ইনকিলাব ডেস্ক : পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরনগরী করাচীতে মোটরসাইকেল আরোহী অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীরা পোলিও টিকা খাওয়ানের সময় পাহারায় নিয়োজিত ৭ পুলিশকে গুলি করে হত্যা করেছে।
ফিরোজ শাহ নামের একজন সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থাকে জানান, শহরের পশ্চিমাঞ্চলীয় ওরাঙ্গি নগরে ৪টি মোটরসাইকেল আরোহী আট বন্দুকধারী দুইটি পৃথক হামলায় এসব হত্যাকা- চালায়। বন্দুকধারীরা প্রথমে ওরাঙ্গি নগরের রাস্তায় তিন পুলিশের ওপর গুলি চালালে তাদের সবাই প্রাণ হারায়। পরে বন্দুকধারীরা বেশ কিছুটা দূরে ভ্রাম্যমাণ পুলিশ ভ্যানের উপর গুলি ছুড়লে চার পুলিশ সদস্য নিহত হয়। পুলিশ এসব হামলাকে টার্গেট কিলিং হিসেবে মনে করছে। দুটি হামলা চালানোর পরই ঘাতকরা পালিয়ে যায়।
একজন কর্মকর্তা বলেন, হামলার ধরণ দেখে মনে হয় ঘাতকদের টার্গেট ছিল পুলিশ, টিকাদান কর্মীরা নয়। টিকাদান কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গীদের হামলা টার্গেট হয়ে আসছে। গতকাল টিকাদান কর্মসূচী শুরু হয়।
শহরের আব্বাসী শহীদ হাসপাতালের কর্মকর্তা আব্দুল করিম হতাহতের ঘটনা নিশ্চিত করেন। এই হাসপাতালেই নিহত পুলিশ সদস্যদের লাশ আনা হয়। টিকাদান কর্মসূচী চালানোর সময় তিনজন পোলিও কর্মীর ওপরও হামলা চালানো হয় তবে তাদের ক্ষতি হয়নি।
সিন্ধু প্রদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোহাইল আনওয়ার সিয়াল বলেন, পোলিও কর্মীদের রক্ষায় পুলিশ তাদের নিজের জীবন দিয়েছে।
এখনও পর্যন্ত কোন গ্রুপ এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি। তবে পাকিস্তানী তালিবানসহ ইসলামী জঙ্গীরা বলে আসছে যে পোলিও টিকাদান কর্মসূচী হচ্ছে গুপ্তচরবৃত্তি চালানো বা মুসলমানদের নিবীর্য করার পশ্চিমাদের একটি চক্রান্ত।
পৃথিবীর যে দুটি দেশে এখনো পোলিও রোগটি বিপদজনক পর্যায়ে রয়েছে তার অন্যতম পাকিস্তান। অপর দেশটি আফগানিস্তান। শিশুরা পোলিও রোগে আক্রান্ত হলে পরে তারা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়।
পাকিস্তানকে পোলিওমুক্ত করার সরকারের প্রচেষ্টা জঙ্গীদের একের পর এক হামলায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ২০১২ সাল থেকে টিকাদান টিমগুলোর ওপর হামলায় এ পর্যন্ত একশোর বেশী মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
২০১৪ সালে পাকিস্তানে পোলিও আক্রান্তের ঘটনা রেকর্ড করা হয় ৩০৬ টি যা এর আগের ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। টিকাদান কর্মসূচীর কারণে ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ৫৪-তে নেমে আসে।
পাকিস্তান সরকার চলতি ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ দেশকে পোলিওমুক্ত করার লক্ষে ৫ বছরের নিচে দেশের ৩ কোটি ৫০ লাখ শিশুকে পোলিও টিকার আওতায় আনতে চায়।
দুই কোটি বাসিন্দার শহর করাচীতে এই কর্মসূচী সফল করে তুলতে স্থানীয় সমাজগুলো থেকে আড়াই হাজারের বেশী মহিলাকর্মীকে নিয়োজিত করা হয়েছে।
অতি সম্প্রতি হামলার ঘটনাটি ঘটে গত জানুয়ারীতে। সে সময় দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় কোয়েটা শহরে পোলিও টিকাদান কেন্দ্রের বাইরে এক আত্মঘাতি বোমা হামলাকারী নিজেকে বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়। এতে দুইজন বেসামরিক ব্যক্তি ও ১৩ জন নিরাপত্তাকর্মী প্রাণ হারায়।
পাকিস্তানের গ্যারিসন শহর এবোটাবাদে আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনের অবস্থান খুঁজে বের করতে সিআইএ ভ’য়া টিকাদান কর্মসূচী পরিচালনা করার থেকে ইসলামী জঙ্গীরা সকল টিকাদান কর্মসূচীর বিরোধিতা করে আসছে। মার্কিন বিশেষ বাহিনী ২০১১ সালে এবোটাবাদে হামলা চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে।
পাকিস্তানের কেন্দ্রশাসিত উপজাতীয় এলাকাগুলোতে শিশুদের টিকাদান করা যায়না। কারণ ২০১২ সাল থেকে টিকাদান কর্মসূচীকে তালিবানরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সূত্র : এএফপি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন