অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফের তলিয়ে গেছে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম। চরম জনদুর্ভোগে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। উপকূলীয় অনেক জায়গায় বর্ষণের সাথে সামুদ্রিক জোয়ারের চাপে বেড়েছে পানি। দেড় মাস পর ফের ডুবলো বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত বন্দরনগরী। চট্টগ্রামের ‘নাভি’ আগ্রাবাদের নিমজ্জিত সড়কে নৌকাযোগে মানুষজনকে চলাচল করতে দেখা গেছে।
গতকাল (মঙ্গলবার) বিকাল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। আজও (বুধবার) চট্টগ্রাম অঞ্চলের আকাশে ঘনমেঘ-বাদলের ঘনঘটা এবং ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। অতি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, তিন পার্বত্য জেলা ও কক্সবাজারে পাহাড়ধসের সতর্কতার কথাও জানানো হয়। দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ায় বিরাজ করছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া। বাংলাদেশ উপকূলের অদূরে উত্তর বঙ্গোপসাগর সৃষ্ট মৌসুমী নিম্নচাপের সক্রিয় প্রভাবে দেশে বর্ষণের মাত্রা গত ৩/৪ দিন ধরে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। তবে সাগরে সৃষ্ট মেঘ-বৃষ্টিবাহী সেই মৌসুমী নিম্নচাপটি ইতোমধ্যে উড়িষ্যা হয়ে ভারতের স্থলভাগের দিকে দুর্বল হয়ে কেটে গেছে। এদিকে গত সোমবার রাত থেকে থেমে থেমে টানা বর্ষণ ও জোয়ারে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে যায়। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার অনেক এলাকা পাহাড়ি ঢলের তোড়ে তলিয়ে গেছে। দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে অতিবৃষ্টিতে চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে আমদানি পণ্যসামগ্রীর লাইটারিং খালাস, ডেলিভারি পরিবহনে অচলদশা বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরাজ করছে মন্দা। ব্যবসায় আর্থিক লেনদেন হয় স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম। নগরীর অভিজাত বিপণিকেন্দ্রগুলোতে ক্রেতার আনাগোনা তেমন ছিলনা। বর্ষণ, জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলে হাজার হাজার বাড়িঘর দোকানপাট গুদাম আড়ত কাদা-পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। অনেকেরই বাসাবাড়িতে চুলা জ্বলেনি, রান্নাবান্না হয়নি। কাদা-পানি ও আবর্জনা সরাতেই নাকাল হতে হয় দিন-রাত। গতকাল পর্যন্ত মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা বাড়বে।
মুষলধারে বর্ষণ এবং গতকাল ভোরে ও রাতের দুই দফায় সামুদ্রিক জোয়ারে, অনেক জায়গায় পাহাড়ি ঢলের কারণে নগরীর সমগ্র আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা, ব্যাংক ও প্রধান অফিস পাড়া, এক্সেস রোড, হালিশহর, কাট্টলী, সাগরিকা, দামপাড়া ওয়াসা, জিইসি, প্রবর্তক, মেহেদীবাগ, পাঁচলাইশ, শোলকবহর, কাতালগঞ্জ, মুরাদপুর, নাসিরাবাদ, ষোলশহর, চকবাজারসহ চট্টগ্রাম মহানগরীর ব্যাপক এলাকা হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে যায়। সওদাগরী পাড়া চাক্তাই খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ, পাহাড়তলী, আগ্রাবাদ, চকবাজার, বাকলিয়া, বহদ্দারহাটে অসংখ্য গুদাম-আড়ত দোকান-পাটে মজুদ মালামাল পানিতে নষ্ট হয়েছে। সড়ক রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নগরী ও জেলায় বাস-মিনিবাসসহ যানবাহনের সংখ্যা হ্রাস পায়। এতে কর্মমুখী মানুষজন ও শিক্ষার্থীদের অশেষ কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
নগরী ছাড়াও বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থানে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গ্রাম-জনপদ, ফল-ফসল, ক্ষেত-খামার তলিয়ে গেছে। মীরসরাই, সীতাকুন্ড, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারায় অতিবর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে ফল-ফসল, সবজি ক্ষেত-খামারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ধসের সতর্কতা
আগামীকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ধসের সতর্কতায় আবহাওয়াবিদ মোঃ বজলুর রশিদ জানান, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিরিমিটার) থেকে অতিভারী (৮৯ মিলিমিটারের ঊর্ধ্বে) বর্ষণ হতে পারে। অতিভারী বর্ষণের কারণে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে গত মাসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পাহাড়-টিলার পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধভাবে বসবাসরত নিম্ন আয়ের কয়েক হাজার মানুষকে সরিয়ে দেয়া হয়। তবে এখনও নগরী, শহরতলী ও জেলার বিভিন্ন জায়গায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে অনেকেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন