ইনকিলাব ডেস্ক : তালিবান যোদ্ধারা কুন্দুজ শহর দখলে প্রচন্ড লড়াই শুরু করেছে। আফগান নিরাপত্তা বাহিনী দাবী করেছে, কুন্দুজে তালিবানদের নতুন এক সিরিজ হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন তালিবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে সরকারী পক্ষে দাবী করা হয়। তালিবান বাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় এই শহরটির দখল পুনরুদ্ধারে তাদের অভিযান জোরালো করায় সর্বশেষ এই লড়াইয়ের কথা জানালো কর্মকর্তারা। তালিবান বাহিনী গত বছর কুন্দুজ শহরটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দখলও করে নিয়েছিল।
কুন্দুজ আক্রমণে কয়েক শো তালিবান যোদ্ধা অংশ নেয়। কাবুলে পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে হঠিয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে তালিবান বাহিনী তাদের বার্ষিক বসন্তকালীন অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়ার কয়েক দিনের মধ্যে তাদের আক্রমন তীব্রতর করে তুলেছে।
গত বছর কিছু সময়ের জন্য তালিবানদের কুন্দুজ দখলে তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তির যেমন প্রমান মেলে তেমনি আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর যুদ্ধ প্রস্তুতির ঘাটতিও প্রতিফলিত হয়ে উঠে। ন্যাটো নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনী ২০১৪ সালে তাদের যুদ্ধাভিযান বন্ধ করার পর থেকে তালিবানদের বিরুদ্ধে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে নিজেকেই লড়াই করতে হচ্ছে।
কুন্দুজ পুলিশ প্রধান কাসিম জানজালবাগ বলেন, গতরাতে তালিবানদের এই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল শহরের উপকন্ঠে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় চারদারা জেলাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। তারা এই লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি চেকপয়েন্টে হামলা চালায়। গত বছরের কুন্দুজ দখল অভিযানে তালিবান যোদ্ধারা এই এলাকাটিকে ঘঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছিল। তিনি বলেন, তারা সরকারী বাহিনীর শক্তি সমাবেশের সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করতে কুন্দুজ শহরের সঙ্গে জেলার সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তালিবান বাহিনী শহরের প্রতিরক্ষা ব্যুহ ভাঙ্গার চেষ্টায় কুন্দুজের পূর্বে চার্ক আবেও একটি বড় হামলা চালায়। তাদের এই হামলাও প্রতিহত করা হয়েছে।
লড়াইয়ে হতাহত সম্পর্কে আফগান কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য যাচাই করার সুযোগ কম। যেখানে কুন্দুজ পুলিশ বলছে, হামলায় ৪৯ তালিবান যোদ্ধা নিহত ও ৬১ জন আহাত হয়েছে সেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে গত ২৪ ঘন্টায় লড়াইয়ে ৩৮ তালিবান যোদ্ধা নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছে। পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ৪ সদস্য নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছে।
কুন্দুজের পাবলিক হেলথ’র ডিরেক্টর সা’দ মুখতার বলেন, গত তিনদিনে শহরের হাসপাতালে ৬টি লাশ ও ১০৭ জন আহতকে আনা হয়েছে। গতবছর সাহায্য গ্রুপ মেডিসিন স্যান্স ফ্রন্টিয়ার পরিচালিত এই হাসপাতালটি মার্কিন বিমান হামলায় তছনছ হয়ে যায়। এই অবস্থায় এত হতাহত নিয়ে হাসপাতালটিকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আফগানিস্তানের পঞ্চম বৃহত্তম এই শহরটির আশেপাশে তুমুল লড়াইয়ে বেসামরিক হতাহত নিয়ে জাতিসংঘের সর্বশেষ রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সেখানে লড়াই জোরদার হয়ে উঠায় শিশুদের প্রাণহানি বা আহত হওয়ার সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।
গত বসন্তকালীন অভিযান শুরুর কয়েক মাসের আক্রমণের পর গত বছর তালিবানদের হাতে কুন্দুজের পতন ঘটেছিল। সেপ্টেম্বরের শেষদিকে শহরের কেন্দ্রস্থল তালিবান যোদ্ধারা দখল করে নেয়ার আগে এসব হামলায় নিরাপত্তা বাহিনী দূর্বল হয়ে পড়ে। অবশ্য দুই সপ্তাহ পর তালিবান যোদ্ধাদের সেখান থেকে হটিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে সরকারী কর্মকর্তারা শহরের বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করতে এ বছর এক বড় ধরণের প্রচেষ্টা চালায়। তারা বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করতে চাচ্ছে গত বছরের শোচনীয় পতনের পুনরাবৃত্তি আর ঘটবে না। শহরটি পতনের পর হাজার হাজার বাসিন্দা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
যদিও আফগানিস্তানে গত শীতের মাসগুলোতেও প্রচন্ড লড়াই অব্যাহত ছিল। এখন গরম এগিয়ে আসার পেক্ষাপটে বরফ পরিস্কার হয়ে উঠায় শুধু দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশ নয় দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যত্রও তালিবানদের আক্রমন বৃদ্ধির আভাস স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সূত্র : রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন