স্টাফ রিপোর্টার : দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। তবে এ মুহূর্তে শৈত্যপ্রবাহ তীব্র হওয়ার কোনো আশঙ্কা করছে না আবহাওয়া অধিদফতর। এ অবস্থা আরও দু’তিন দিন থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
এক দিনের ব্যবধানে দেশে তাপমাত্রা ৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গেছে। শনিবার দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৯ দশমিক ৮ থাকলেও রবিবার (১১ মাঘ) তা হয়েছে ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল (রবিবার) ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এক দিন আগে তা ছিল ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদফতর সুত্রমতে, আপাতত দেশে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ আসার কোনো আশঙ্কা নেই। এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি ও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা আরও দু’তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। দেশজুড়ে এখন যে শীতের তীব্রতা এটা স্বাভাবিক।
শীত বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা। সহায়-সম্বলহীন শহরের পথের মানুষগুলোর দুর্ভোগ সবেচেয়ে বেশি। সকালে ও রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শীতার্ত মানুষদের আগুন পোহাতে দেখা গেছে।
আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত। এ মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
গতকাল সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও সীতাকু- অঞ্চলসহ রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে হলে মাঝারি ও তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির বেশি থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে। তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে হলে তাকে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
এবার শীত এসেছে বেশ দেরি করে। অগ্রহায়ণে শীত না পড়লেও পৌষের শুরুতে সারাদেশে শীত জেঁকে বসে। শৈত্যপ্রবাহও মৃদু থেকে মাঝারি হয়। গত ২৩ ডিসেম্বর (৯ পৌষ) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
এরপর তাপমাত্রা স্থিতিশীল বা আর না কমে বরং উল্টো বাড়তে থাকে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছিই ছিল। গত বুধবার থেকে আবার তাপমাত্রা কমতে থাকে।
রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপ্রমাত্রা রেকর্ড
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে গতকাল সর্বনিম্ন তাপ্রমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপ্রমাত্রা। সর্বোচ্চ তাপ্রমাত্রা ছিল ১৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ ও দুপুর ১২টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৬০ শতাংশ। এর আগে শনিবার তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে মাঝারি শৈতপ্রবাহের প্রভাবে নিদারুণ সমস্যায় প্রড়েছে রাজশাহী অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ। বেড়েছে শীতজনিত রোগবালাই।
শীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ অন্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শনিবার থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে ছিল হাড় কাঁপানো ঠা-া। বিশেষ করে বাতাসের ঝাপটা ছিল অসহনীয়। সকালের দিকে অনেক এলাকায় মানুষকে আগুন পোহাতে দেখা যায়। শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সেই সঙ্গে দেখা মিলছে না সূর্যের।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপ্রাত হয়। এর পরেই নেমে আসে কনকনে শীত। রোববার থেকে শুরু হয়েছে মাঝারি শৈতপ্রবাহ। কয়েকদিন ধরেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ ও সূর্যের মুখ না দেখা যাওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। তবে আজ থেকে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘বাহে জমিত নামলে হাত-পাও অবস হয়া যায়’
কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, চলতি সপ্তাহে দু’দিন গুড়িগুড়ি বৃষ্টির পর বদলে গেছে কুড়িগ্রামের আবহাওয়া। জেলাজুড়ে বইছে প্রচ- হিমেল ঠা-া বাতাস। সারাদিন মেঘ আর সূর্য লুকোচুরি করায় সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গতকাল রোববার সারাদিন দেখা মেলেনি সূর্যের। কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, রোববার কুড়িগ্রাম ও এর আশেপাশে সর্বনি¤œ ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চলতি বোরো মৌসুমে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১ লাখ ৮ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ফলে পিছিয়ে আছে এ অঞ্চলের কৃষক। কিন্তু যারা চাষ করেছেন তারাও আছেন দুশ্চিন্তায়। এরকম বৈরী আবহাওয়া সপ্তাহ খানিক থাকলে ২৮ ধানের গুছি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এসব কৃষক আবাদ কম পাবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরও আশাবাদ ব্যক্ত করছে কৃষি বিভাগের লোকজন। তাদের পরামর্শ কাজ দিবে বলে জানান।
কুড়িগ্রাম সদরের কালিরহাট এলাকার কৃষি শ্রমিক মনোরঞ্জন জানান, বাহে জমিত নামলে হাত-পাও অবস হয়া যায়। এক বিঘা জমি গাড়বের চুক্তি নিছি ৮৬০ টেশাত (টাকা)। কিন্তক কাম তো আগবের নাগছে না। হামার লস, মালিকেরো লস।’ কৃষক অজয় সরকার জানান, ঠা-ার কারণে সবদিক দিয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কদিন আগেও একবিঘা জমি রোপণ করতে ৬৬০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন বিঘা প্রতি ২২০ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। তার ৪ একর জমিতে রোপন করতে এখন বাড়তি আড়াই হাজার টাকা গুণতে হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মকবুল হোসেন জানান, চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৮ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তীব্র শীতে কৃষকদের লেট বীজতলায় পলিথিন ও ছাই ছিটাতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এই অঞ্চলে যেহেতু বিলম্বে বোরো আবাদ করা হয়। এতে কোন ক্ষতি দেখছেন না তিনি। অপরদিকে তীব্র শীতে আগামজাতের আলু ও ধানের চারায় যাতে কোল্ড ইনজুরী রোগ না হয় এজন্য বীজ তলায় সম্পুরক সেচ ও ঔষধ স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নজরুল ইসলাম জানান, শীতজনিত কারণে হাসপাতালে বয়স্ক রুগীর সংখ্যা কমে গেলেও শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ঠান্ডায় মানুষ বাইরে বেরুতে চাইছে না। গতকাল ২ শতাধিক রোগী ভর্তি হলেও আজ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫৯ জনে। বর্তমানে ডায়রিয়া ও শিশুবিভাগে ৫১ জন রোগী আছে। এরমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩৩ জন।
জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. এনামুল হক জানান, প্রচ- শীতে পশু সম্পদের ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন