শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

হজ্জ পালনে নিষ্পাপ হয় মানুষ

আতিকুর রহমান নগরী | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০১৮, ১২:০৫ এএম

আল্লাহর হুকুম পালনের নামই ইবাদত। ইসলামে হজ্বে¡র গুরুত্ব অত্যধিক। কেননা হজ্ব ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। হজ্বের পালনে মানুষ কেন নিষ্পাপ হয়? কি রয়েছে হজ্বের ইবাদতে। হজ্ব মানুষের অন্তরে এমন কী পরিবর্তন এনে দেয়, যা দ্বারা মানুষ বেগুনাহ মাসুম বান্দায় পরিণত হয়। হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারিতে কেনইবা হজ্বকে সর্বোত্তম ইবাদত বলা হয়েছে। যে বিষয়গুলো জানলে মানুষের মধ্যে আমূল পরিবর্তন আসবে পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

ইহরাম : ইহরাম হজ্বে¡র প্রথম কাজ। ইহরামের সাদা কাপড় পরিহিত মানুষ আপনজন থেকে বিদায় নিয়ে হজ্বের উদ্দেশে বাইতুল্লায় ছুটে যায়। যা মানুষকে পরকালের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। পরকালে মানুষের সম্পদ ও সম্পদের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইহরামের পর তালবিয়া পাঠ ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ পরকালে আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়ার মানসিকতা তৈরি করে। এমনকি হজ্বের সফরে যত বিপদ-আপদ হোক না কেন, হজ্বের কার্য সম্পাদনে একনিষ্ঠভাবে এগিয়ে যায় হাজি। নিজেকে বিরত রাখে দুনিয়াবী সব নিষিদ্ধ কাজ থেকে। যা সে নিয়মিত অহরহ করে কাটাতো তার বিগত দিনের সময়গুলো। এমনকি পারিবারিক জীবনের কিছু অনুসঙ্গও মানুষের জন্য হারাম হয়ে যায় ইহরামের মাধ্যমে। এ মানুষ অন্য এক মানুষে রূপ নেয়। যেখানে বিরাজ করে শান্তি আর শান্তি। লাভ করে প্রভুর ক্ষমা, রহমত ও কল্যাণ।
বাইতুল্লাহ দর্শন : াইতুল্লাহ তথা আল্লাহর ঘর। যা দেখামাত্রই রহমতের ধরা নাজিল হতে থাকে। যেখানে উপস্থিত হয়ে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ না করলে হজ্বই হবে না। আল্লাহর ঘোষণায় এসেছে, বাইতুল্লাহ এমন এক স্থান, যেখানে সমগ্র মানবকূল তথা মুমিনের নিরাপত্তা বিদ্যমান। বাইতুল্লাহকে আল্লাহ তাআলা নিরাপত্তার মূর্তপ্রতীক হিসিবে স্থাপন করেছেন। যে জনমানবহীন প্রান্তরে প্রথম নিরাপত্তা লাভ করেছিল হজ্বরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম ও তাঁর মা বিবি হাজেরা। আখিরাতেও মানুষ আল্লাহর নিরাপত্তা পাবে এ ধারণা লাভ করে বাইতুল্লাহ জিয়ারতের মাধ্যমে। যেখানে নেই কোনো অন্যায় তথা মুনকার কাজ। প্রতিটি মুহূর্তে মুহূর্তে ধ্বনিত হয় ‘লা শারিক আল্লাহ’।
হাজরে আসওয়াদ : াজরে আসওয়াদ শুধুমাত্র একটি পাথর। তাঁকে সম্মানিত করেছেন আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুম্বন করার মাধ্যমে। যার করণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা ও আনুগত্যে হাজিরাও চুম্বন করে এই কালো পাথরটিকে। যা ইত্তেবায়ে সুন্নাহ তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্যের নিদর্শণ। এই শর্তহীন চুম্বনের আনুগত্য মানুষকে ইসলামের আনুগত্যের শিক্ষা দিয়ে সুন্দর ও উত্তম জীবনযাপনের অভ্যস্ত করে।
তাওয়াফ : কয়ামতের ময়দানে মানুষ নাফসি নাফসি করে দৌড়াবে। কেউ কারো খবর রাখবে না, কেউ কারো খবর জানবে না। ঠিক বাইতুল্লায় তাওয়াফও মানুষকে কিয়ামতের সেই পেরেশানির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যে ব্যক্তি হজ্বপূর্ব জীবনে আল্লাহর নির্দেশ পালনে সক্রিয় ছিল না, সে মানুষ বাইতুল্লাহ তাওয়াফে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণায় নিজেকে শানিত করে। মুমিন শুধু তার দেহকেই বাইতুল্লাহ প্রদক্ষিণ করায় না, সে তার অন্তরাত্মাকে একনিষ্ঠভাবেই আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস রেখে প্রদক্ষিণ করায়। কেননা এই তাওয়াফ আল্লাহর হুকুম। একত্ববাদের ঘোষণা দিয়েই মানুষ আল্লাহর হুকুম পালন করে।
সাঈ : মাফা-মারওয়ার সাঈ সমগ্র মুসলিম মিল্লাতকে মহিয়সী রমণী বিবি হাজেরর দৌড়ঝাঁপের মেহনতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। স্মরণ করিয়ে দেয় জান্নাতের রহমতি পানি জমমের ফোয়ারার কথা। আল্লাহর রহমত ও বরকত পেতে হলে কি পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয়, তা অনুমান করা যায়- বিবি হাজেরার সাফা-মারওয়ার পাথুরে পরিবেশের সাত সাঈর ঘটনা। যে পরিশ্রম ও পেরেশানিতে আল্লাহ পাক খুশি হয়ে দান করেছিলেন জমজম পানির রহমতি ফোয়ারা। কোনো কিছু অর্জন করতে হলে তা পরিশ্রমের মাধ্যমেই করতে হয়। আর আল্লাহর রহমত পেতে হলে পরিশ্রম তথা মেহনতের বিকল্প নেই। মানুষকে সীমাহীন পরিশ্রমের মাধ্যমে আল্লাহ প্রাপ্তি শিক্ষা দেয় এই সাফা-মারওয়ার সাঈ। যা মানুষ হজ্বের সময় সাফা-মারওয়ায় সাঈর মাধ্যমে বাস্তবে শিক্ষা নিয়ে থাকে।
আরাফায় অবস্থান : কিয়ামতের ময়দানে মানুষ কত অধীর আগ্রহে থাকবে বিচারের অপেক্ষায়। তার সামান্য চিত্রমাত্র আরাফাহর ময়দানে একত্রিত হওয়া। যেখানে বস্ত্র, বাসস্থান, আত্মীয়-স্বজনহীন অবস্থায় অপেক্ষা করতে হয়। এ চিত্র পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় বিধায় আরাফাহর ময়দান থেকেই মানুষ আল্লাহর রহমতের আশায় নিজেকে সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে ফিরেয়ে আল্লাহর একত্ববাদ তথা বিধান পালনের শপথ নেয়।
কুরবানি : কুরবানির মাধ্যমে মানুষ তার মনের পশুত্বকে চিরতরে জবাই করে। যে পরীক্ষা দিয়েছিলেন মুসলিম জাতির পিতা হজ্বরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম নিজ প্রিয় জিনিস কুরবানির আদিষ্ট হয়ে কুরবানির হুকুম পালনের মাধ্যমে। হাজিরাও মনের পশুত্বকে জবাই করে নিজেকে আখিরাতের জন্য পুরোপুরি প্রস্তত করে। নিষ্পাপ, বেগুনাহ, মাসুম বান্দা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলের দীপ্ত শপথ নেই।
পরিশেষে আল্লাহ তাআলার দরবারে প্রার্থনা, হে আল্লাহ! আপনি প্রত্যেক হাজিকে হজ্বের শিক্ষাগুলো বাস্তবজীবনে আমল করার তাওফিক দান করুন। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকে হজ্বের শিক্ষা লাভের তাওফিক দিন। বিশেষ করে যৌবনে হজ্ব করার তাওফিক দিন। হজ্বের শিক্ষা দুনিয়ার জীবনে পালন করে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের তাওফিক দিন। হজ্বে গমণকারীদের হজ্বকে আপনি কবুল করুন। আমাদেরকেও হজ্ব করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন