স্টাফ রিপোর্টার : ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ। এ দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাণীতে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে দেশবাসী ও প্রবাসে বসবাসরত সকল বাংলাদেশীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, কাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানকে তিনি স্মরণ করেন। তিনি বলেন, তাদের নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার পরিচালিত হয়েছিল। একই সঙ্গে তিনি মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদ, সমর্থক-সংগঠকসহ যারা স্বাধীনতার জন্য অবদান রেখেছেন তাদের স্মরণ করেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, মুজিব নগর সরকারের যোগ্য নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় মুক্তিযুদ্ধ দ্রুত সফল পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাসে ১৭ এপ্রিল এক অবিস্মরণীয় দিন। মুজিবনগর দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক এবং শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের প্রচলিত আদালতে বিচার ও রায় কার্যকর হয়েছে। জেলখানায় নিহত ৪ জাতীয় নেতা হত্যা মামলার বিচার করা হয়েছে। ১৯৭১ সালে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে এবং রায় বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবসের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি দেশবাসীকে বঙ্গবন্ধুর কাঙ্খিত ক্ষুধা, দারিদ্র, নিরক্ষরতামুক্ত, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আগামীদিনের প্রত্যাশিত দিক-নির্দেশনা, সাংবিধানিক ও যৌক্তিক অধিকার রক্ষার জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন করা তৎকালীন সময়ে অপরিহার্য ছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকচক্র নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিতে না চাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এদেশের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা স্বাধীনতার পতাকা হাতে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য শপথ নিয়েছিল। এ কারণেই মুজিবনগর সরকার গঠন করার প্রয়োজনীয়তা তৎকালীন বাংলার জনগণ উপলব্ধি করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তদানীন্তন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে বাংলাদেশের প্রথম সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করে। তৎকালীন সময়ে মেহেরপুর মুক্ত এলাকা হওয়ায় ও ১০ এপ্রিল এমএনএ ও এমপিদের কুষ্টিয়া জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে যুদ্ধ পরিচালনা করা এবং পাক হানাদারবাহিনীকে স্বদেশ ভূমি থেকে বিতাড়িত করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত ও নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি (বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি), তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে অর্থমন্ত্রী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। তৎকালীন কর্নেল এম এ জি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। এ দিন ১০ এপ্রিল গঠিত বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এ সময় কোরআন তেলওয়াতের পর বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও নবগঠিত সরকারকে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের পর বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ও প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম এ জি ওসমানী বক্তব্য রাখেন।
মুজিবনগর সরকার গঠনের প্রাক্কালে যে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছিল তার ৬ষ্ঠ অনুচ্ছেদে লেখা ছিল, ‘বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের আইনানুগ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যথাযথভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের অখ-তা ও মর্যাদা রক্ষার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।’ ঘোষণাপত্রের নবম অনুচ্ছেদে লেখা ছিল, ‘যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপর তাদের কার্যকরী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করিয়াছে, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকার বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন, সেই ম্যান্ডেট মোতাবেক নির্বাচিত প্রতিনিধিরা গণপরিষদ গঠন করে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সমাাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা পবিত্র কর্তব্য। সেহেতু আমরা বাংলাদেশকে রূপায়িত করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি এবং উহা দ্বারা পূর্বেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা অনুমোদন করছি।’
ঘোষণাপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘এতদ্বারা আমরা আরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছি যে, শাসনতন্ত্র প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপ্রধান পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। রাষ্ট্রপ্রধান প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনীসমূহের সর্বাধিনায়ক পদেও অধিষ্ঠিত থাকবেন। রাষ্ট্রপ্রধানই সর্বপ্রকার প্রশাসনিক ও আইন প্রণয়নের ক্ষমতার অধিকারী।
এদিকে, ঐতিহাসিক এ দিনটিকে প্রতিবারের মতো দেশবাসীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবে। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ভোর ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় এবং দেশের সকল জেলা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। এছাড়াও মুজিবনগরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোর ৬টায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ১০টায় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ। সকাল পৌনে ১০টায় গার্ড অব অনার। সকাল সাড়ে ১০টায় মুজিবনগর দিবসের জনসভা শেখ হাসিনা মঞ্চে। এ জনসভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এছাড়াও মেহেরপুরের মুজিবনগরে সকল কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, কেন্দ্রীয় সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান প্রমুখ।
এছাড়াও ১৮ এপ্রিল বিকাল ৩ টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন (খামারবাড়ি, ফার্মগেট) আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ম-লীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন