে শঙ্কা। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কল্যাণ ফান্ডের পুরো টাকাই শ্রমিকদের কল্যাণে সঠিকভাবে ব্যয় করা হবে।
এদিকে দেশে পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেসব আইনি বাধ্যবাধকতা আছে, তাও যথাযথভাবে পরিপালন করে না মালিকপক্ষ, এমন অভিযোগ সব সময়ই রয়েছে। এমনই একটি আইনি বাধ্যবাধকতা হলো শ্রমিকের জীবন বীমা। সরকারের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের হালনাগাদ তথ্য বলছে, ২০ ভাগের মতো পোশাক কারখানায়ই শ্রমিকের এখনও জীবন বীমা কর্মসূচি নেই।
ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের জন্য সরকার গত বছর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এবং শ্রম আইন বিধিমালা ২০১৫-এর আলোকে ‘শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২৭ মার্চ শ্রম ও আইন শাখা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করে।
জানা যায়, এই তহবিলের অর্থ থেকে শ্রমিকরা দুটি ভাগে এই সুবিধা পাবে। একটি থাকবে সুবিধাভোগীদের আপৎকালীন সুবিধা। হঠাৎ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই ফান্ড থেকে টাকা দেওয়া হবে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে কল্যাণ ফান্ড। অসুস্থতাজনিত কারণে কোনো শ্রমিক মারা গেলে এই ফান্ড থেকে টাকা দেওয়া হবে। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা গেলে শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা পাবে তিন লাখ টাকা। কমর্রত অবস্থায় মারা গেলে দেওয়া হবে দুই লাখ টাকা এবং গুরুতর অসুস্থ শ্রমিককে দেওয়া হবে এক লাখ টাকা। এ ছাড়া শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের অর্থ দিয়ে শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তি, হাসপাতাল নির্মাণসহ অন্যান্য সামাজিক কাজেও ব্যয় করা হবে।
শ্রম মন্ত্রণালয় ও বিজিএমইএ সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় তহবিল পরিচালনা বোর্ড হবে ১০ সদস্যের। এতে পদাধিকার বলে সভাপতি থাকবেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক। পদাধিকার বলে সহসভাপতি থাকবেন দুজন। এর একজন হলেন শ্রমসচিব মিকাইল শিপার, অন্যজন বিজিএমইএ সভাপতি মো, সিদ্দিকুর রহমান। আর বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান থাকছেন সদস্য হিসেবে। এ ছাড়া বিজিএমইএর তরফ থেকে আরো দুজনকে সাধারণ সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তারা হলেন মোহাম্মদ নাসির ও সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান এবং শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে থাকবেন অন্য তিন সদস্য। তারা হলেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আখতার, গার্মেন্টস শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বদরুদ্দোজা নিজাম আর ঊর্ধ্বতন আরেক সরকারি কর্মকর্তা থাকবেন পরিচালনা বোর্ডের সদস্যসচিব। বোর্ড গঠনের দিন থেকে পরবর্তী তিন বছর থাকবে এর মেয়াদ।
আইন অনুযায়ী শ্রমমান যাচাইয়ে দেশের কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। এ পরিদর্শন কার্যক্রমের ভিত্তিতেই পোশাক শিল্পের ওপর একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি। ‘তৈরি পোশাক কারখানার কমপ্লায়েন্স ইস্যু বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত সমন্বিত ফরম্যাটে পরিদর্শিত তথ্যের সারসংক্ষেপ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২১ শতাংশ পোশাক কারখানায় শ্রমিকের জীবন বীমা কর্মসূচি নেই।
সূত্র অনুযায়ী, বিজিএমইএর সদস্য ১ হাজার ২৬০টি কারখানায় শ্রমিকের জীবন বীমা কর্মসূচি আছে বলে পরিদর্শনে দেখা গেছে। এ হিসাবে পরিদর্শনকৃত বিজিএমইএর সদস্য কারখানাগুলোর ৯০ শতাংশেরই শ্রমিকের জন্য জীবন বীমা কর্মসূচি আছে। বাকি ১০ শতাংশের বা ১৪০টির মতো কারখানায় এ কর্মসূচি নেই। বিকেএমইএর সদস্য ৩৭৮টিতে জীবন বীমা কর্মসূচি আছে। এ হিসাবে ৭৯ শতাংশ কারখানায় বীমা কর্মসূচি আছে। আর বাকি ২১ শতাংশ বা ৯৭টি কারখানায় জীবন বীমা কর্মসূচি নেই। বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর সদস্য নয় এমন ৫৫ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকের জীবন বীমা কর্মসূচি আছে। এ হিসাবে বাকি ৪৫ শতাংশ বা ২৭৮ কারখানায় শ্রমিকের জীবন বীমা কর্মসূচি নেই।
সংশোধিত শ্রম আইনে কোনো কারখানায় ন্যূনতম ১০০ শ্রমিক থাকলেই সেখানে গোষ্ঠী বীমার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছিল না। বিদ্যমান শ্রম আইন বাস্তবায়নে সম্প্রতি জারি হয়েছে শ্রমবিধি। সেখানে প্রতিষ্ঠানের মুনাফায় শ্রমিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ক্রেতা ও মালিক সমন্বয়ে শতভাগ রফতানিমুখী শিল্প খাতের জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ তহবিলের উৎস হিসেবে রফতানিমুখী শিল্প-প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে প্রাপ্ত অর্থের দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ জমা দিতে হবে। বিধি অনুযায়ী এ তহবিল ব্যবহার করেই শ্রমিকের বীমা থেকে সরে আসছেন মালিকরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কোনো কারখানার মালিক কোনো দুর্ঘটনার কারণে শ্রমিকদের ন্যায্য পরিশোধে তাৎক্ষণিকভাবে অসমর্থ হলেও ওই তহবিল থেকে অর্থ ব্যবহারে এমন সুবিধা রাখা হয়েছে। তবে এই সিদ্ধান্ত নেবে তহবিল পরিচালনা বোর্ড।
নাম প্রকাশ না করা র্শতে আশুলিয়ার একটি তৈরি পোশাক কারখায়নায় কর্মরত শ্রমিক বলেন, বীমা সুবিধা কি এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আজই প্রথম জানলাম আমাদের জন্যও বীমা সুবিধা আছে। শ্রমিকদের পক্ষ যে সব শ্রমিক সংগঠন আছে, এমন সংগঠনের এক নেতার সাথে কথা হলে সে জানান, আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় পর্যন্ত দাবির বিষয়গুলো নিয়ে আন্দোলন পযর্ন্ত করি কিন্তু আমাদের সে সব বিষয়গুলো বেশির ভাগই মালিক পক্ষ মানে না। বীমা সুবিধার বিষয়ে বলেন, অনেক কারখানায় চালু আছে। আবার অনেক কারখানায় চালু নেই। শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের বিষয়ে এখন তিনি জানেন না বলে জানান।
এই বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি মো, সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির মিটিংয়ের পর সিন্ধান্ত নেওয়া হবে এই ফান্ড কখন থেকে কার্যকর হবে। কল্যাণ ফান্ডে শিল্পের মোট রপ্তানির ০.০৩ শতাংশ জমার বিধান রাখা হয়েছে। এক বছরের হিসাবে এ ফান্ডে জমবে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা এই ফান্ডে জমা হবে। কেউ যদি দুর্ঘটনায় মারা যায় তাহলে শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড থেকে তা শ্রমিকদের স্বজনদের দেওয়া হবে। এ টাকা শুধু শ্রমিকদের কল্যাণেই ব্যয় করা হবে। শ্রমিকদের বীমা সুবিধার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের বেশির ভাগ কারখানায় বীমা সুবিধা আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন