সঙ্কটের আশঙ্কা নেই
প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় গবাদিপশুর পাশাপাশি বাজারে দেখা যায় বিদেশী গবাদিপশু। কোরবানীর ঈদ বাজারে পশু সঙ্কট নিরসনে পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহ থেকে আমদানী করা হয় বিপুল সংখ্যক পশু। আসন্ন কোরবানীর ঈদকে কেন্দ্র ইতোমধ্যেই টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোর দিয়ে শুরু হয়েছে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি। থেমে নেই দেশীয় খামারীরাও। কক্সবাজারসহ দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন মিনি খামার। পালন করছেন বিপুল সংখ্যক গরু, মহিষ ও ছাগল। কোরবানীর পশুর হাটে পর্যাপ্ত পশু সরবরাহের কথা জানালেন নাইক্ষংছরির স্থানীয় খামারী ওবায়দুল হক ও আব্দুল হাই। তাদের মতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশুই এই অঞ্চলে কোরবানীর পশুর চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। কোরবানীর পশুর হাটে পশু সঙ্কটের কোন আশঙ্কা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাসেই মিয়ানমার থেকে চার হাজার গবাদিপশু আমদানি হয়েছে। এতে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১৯ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা। এবিষয়ে টেকনাফ উপজেলা গবাদিপশু আমদানিকারক সমিতির সভাপতি পৌর প্যানেল মেয়র আব্দুল্লাহ মনির বলেন, বৃষ্টি বাদলে সাগর উত্তাল থাকলে বা এপার ওপার দামের তারতম্য হলে মাঝেমধ্যে পশু আমদানী বন্ধ থাকে। সূত্র মতে, মিয়ানমার পশু আমদানী কম হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে পশুর সঙ্কট পড়ে। কোরবানির ঈদে মিয়ানমারের পশুর উপস্থিতি কমলে দামেরও টানাপড়েন পড়ে যায়। টেকনাফ শুল্ক বিভাগ সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ২৫ মে টেকনাফের সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদীর পার্শ্বে ক্যাডল করিডোর চালু হয়। আমদানী করা প্রতি গরু-মহিষ থেকে ৫শ ও ছাগল ২শ টাকা হারে রাজস্ব আদায় করা হয়। চলতি অর্থবছরের ১১ জুলাই পর্যন্ত দুই হাজার ২৬৭টি গরু, ৭৬৯টি মহিষ আমদানি করে ১৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা রাজস্ব পাওয়া গেছে।
সূত্র আরও জানায়, সদ্য গত অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫৬৭টি পশু আমদানি করে ছয় কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা রাজস্ব পায় এনবিআর। গত বছরে আগস্টের শেষে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে গবাদিপশু আমদানিও থমকে যায়। এরপরও রোহিঙ্গা ইস্যুর প্রভাব কাটিয়ে বিপুলসংখ্যক পশু আমদানি করা সম্ভব হয়। এর আগের ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৯৩৬টি পশু আমদানি করে তিন কোটি ৩৪ লাখ ৫৭ হাজার টাকা রাজস্ব পায় রাষ্ট্রীয় কোষাগার। পশু আমদানি যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পশু আমদানি থেকে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করলেও করিডোরটির অবকাঠামোগত দৈন্যতা লেগেই আসে। আমদানিকৃত গবাদিপশুগুলো খোলা আকাশের নিচে রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে। এছাড়াও পশু রাখার নেই কোনো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই পশু পরিচর্যারও। এখন যে নির্দিষ্ট স্থানটি রয়েছে তার অবস্থা বেহাল। করিডোর ব্যবসায়ী সাবরাং ইউপি সদস্য মুহাম্মদ শরীফ জানান, নানা প্রতিকূল পরিবেশে ঝুঁকি নিয়ে পশু আমদানি হলেও অবকাঠামোর অভাবে পশু রাখা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। করিডোরের এসব সমস্যা চিহ্নিত করে রাজস্ব আদায় ও ছাড়পত্র করিডোরেই করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও অবকাঠামোর উন্নয়ন করা গেলে আমদানি আরও বাড়বে। টেকনাফ শুল্ক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গত অর্থবছরে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি করে ছয় কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়েছে। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশু আমদানি বাড়বে বলে আশা করেন এ কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন