শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হাসনাত করিমকে অব্যাহতি ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

হলি আর্টিজানে হামলা

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৮, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ২৪ জুলাই, ২০১৮

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। চিহ্নিত বাকি ১৩ জন হামলার পর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হওয়ায় মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে বলে জানান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। অন্যদিকে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় নর্থ সাউথ ইউনির্ভার্সিটির শিক্ষক হাসনাত করিমের সম্পৃক্ততা পায়নি পুলিশ। তাকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি করা ওই ঘটনায় জঙ্গিরা ওই রাতে ২০ জনকে হত্যা করে যাদের ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপান, ৩ জন বাংলাদেশী এবং ১ জন ভারতীয় নাগরিক।
গতকাল সোমবার সকালে মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম বলেন, ২১ জনের মধ্যে ১৩ জন বিভিন্ন সময়ে নিহত হয়েছেন, জীবিত আছেন ৮ জন। চার্জশিট গতকাল সোমবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। ২১ জনের মধ্যে ৫জন হলি আর্টিজানে হামলার সময়ই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন। আরও আটজন নিহত হয়েছেন পরবর্তী বিভিন্ন অভিযানে। বাকি জীবিত ৮জনের মধ্যে ছয়জন কারাগারে এবং দুইজন পলাতক রয়েছে। বিভিন্ন অভিযানে নিহত ৮জন আসামি হলেন- তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান। সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে ঘটনাস্থলেই নিহত ৫জন হলেন- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। জীবিত অভিযুক্ত ৮জনের মধ্যে কারাগারে আছেন ৬জন। তারা হলেন- রাজীব গান্ধী, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাতকাটা সোহেল মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাশেদ ইসলাম ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ । এছাড়া পলাতক ২ জন আসামি হচ্ছেন শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন।
হামলার পরদিন সকালে হলি আর্টিজান বেকারি থেকে গ্রেফতার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের নাম অভিযোগপত্রে আসেনি। হলি আর্টিজানে জিম্মিসংকট তৈরির পর হাসনাতকে ওই রেস্তোরাঁর ছাদে জঙ্গিদের সঙ্গে আলাপরত অবস্থায় দেখা যায়, এমন একটি ছবিও দেখা যায় সংবাদমাধ্যমে।
সিটিটিসি’র প্রধান বলেন, চার্জশিটে ২১১ জনের সাক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৪৯ জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া ১৭ জন রয়েছেন। গতকাল সোমবার চার্জশিটের একটি খসড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে চার্জশিট পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেনে, নব্য জেএমবির সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের দৃষ্টি কাড়তেই ওই হামলা চালানো হয়। তবে হামলাকারীদের কারো সঙ্গে ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল-কায়েদা বা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। তারা (জঙ্গিরা) আরও কয়েকটি স্থান রেকি করেছিল। কিন্তু হলি আর্টিসানের নিজস্ব তেমন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার কারণে সেটিকেই বেছে নেয়া হয়। সেইসঙ্গে হলি আর্টিসানকে বেছে নেয়ার পেছনে আরও যেসব কারণ ছিল সেগুলো হলো- পালানোর সুবিধা ও সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশিকে একসঙ্গে পাওয়া। এ ছাড়াও ২৭ রমজান ছিল এ ঘটনার দিন। তারা মনে করেছে, এ জঘন্য কাজে তারা বেশি সওয়াব পাবে। রেহান ইমতিয়াজ এবং খায়রুল ইসলাম পায়েল ওই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিল বলেও জানান মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, হামলার অন্তত ৫/৬ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে যার মূল উদ্দেশ্য ছিলো দেশকে অস্থিতিশীল করা যাতে করে সরকার চাপের মুখে পড়ে। দেশ অর্থনৈতিক ভাবে পর্যুদস্ত হয়, সরকার বিব্রত হয় ও পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে যাতে কাজে লাগানো যায়। এসব উদ্দেশ্যেই জঙ্গিরা এ হামলা করেছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি বিদেশী জঙ্গি সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণের একটা উদ্দেশ্যও ছিলো হামলাকারীদের। তারা ভেবেছিলো বেশি বিদেশী হত্যা করলে আন্তর্জাতিক ভাবে বেশী মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের দৃষ্টি আকর্ষণ হবে। এ জন্যই তারা হলি আর্টিজানকেই বেছে নেয়।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালানো হয়। এতে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে জঙ্গিরা। এর আগে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা। গ্রেনেড হামলায় ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ নিহত হন। পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। অভিযানে অংশ নেয়া পাঁচ জঙ্গির সবাই নিহত হয়। হলি আর্টিজান হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরীকে। ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গিবিরোধী এক অভিযানে দুই সহযোগীসহ নিহত হন তামিম। রায়হান কবির তারেক ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে ৮সহযোগীসহ নিহত হন। সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর মিরপুরের রূপনগরে সিটিটিসি’র জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হন। হামলাকারীদের আশ্রয়দাতা তানভীর কাদেরী ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে এক অভিযানে নিহত হন। হামলার পরিকল্পনায় অন্যতম সহযোগী সরোয়ার জাহান মানিক ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ায় র‌্যাবের অভিযান চলাকালে পালাতে গিয়ে পাঁচ তলা থেকে নিচে পড়ে নিহত হন। নুরুল ইসলাম মারজান ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় সিটিটিসি ইউনিটের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এক সহযোগীসহ নিহত হন। বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সিটিটিসি’র অভিযানে নিহত হন। ঘটনার সময় আহত হন আরও ৩০ জন পুলিশ সদস্য। রাতভর বেশ কয়েকজনকে বেকারির মধ্যে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখে জঙ্গিরা। ২ জুলাই ভোরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে। হামলায় অংশ নেয়া ছয় জঙ্গি অভিযানে নিহত হয়। হামলার পরদিন সকালে হলি আর্টিজান বেকারি থেকে গ্রেফতার নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমের নাম এই অভিযোগপত্রে আসেনি। অভিযানে নিহত হলি আর্টিজানের পাচক সাইফুল ইসলামকে শুরুতে সন্দেহের তালিকায় রাখা হলেও তার সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ তদন্তকারীরা পাননি। হাসনাত করিম বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন