হজ্জ ইসলামী শরীয়তের অন্যতম একটি রুকন। মুসলমানগণ হজ্জ সম্পাদনের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। কেননা সামর্থ্যবান প্রতিটি ব্যক্তির উপরই হজ্জ পালন করা আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ। এই মর্মে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ঘোষনা করেন, আর মানুষের উপর আবশ্যক আল্লাহর উদ্দেশ্যে বায়তুল্লাহ গমন করে হজ্জ সম্পাদন করা। যে ব্যক্তি তৎপ্রতি পথ গমনে সক্ষম এবং যে ব্যক্তি! এই বিধান অস্বীকার করবে (তার জেনে রাখা উচিত) যে, আল্লাহ বিশ্ববাসী হতে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াতঃ ৯৭)। হজ্জ পালনের মাধ্যমে একদিকে যেমন আল্লাহর নির্দেশ মানা হয়, অন্য দিকে মুসলমানদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও এর প্রভাব কোন অংশে কম নয়। সমগ্র দুনিয়ার মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে হজ্জের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। সেই শিক্ষা আমরা পেয়ে থাকি হজ্জের বিধানসম্মত কার্যাবলিতেই। যেমন সাদা-কালো, উচু-নিচু, ধনী-দরিদ্র, রাজা প্রজা, আরব- অনারব সকলে একই প্রকারের পোশাক পরিধান করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সকল প্রকারের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সাম্য ও সম্প্রীতির মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে হজ্জের যাবতীয় কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে। তারা কখনো দু’খ: কাপড় পরিধান করে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং কখনো সম্মিলিতভাবে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে প্রদক্ষিণ করতে দেখা যায়। এই মর্মে পবিত্র কুরআনে এসেছে, নিঃসন্দেহে সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। কাজেই, যে ব্যক্তি বায়তুল্লায় হজ্জ বা ওমরাহ পালন করবে তার জন্য এ দু’টিতে প্রদক্ষিণ করাতে কোন অপরাধ নেই। আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় ভাল কিছু পুণ্যের কাজ করবে, তবে আল্লাহ তায়ালা তা অবগত আছেন এবং তার সে আমলের সঠিক মূল্য দিবেন (সূরা আল বাক্বারাহঃ ১৫৮)।
বস্তুত, হজ্জের এসব কার্যাবলি পরোক্ষভাবে সাম্য ও সম্প্রীতির জয় ঘোষণা করে। এছাড়াও হাজীগণ ভেদাভেদের সকল প্রাচীর ভেঙ্গে আরাফাতের ময়দানে দাড়িয়ে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করে এবং কখনো কুরবানীগাহে পশুর গলায় ছুরি চালিয়ে আল্লাহর সাথে মহব্বতের শপথ গ্রহণ করে। আবার রাজা-প্রজা ,সাদা-কালো, বেঁটে-লম্বা একই সুরে, তালে তাল মিলিয়ে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পর থেকেই ১০ই যিলহজ্জ মিনায় বড় শয়তানকে কংকর মারার পূর্ব পর্যন্ত তাদের এ একই ধ্বনিতে হেরেমের গোটা পরিবেশ গুঞ্জরিত হতে থাকে - লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক লাব্বাইকা লা শারীকালাকা লাব্বাইক ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারীকালাক। অর্থ - হাজির হে আল্লাহ তোমার সমীপে হাজির। আমি হাজির তোমার কোন শরীক নেই । নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, সমস্ত নিয়ামত এবং রাজত্ব তোমারই, তোমার কোন শরীক নেই। প্রকৃত পক্ষে হজ্জের এসব কার্যাবলি আল্লাহর সাথে প্রেমপূর্ণ সম্পর্ক, মন ও চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় এক যুগান্তকারি ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তবে শর্ত এই যে, হজ্জ শুধু মাত্র যেন অনুষ্ঠান পালনের নাম না হয়। আর এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, সমগ্র দুনিয়ার মুসলমানদের ইতিহাসে সর্বকালের সর্ববৃহৎ ইসলামী মহাসম্মেলন একমাত্র হজ্জ। ইসলামের এ বিশিষ্ট রোকন আদায়ের লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ মুসলমান পবিত্র মক্কা নগরীতে জমায়েত হয়। এ সময় সকলে ভাই ভাই হয়ে সম্মিলিতভাবে হজ্জ্বের বিধান সম্মত কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে, ফলশ্রæতিতে আন্তর্জাতিক ভাবে মুসলমানদের মাঝে ঐক্যের পথ আরও সুগম হয়। পবিত্র কুরআনে এসেছে, তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাহার অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হইয়া গেলে। (সূরা আলে- ইমরানঃ ১০৩)।
বর্তমান বিশ্বের শাসন ক্ষমতা মুসলমানদের হাতে নেই। সারা দুনিয়ার মুসলমানগণ আজ নির্যাতিত, নিপীড়িত এবং অবহেলিত। আর এ অবস্থার জন্য মুসলমানদের ঐক্যহীনতাকেই সর্বাগ্রে বিবেচনা করা হয়। বিশ্ব মুসলিমের ওপর যে নির্যাতন চলছে তার অবসানকল্পে মুসলমানদের আন্তর্জাতিক ভাবে ঐক্যের প্রয়োজন। যেহেতু হজ্জের সময় সকলের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান এক ও অভিন্ন, তাদের রয়েছে জীবনযাত্রার মিল, অনুভূতির মিল। এসবের প্রত্যেকটি বিষয়ই মুসলমানদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন