স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ খোয়া যাওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির ধীরগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী এলাকাতে ৭১’-এর মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে দাবি করেছে দলটি।
রিজভী আহম্মেদ বলেন, গতকাল (বুধবার) ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকারকে কিন্তু দম ফেলবার সময় দিতে হবে। উনি নিঃসন্দেহে একজন গুণী ব্যক্তি, সরকারের শুভাকাক্সক্ষী, সরকারকে দম ফেলবার সময় দিয়েছেন। আমরা জানতে চাই, সরকারকে দম ফেলবার সময় দিলে আর যে কত লাশ পড়বে, আর যে কত মায়ের কোল খালি হবে, আরো কত সামনের নির্বাচন যে লোপাট হয়ে যাবে সরকারের অনুকূলে। সেটি মনে হয়, ড. ফরাসউদ্দিন সাহেবরা জানেন না। আর কত দম ফেলবার সময় দেবেন, আর কত পরামর্শ দেবেন ভোটারবিহীন সরকারকে?
রিজভী বলেন, গোটা জাতির দম বন্ধ করে দিয়ে যে শ্বাসরুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে ভোটারবিহীন সরকার গোটা জাতির মধ্যে এক ভয়ঙ্কর আতঙ্কের অমানিশা তৈরি করছেন। এর পরে আরো দম ফেলবার পরামর্শ দিলে এই জাতির অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে। বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুুল মুহিতের কাছে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের ফরাসউদ্দিন বলেন, আমরা ৩০ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট জমা দিয়েছি। টেকনিকেল রিপোর্ট ৭৫ দিন পর জমা দিব।
পরে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কমিটি তাদের রিপোর্ট আমার কাছে জমা দিয়েছে। এখনও পড়িনি। আগে পড়ে নেই; তারপর বলব। এই রিপোর্ট তো তাদের অন্তর্বর্তী রিপোর্ট। আড়াই মাস পর তারা পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবে। তখন বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান মুহিত। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশের গচ্ছিত ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে সরানো হয়েছিল ভুয়া বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে। শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ লাখ ডলার আটকানো হয়। তবে ফিলিপিন্সে যাওয়া কিছু অর্থ উদ্ধার হলেও বাকিটা এখনও অনিশ্চিত।
রিজার্ভের অর্থ খোয়ার ঘটনায় গত ১৫ মার্চ ৩ সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। রিজভী ইউনিয়ন পরিষদের তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে কুমিল্লার লাকসামের ৩নং কান্দিপাড় ইউনিয়ন, বুড়িচং উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়ন, নাটোর সদরের হালসা ইউনিয়ন, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মরজাল ইউনিয়ন, রাজবাড়ীর পাংশার সরিষা ইউনিয়ন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, লক্ষ্মীপুর, সিরাজগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের তা-ব, বিএনপির প্রার্থীদের প্রচারণায় বাঁধা-নেতাকর্মীদের হুমকি প্রদান, হামলার নানা ঘটনার চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, রক্তের গন্ধ ছাড়া আওয়ামী লীগারদের যেন রাতে ঘুম হয় না। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিএনপির নেতাকর্মীরা গণগ্রেফতার আবার শুরু হয়েছে। ভোটাররা দুর্বিষহ আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ মিলে যে রক্তাক্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে, তাতে মনে হয়, নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ৭১ এর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন নিশ্চুপ ভূমিকার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তা-ব ও প্রাণহানী ঠেকাতে নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ তো করছেই না বরং উল্টো সরকার রক্তাক্ত আক্রমণকে আশকারা দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোশতাক মিয়া, সিনিয়র নেতা ফেরদৌস আহমেদ খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন