মাদারীপুর জেলা সংবাদদাতা : মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ও হামলা মামলায় পুলিশের ভয়ে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে ৮ গ্রাম। সম্ভ্রম হারানো হয়ে আতংকে আছে গ্রামের মহিলা ও সংখ্যালঘু পরিবার। গত দুইদিনে গ্রেফতার করা হয়েছে ২০ জনকে। গ্রেফতার আতঙ্কে মস্তফাপুর ইউনিয়নের মস্তফাপুর, চাপাতলী, আমবাড়ি, সুচিয়ারভাঙ্গা, খাকছড়া, বালিয়া, পর্বত বাগান, জয়ার, চতুরপাড়া গ্রামে এখন বিরাজ করছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। এলাকার হাট-বাজারে উপস্থিতি কমে গেছে। রাস্তা ঘাট ফাঁকা হয়ে গেছে। অনেকে তাদের স্কুল-কলেজ পড়–য়া মেয়েদের সরিয়ে রাখছে।
গত ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপে ইউপি নির্বাচনে সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী কুদ্দুস মল্লিক ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সোহরাব হোসেন খানের সমর্থকদের মাঝে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী সোহরাব খান আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুদ্দুস মল্লিকের বিরুদ্ধে জাল ভোট দিয়ে জয়ী হওয়ার অভিযোগ এনে কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। এই কোন্দলের জের ধরেই শুক্রবার দুপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে ৫ জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়। সংঘর্ষের সময় ১৫ বাড়িঘর দোকানে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ঘরের মূল্যবান সম্পদ লুট, ভাংচুর এমনকি ঘরের খাদ্য শস্যও লুট করা হয় । হামলার শিকার হন নারী শিশুরাও। পরের দিন শনিবার দ্বিতীয় দফায় আবার দু’গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় গুলিতে মস্তফাপুর ইউপি’র ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার শওকত হোসেন মাতুব্বর ও তার ভাই আজগর আলী মাতুব্বর গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় ১ মহিলাসহ আহত হয় আরো ৮ জন। দুই দিনে দু’গ্রুপের কমপক্ষের শতাধিক বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
মস্তফাপুর, চাপাতলী, আমবাড়ি, সুচিয়ারভাঙ্গা, খাকছড়া, বালিয়া, পর্বত বাগান, জয়ার ও চতুরপাড়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রাস্তাঘাটে লোক চলাচল নেই বললেই চলে। মস্তফাপুর এলাকার বাসিন্দা মেহেদীসহ অনেকে জানান, নির্বাচনী সহিংসতা ও হামলা মামলার ভয়ে পুরুষ মানুষ এলাকা ছাড়া। পুলিশ কাকে কখন গ্রেফতার করে সেই ভয়ে অনেকেই হাটে বাজারে আসছে না। অন্যদিকে যে কোন সময় হামলার ঘটনাও ঘটতে পারে। এ আশংকা থেকেও কেউ কেউ এলাকা থেকে বাইরে চলে গেছেন।
সুচিয়ার ভাঙা গ্রামের গৃহবধূ রাত্রি আক্তার বলেন, ‘রাতে আমরা ভয়ে থাকি কখন কি হয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা বাড়ি ঘরে হামলা ও লুটপাট করছে। আমরা আতংকের মধ্যে আছি। আমাদের বাঁচান।’
মাদারীপুর সদর থানার ওসি জিয়াউল মোর্শেদ জানান, হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনায় ৫টি পৃথক মামলা হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে ২০ জনকে গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করা হয়েছে। তবে কাউকেই হয়রানি করা হয়নি। পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন