বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পোশাক খাতে সুশাসন অর্জিত হয়নি : টিআইবি

প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সম্পদের হিসাব ওয়েবসাইটে আছে : ইফতেখারুজ্জামান
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পরবর্তী সময়ে পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিতকরণে সরকার ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের বহুমুখী উদ্যোগের মধ্যে ২৩ শতাংশ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ধীরগতি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন স্থবির হয়ে পড়ায় পোশাক খাতে সার্বিক সুশাসন অর্জন সম্ভব হয়নি বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিতকরণে সংগঠনের পক্ষ থেকে ১০ দফা প্রস্থাব পেশ করা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন : অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি জানান, ২০১৩ সাল থেকে সূচকে গৃহীত ১০২টি উদ্যোগের মধ্যে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৭৭ শতাংশ উদ্যোগের মধ্যে বাকি ৩৯ শতাংশ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং ৩৮ শতাংশ বাস্তবায়নে সন্তোষজনক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। তবে অবশিষ্ট ২৩ শতাংশ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সকল পক্ষের সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রয়াস গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের গ্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর ই খোদা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারার অপব্যবহারের মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এছাড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৬ এ ট্রেড ইউনিয়নের আদলে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠন না করা, শ্রম বিধিমালা-২০১৪ এ শ্রমিকদের আহার ও বিশ্রামের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, বিধিমালা পাশের ৬ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত সীমিতসংখ্যক কারখানায় সেফটি কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর পোশাক খাতের সুশাসন নিশ্চিতকরণে সরকার ও বিভিন্ন অংশীজন বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ সকল উদ্যোগের বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ পর্যালোচনায় টিআইবি ধারাবাহিকভাবে গবেষণা পরিচালনা করে আসছে। ২০১৩ সালে পরিচালিত টিআইবির ‘তৈরি পোশাক খাত : সুশাসনের সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের তৃতীয় ফলোআপ হিসেবে বর্তমান গবেষণাটি ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত হয়।
গত এক বছরের পর্যালোচনা সম্পর্কে তিনি বলেন, চলমান ৬৮টি উদ্যোগের ক্ষেত্রে ৬টি উদ্যোগ সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে, ৩৯টি উদ্যোগ বাস্তবায়নে সন্তোষজনক অগ্রগতি, ১০টি উদ্যোগ বাস্তবায়নে ধীরগতিসম্পন্ন এবং ১৩টি উদ্যোগ বাস্তবায়নে স্থবিরতা পরিলক্ষিত হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা পরিচালনায় দীর্ঘসূত্রিতা এবং বিভিন্ন তদারকি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহা দেখা যায়।
এছাড়া শ্রমিক অধিকার রক্ষায় শ্রম পরিদফতরে ‘হটলাইন’ স্থাপনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি এবং কারখানার ভবনের নকশা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ হয়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। কারখানা পর্যায়ে শ্রমিকদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি, হেলপার পদে আইনানুগ সুবিধা ছাড়া শ্রমিক ছাঁটাই ও ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের হয়রানি, মামলা বা চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে জবাবদিহিতার ঘাটতিসহ কয়েকটি বিষয়কে প্রতিবেদনে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান গত তিন বছরে অর্জিত অগ্রগতি ধরে রাখা, বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহের বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে সকল অংশীজনের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, উপ-নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা প্রমুখ।
সম্পদের হিসাব ওয়েবসাইটে আছে : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও তার ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব ওয়েবসাইটে আছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, যে-কেউ ওয়েবসাইট থেকে এ হিসাব দেখে নিতে পারেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সম্পদের হিসাব নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটা আমাদের জন্য ভালো।
১৩ এপ্রিল নিজের ফৈসবুকে এক স্ট্যাটাসে টিআইবির সম্পদের বিবরণ প্রকাশের দাবি জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা ও তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেছেন, টিআইবি সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করে এটা প্রমাণ করুক যে তারা তাদের চিলি শাখার মতো দুর্নীতিগ্রস্তু নয়। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল চিলি শাখার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের প্রেক্ষাপটে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ জয় এ দাবি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন