বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কুয়েটের টেন্ডার নিয়ে আ’লীগ ছাত্রলীগ সংঘর্ষ : আহত ৫

১১ কোটি টাকার কাজ ভাগবাটোয়ারা

প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, খুলনা : খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি (কুয়েট) বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার  ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতারা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের বাঁধার কারণে সাধারণ ঠিকাদাররা সিডিউল জমা দিতে পারেননি। দরপত্র জমা দেয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকের এঘটনায় কুয়েট ছাত্রলীগের ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক পরিমল কুমার রায় ও রুদ্র সিনহাসহ অন্তত ৫/৬জন আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
কুয়েটের প্রধান প্রকৌশলী এবিএম মামুনুর রশীদ জানান, কুয়েটের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও একাডেমিক ভবনের উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণের কাজের সিডিউল জমার শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। নির্ধারিত কাজের বিপরীতে মোট ১৭টি সিডিউল বিক্রি হয়। এরমধ্যে জমা পড়েছে মাত্র ৪টি। টেন্ডার কমিটির সভায় কে কাজ পেয়েছে তিনি নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, টেন্ডার নিয়ে যা হয়েছে তা কুয়েটের বাইরে। ভেতরে কিছু হয়নি। বাইরে কোন ঘটনা ঘটলে এর দায়ভার কুয়েট কর্তৃপক্ষ নিবে কেন?
একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান ও যুবলীগ নেতা ইউপি সদস্য আরিফ হোসেন লোকজন নিয়ে কুয়েটের গেটে অবস্থান নেন। আরেক গ্রুপ অবস্থান নেন টেন্ডার বক্সের সামনে। তাদের বাঁধার কারণে অন্য কোনো ঠিকাদার সিডিউল জমা দিতে পারেননি। দুপুর ১২টার দিকে কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোল্যা আশিকুর রহমানের একটি সিডিউল জমা দিতে যান তার কর্মীরা। এসময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে যুবলীগ নেতাদের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পরিমলসহ ৫/৬ জন আহত হয়।
খানজাহান আলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনিসুর রহমান বলেন, ‘টেন্ডার নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি। সবাই মিলেমিশে সিডিউল জমা দিয়েছি। নিউজ করার আগে একটু দেখা কইরেন’।
যুবলীগ নেতা ইউপি সদস্য আরিফ হোসেন বলেন, ‘কুয়েটে টেন্ডার সিন্ডিকেট হয়েছে। ছাত্রলীগের ছেলেরা প্রথম বাঁধা দিয়েছিল, পরে সবাই মিলেমিশে গেছে।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত খানজাহান আলী থানার এএসআই রাসেল উদ্দিন বলেন, কুয়েটে টেন্ডার একটু ঝামেলা হয়েছিল। তবে আমি সব কিছুই বলতে পারবো না। আমার সাথে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী ইমতিয়াজ সোহান রয়েছে তার সাথে কথা বলেন। সোহানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা মোল্যা আশিকুর রহমানের নামে একটি সিডিউল জমা দিতে যাচ্ছিলাম। এ সময় আমাদের সাথে আনিস ভাইয়ের লোকদের একটু ঝামেলা হয়েছিল। অবশ্য পরে নেতৃবৃন্দ সমঝোতা করে দেয়ায় সমস্যার সমাধান হয়েছে। এ নিয়ে রিপোর্ট করার কিছুই নেই।
কেসিসি’র মোটর সাইকেল ক্রয়ের টেন্ডার ভাগবাটোয়ারা ঃ কেসিসি’র রেজিস্ট্রেশনসহ ভারতীয় তৈরী চারটি মোটরসাইকেল ক্রয়ের সাত লাখ ১৬ হাজার টাকার টেন্ডার সিন্ডিকেট হয়েছে। গত মঙ্গলবার শের-ই বাংলা রোডস্থ কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে (যান্ত্রিক শাখা) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ঠিকাদাররা এ সিন্ডিকেট করে।
সূত্র জানায়, সাত লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয়ে রেজিস্ট্রেশনসহ ভারতীয় তিনটি ৯৭.২ সিসি হিরো ¯িপ্রন্ডার ও ৯০ সিসি টিভিএস মোটরসাইকেল ক্রয়ের উদ্যোগ নেয় কেসিসি। এ লক্ষ্যে গত ২৯ মার্চ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্রের আহবান করা হয়। ১৮ এপ্রিল ছিল সিডিউল বিক্রির শেষ দিন। শেষ দিন পর্যন্ত আটটি দরপত্র বিক্রি হয়। গত মঙ্গলবার দুপুর একটায় ওই সিডিউল জমার শেষ সময় ধার্য করা হয়। সিডিউল বাক্স উন্মুক্ত করার সময় ছিল বেলা তিনটা। তবে শেষ সময় পর্যন্ত টেন্ডার বাক্সে আটটির বিপরীতে দরপত্র জমা পড়ে মাত্র চারটি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হলো, এসএম মনিরুল ইসলাম ট্রেডার্স, এসএম ট্রেডার্স, মেসার্স হেলাল ট্রেডার্স ও মেসার্স টিআর এন্টারপ্রাইজ। এর মধ্যে সর্ব নিম্ন দরদাতা হয়েছেন এস এম ট্রেডার্স।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন, সকাল থেকে কর্পোরেশনের যান্ত্রিক শাখায় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ঠিকাদাররা ও দলীয় কর্মীরা ওই টেন্ডার কাজের সিন্ডিকেটের চেষ্টা করেন। তাদের বাধার মুখে সাধারণ ঠিকাদাররা সিডিউল দাখিল করতে পারেনি। ওই সিন্ডিকেটের সাথে ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও জড়িত রয়েছেন।
কেসিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) আব্দুল আজিজ বলেন, অফিসের মধ্যে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। আর তার কাছে কেউ অভিযোগও করেনি। যা’ হয়েছে অফিসের বাইরে হয়েছে।
অন্ধ ও বধির স্কুলের টেন্ডার বাতিলের দাবি ঃ অনিয়মের অভিযোগে নগরীর  গোয়ালখালীর পিএইচটি  সেন্টারে (অন্ধ ও বধির স্কুল) খাদ্য সরবরাহ কাজের  টেন্ডার বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ঠিকাদাররা। আওয়ামী যুবলীগের নেতাকর্মীদের বাধার কারণে নির্ধারিত দিনে সাধারণ ঠিকাদাররা সিডিউল জমা দিতে পারেনি। সিডিউল ক্রয়কারী চারটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসক খুলনা বরাবর লিখিত অভিযোগে এই অভিযোগ করেছেন। তারা টেন্ডার জমাদানের তারিখ পরিবর্তন করে নতুন তারিখ ধার্য করার আবেদন জানিয়েছেন।




 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন