বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

লাইফস্টাইল

সুস্বাস্থ্যের জন্য গরম মশলা

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৮ আগস্ট, ২০১৮, ৮:১৮ পিএম

বিশেষ বিশেষ রান্নায় কম-বেশি গরম মশলার ব্যবহার আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। বঙ্গীয় শব্দকোষে হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় গরম মশলা বলতে জানিয়েছেন-ছোট এলাচ, দারুচিনি ও লবঙ্গের সংমিশ্রণে উগ্রবীর্য মশলা। মাছ-মাংসের নানাপদ, পোলাও-বিরিয়ানী, চাটনি ইত্যাদি থেকে আরম্ভ করে পায়েস পর্যন্ত সব রান্নাতেই এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি যেমন স্বাদ ও সুগন্ধ বৃদ্ধি করে ঠিক তেমনি এ প্রত্যেকটি জিনিষের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঔষধিগুণ।
ছোট এলাচ

ছোট এলাচকে গোলমরিচের পরে স্থান দেওয়া হয়েছে। এলাচের প্রচুর ঔষধী গুন রয়েছে হাল্কা সবুজ খোসায় ঢাকা কালো দানার ফল শুকিয়ে মশলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ ভারতের মহিশুর, ওয়াইনাড, ত্রিবাঙ্কুর, কোচিন প্রভৃতি স্থানে ও শ্রীলঙ্কায় প্রচুর পরিমাণে ছোট এলাচের চাষ করা হয়।
উপাদান : বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ছোট এলাচে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ইথার, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদি সহ সিনিতাল, তারপিনল তাপিনিন, লিমোনিন, স্যাবিনিন ইত্যাদি সমৃদ্ধ এমন সব তেল থাকে যা শুধুমাত্র সুগন্ধবর্ধকই নয় আরোগ্যকারীও।
আরোগ্যকারী গুণ : ছোট এলাচের প্রথম গুণ হজমশক্তি বৃদ্ধি করা। বিশেষত কাঁচা পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি সহ অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার পর অম্বল-গ্যাস-বদহজম হলে লবঙ্গ, আদা, ধনে জোয়ানের সঙ্গে ছোট এলাচ মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। বদহজমজনিত মাথার যন্ত্রণায় ছোট এলাচ মিশিয়ে ফোটানো চা পান করলে খুব কম সময়ে উপশম হয় এবং অবসাদও কমে যায়।
কলাপাতা ও আমলকির রসের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে এলাচ গুড়োঁ দিনে দুইবার খেলে কিডনির বিভিন্ন অসুখ, যেমন নেফ্রাইটিস, প্রস্রাবের জ্বালা, অল্প অল্প প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মুখের ভেতরের জীবাণু সংক্রমনজনিত ঘা, ফ্যারিনজাইটিস, গলক্ষত, স^রভঙ্গ, দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষেত্রে ছোট এলাচ, দারচিনি ও লবঙ্গ পানিতে ফুটিয়ে গার্গল করলে উপকার পাওয়া যায়। যারা সঙ্গীতচর্চা করেন তাদের ক্ষেত্রে গলা ভাল রাখার এটা এক অব্যর্থ ঔষুধ। বারবার হেঁচকি উঠলে ছোট এলাচ ও পুদিনাপাতা এক সঙ্গে পানিতে ফুটিয়ে খেলে হেঁচকি বন্ধ হয়ে যায়।
দারুচিনি

ইতিহাস অনুসন্ধানে দেখা গেছে প্রায় তিনহাজার বছর আগে থেকেই চিকিৎসকরা দারুচিনির বিভিন্ন ধরনের রোগ আরোগ্যে ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। এর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থে। চীন, রোম সহ বিশ্বের সর্বত্রই বিভিন্ন যুগে গ্যালেন, ডায়োসকরডিস, সাসাফেরিস প্রমুখ চিকিৎসকরা দারুচিনির গুণাগুণ বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করে গেছেন। ভারতবর্ষে অষ্টম শতাব্দী থেকে দারুচিনির ব্যবহার আরম্ভ হয়। সিনামোমাম জেল্যানিকাম হলো দারুচিনির বোটানিক্যাল নাম। ইংরাজিতে বলা হয় সিনামন। মিশর, ইউরোপ, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ ভারতে দারুচিনির ব্যাপক ভাবে চাষ করা হয়।
উপাদান : দারুচিনিতে বিভিন্ন অনুপাতে প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার কার্বহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, থিয়ামিন, রিপোফ্লেভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন এ এবং সি থাকে। দারুচিনির পাতা, কান্ড ও মূলে বিভিন্ন ধরনের এসেনশিয়াল অয়েলও প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
আরোগ্যকারী গুণ : দারুচিনির আরোগ্যকারী গুণ বিশেষ উঠেলখযোগ্য। ১/২ চা চামচ দারুচিনি গুড়োঁ এক গ্লাস পানিতে ফুটিয়ে এক চিমটি গুলমরিচ গুড়োঁ ও ২ চামচ মধু মিশিয়ে খেলে সর্দিকাশিতে মন্ত্রের মতো কাজ হয়। বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময়ে সর্দি-কাশিতে এটা বিশেষ উপকারী। চ্যবনপ্রাসে দারুচিনি অন্যতম এক উপাদান। বদহজম, পেট বায়ু, জমা, বমিভাব ইত্যাদি থেকে রেহাই পেতে নিয়মিত দারুচিনি দিয়ে ফোটানো লিকার প্রতিবার খাবার আধঘন্টা পর পান করলে উপকার পাওয়া যায়। স্মৃতি শক্তির উন্নতি, পরীক্ষা জনিত ভয় এবং উদ্বেগ কমাবার জন্য ছাত্রছাত্রীরা প্রতি দিন প্রাতঃরাশের পর এক চিমটি দারুচিনির মিহি গুড়োঁ এক টেবিল চামচ মধুতে মিশিয়ে খেলে ভাল ফল পাবে। ঠান্ডা লেগে মাথাব্যথা বা যন্ত্রণা হলে দারুচিনি বেটে কপালে লাগালে বিশেষ সুফল পাওয়া যায়।
ব্রন, ব্ল্যাকহেডস ইত্যাদিতে দারুচিনি মধু ও লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে তা দূর হয়ে ত্বকের সজীবতা ও উজ্জ¦ল্য বৃদ্ধি করে। হোমিওপ্যাথ বিভিন্ন ঔষধ তৈরীতেও দারুচিনি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
লবঙ্গ

ঈষৎ ঝাল স্বাদের শুকানো ফুল লবঙ্গের বোটানিক্যাল নাম সিজিজিয়াম এ্যারোম্যাটিকাম। চীন ও ভারত সহ মালাক্কা দ্বীপ, অ্যালেক্সান্দ্রিয়া, ইউরোপের সর্বত্র এবং জাঞ্জিবারে প্রচুর পরিমাণে লবঙ্গের চাষ হয়।
উপাদান : লবঙ্গে বিভিন্ন অনুপাতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ইথার, উদ্বায়ী তেল, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, থিয়াসিন ইত্যাদি থাকে।
আরোগ্যকারী গুণ : লবঙ্গের তেল গত দু’হাজার বছর থেকে ভারত ও চীনে দাঁতের সুরক্ষায় ব্যবহার করা হচ্ছে। লবঙ্গ রক্তসংবাহন ত্বরান্বিত ও সহজ করে। এটা বিভিন্ন এনজাইমকে প্রভাবিত করে হজম শক্তি বাড়ায়। লবঙ্গ সামান্য সেঁকে মধু মিশিয়ে খেলে বমি বমি ভাব সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়। বিরক্তিকর খুশখুশে কাশিতে সামান্য বিট লবনের সঙ্গে লবঙ্গ চিবিয়ে খেলে আরাম পাওয়া যায়।
হাঁপানি, যক্ষ্মা বা ব্রঙ্কাইটিসের কাশিতে লবঙ্গ মধু ও রসুন এক সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত খেলে উপশম হয়। বিশেষত হাঁপানিতে আট দশটি লবঙ্গ দেড় কাপ পানিতে ঢাকা দিয়ে ফুটিয়ে অর্ধেক হলে তা দিনে চারবার মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রোগী আরাম পায়। কানের ব্যথায়, পেশীর আক্ষেপে, মাথার যন্ত্রণায়, চোখের আঞ্জনিতে লবঙ্গের আরোগ্যকারী শক্তি কার্যকর। হোমিওপ্যাথিতে লবঙ্গ থেকে যে ঔষুধ প্রস্তুত করা হয় তার নাম অলিয়াস ক্যারিওফাইলাম। গরম মশলা ছোট এলাচ, দারচিনি ও লবঙ্গ শুধুমাত্র মশলা বা ঔষুধি হিসেবেই ব্যবহৃত হয় না। এগুলি সাবান, দাঁতের মাজন, প্রসাধনী দ্রব্য, সুগন্ধী তেল, নানা ধরনের পানীয়, চকলেট ইত্যাদিতেও ব্যবহৃত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আবদুল হান্নান ১৯ আগস্ট, ২০১৮, ৩:৫৫ এএম says : 0
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন