শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ত্রিপুরা থেকে গ্যাস আমদানির প্রস্তাব

প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩২ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : ত্রিপুরা থেকে সত্তর মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান বাংলাদেশের এই প্রস্তাবের জবাবে বলেছেন, দেশে গিয়ে আলোচনা করে জানাবেন। অন্যদিকে, ভারত বাংলাদেশের পাইপলাইনের মাধ্যমে খুলনা ভায়া রংপুর হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশে এলএনজি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে।
গতকাল (সোমবার) রাজধানীর একটি হোটেলে দু’দেশের জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশের পক্ষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং ভারতের পক্ষে দেশটির পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী এতে বক্তব্য রাখেন।
এর আগে চট্টগ্রামে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে একটি এলপিজি টার্মিনাল করার বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বিষয়টি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও ইন্ডিয়ান কোয়েল করপোরেশন (আইওসিএল) যৌথভাবে তদারকি করবে। এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিদ্যুতের পর এবার ভারত-বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে এলপি গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হলো। তবে এখনও এই প্ল্যান্টের আকার বা পরিধি চূড়ান্ত হয়নি।
যৌথ ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ভারত যৌথভাবে নির্মিত এলপিজি প্ল্যান্ট থেকে তাদের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। তিনি বলেন, ভারতের নুমালীগড় থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পার্বতীপুরে জ্বালানি তেল আমদানি বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, এতে দুই দেশই উপকৃত হবে এবং আমরা দুই দেশই উইন উইন সিচুয়েশনে যেতে পারব।
অন্যদিকে ভারতের পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পাইপলাইনের মাধ্যমে খুলনা ভায়া রংপুর হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশে এলএনজি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
নসরুল হামিদ বলেন, মাইনিং সেক্টরে দু’দেশের ছাত্রদের জন্য স্কলারিশিপ প্রদান ও শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা বিনিময় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শিগগিরই গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান সার্ভে পরিচালনা করবে। জরিপ পরিচালনাকারী যানসমূহের স্থলসীমা লঙ্ঘন করার প্রয়োজন পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে ভারতের সহায়তা চাওয়া হলে ভারত সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বলেও তিনি জানান।
জানা গেছে, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারত মহেশখালীতে একটি ল্যান্ডবেজড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতের এমন প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাব দেয়ার জন্য বলা হয়েছে বলে জানান নসরুল হামিদ।
ধমেন্দ্র প্রধান বলেন, জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দু’দেশ আরও এগিয়ে যেতে চাই।
ভারতের পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, মোদিজী ও শেখ হাসিনা দু’জনে সহযোগিতার ক্ষেত্রে উদার। একত্রে কাজ করতে পারলে উভয় দেশ লাভবান হবে।
তৌফিক-ধর্মেন্দ্র বৈঠক
এদিকে, চট্টগ্রামে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার আগে ভারতের পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলটি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রায় এক ঘণ্টার এই বৈঠক শেষে তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, জ্বালানি খাত সমৃদ্ধ করতে দুই দেশ যৌথ উদ্যোগের ভিত্তিতে যেসব প্রকল্প নিয়ে ভাবছে তা কিভাবে আরও এগিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ভারত থেকে পাইপলাইনে ৫ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল আমদানি প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পেট্রোবাংলাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ডিজেলের দাম নির্ধারণ করবে প্রতিনিধিদল।
তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটির কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, কাজ এগুতে থাকলে ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে পাইপলাইন চালু করা সম্ভব হবে।
বৈঠকে চট্টগ্রামে এলপিজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প সম্পর্কে আলোচনা হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, দুই দেশের যৌথ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই কোম্পানি গঠন করা হবে। বাংলাদেশ এবং উত্তর-পূর্ব ভারত (সেভেন সিস্টার) হবে এসব গ্যাসের বাজার।
তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, মহেশখালীতে দু’টি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার। ওই টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর ‘মান’ বিবেচনায় একটি ‘শর্টলিস্ট’ করা হয়েছে, যাতে ভারতের একাধিক কোম্পানি রয়েছে। তিনি বলেন, সংক্ষিপ্ত ওই তালিকা থেকে চূড়ান্ত নিয়োগের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। আলোচনা হয় আগামী শীত মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে নতুন গ্যাস ব্লক অনুসন্ধানের বিষয়েও।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন