স্টাফ রিপোর্টার : নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরসহ সারাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে নৌপথে সব ধরনের পরিবহন গতকাল (শুক্রবার) দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ ছিল। ফলে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলাসহ সব বন্দর ও যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ, নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধসহ ১৫ দফা দাবিতে সারাদেশে নৌ-যান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে। বুধবার দিনগত মধ্যরাত থেকে বাংলাদেশ নৌ-যান পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতি শুরু হয়েছে।
তবে নৌ শ্রমিকদের ধর্মঘট আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সামাধানের চেষ্টা চলছে বলেছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। শুক্রবার মাদারীপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অফিসে ঠিকাদারদের সঙ্গে সভাশেষে সাংবাকিদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, এখানে সরকার কোনো পক্ষ নয়। তাই মালিক ও শ্রমিক উভয়পক্ষের সঙ্গে দ্রুত কথা বলে সমাধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নৌ পরবিহন সেক্টর একটি সেবামূলক সেক্টর। শ্রমিক-মালিকরা দেশের মানুষের সেবা করে থাকেন। একজন সেবক হিসেবে সারাদেশের মানুষকে এভাবে জিম্মি রাখা অনুচিত।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম জানিয়েছেন, আমাদের দাবি মানার বিষয়ে কোনো পক্ষই সন্তোষজনক কোনো উদ্যোগ নেয়নি, দাবি মানার আশ্বাস পেলে যে কোনো মুহূর্তে নৌ শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবে।
ধর্মঘটের কারণে অভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ১৫শ’ জাহাজ ধর্মঘট পালন করছে, এর মধ্যে ৩শ’ জাহাজ তেল পরিবহন ও ৩শ’ জাহাজ সমুদ্রে মৎস্য আহরণ করে থাকে। ‘গত ২৬ জানুয়ারী সরকার ও মালিক পক্ষের সাথে সম্পাদিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তি কার্যকর না হওয়ায় এই ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হয়েছে নৌযান শ্রমিকরা। মালিকরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। তারা এ নিয়ে আলোচনায়ও আসছে না Ñ উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট খোরশেদ আলম বলেছেন, শ্রমিকদের ১৫ দাবি মানা সম্ভব নয়, এসব দাবি মেনে নেওয়া হলেও জাহাজ মালিকরা আর এই সেক্টরে থাকতে পারবে না, জ্বালানী তেল ও অন্যান্য ব্যয় কাক্সিক্ষত মাত্রার চেয়েও অনেক বেশি। এ অবস্থায় শ্রমিকদের মজুরী বৃদ্ধি ও অন্যান্য দাবি একেবারেই অযৌক্তিক। তাছাড়া ১৫ দফার অনেকগুলো জাহাজ মালিকদের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরের মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাসও বন্ধ আছে টানা দুই দিন।
সর্বশেষ জানা গেছে, নৌ শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে আজ শনিবার শ্রমিক, মালিক ও নৌ মন্ত্রণালয়কে নিয়ে বৈঠক ডেকেছে শ্রম মন্ত্রণালয়। শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায় মন্ত্রণালয়।
নৌ-ধর্মঘট
না’গঞ্জে নৌযান শ্রমিকদের দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার : নৌযানে কর্মরত সকল জাহাজী শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য সর্বনি¤œ মজুরী ১১ হাজার টাকা নির্ধারণ ও গ্রহণযোগ্য পে-স্কেল ঘোষণাসহ ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলমান নৌ-ধর্মঘটের সমর্থনে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ নং সারঘাট এলাকা থেকে মিছিল বের করার সময় কার্গো ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকরা হামলা চালালে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। এসময় বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন নারায়ণগঞ্জ জেলা কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের আহত শ্রমিকরা সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আহত দের শহরের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ৭ দফা দাবিতে শুক্রবার বিকেলে শহরের ৫নং সার ঘাট এলাকা থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ শিকদারের নেতৃত্বে মিছিল বের করে বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীরা। অপরদিকে একই সময়ে ৩ নং মাছঘাট এলাকায় সমাবেশ করছিল বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন। মিছিলটি সমাবেশস্থল অতিক্রম করার পরে পেছন থেকে হামলা চালানোর ঘটনা ঘটলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। সবুজ শিকদার জানান, আমরা যখন সমাবেশ স্থল অতিক্রম করে চলে আসি তখন রিকশায় থাকা মাইক বাসের কারণে সমাবেশস্থলে সামনে আটকা পড়ে এসময় বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মসূচীর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সমাবেশস্থলে উপস্থিত কার্গো ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মাহমুদ ও জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে রিকশার সঙ্গে থাকা জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে মাইকের তার ছিড়ে ফেলে। মাহমুদ ও জাহাঙ্গীরের লোক জিয়া, জামাল, শাহীন মোল্লা, মঈন, লিটনসহ অন্যরা আমাদের অফিসেও হামলা চালায়। পরে খবর পেয়ে আমাদের শ্রমিকরা ছুটে গেলে তাদের উপরও হামলা চালায়। হামলাকারীরা আমাদের মাইক, ব্যানার এবং সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে থাকা নগদ ৫৫ হাজার টাকা, ৬টি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। হামলায় আমাদের সংগঠনের পান্না মিয়া, শিমুল, মিজানসহ অন্তত ৭ জন আহত হয়েছে। সবুজ আরো জানান, জাহাঙ্গীর ও মাহমুদের নেতৃত্বে এর আগেও একাধিকবার আমাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তারা চোরাগুপ্তাভাবে শ্রমিকদের উপর হামলা চালিয়ে আমাদের আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।
সদর মডেল থানার এসআই শফিকুল ইসলাম জানান, হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটির তদন্ত চলছে।
এখানে উল্লেখ্য চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সবুজ শিকদারের উপর হামলার অভিযোগে কার্গো ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মাহমুদ ও জাহাঙ্গীরসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এরপর থেকে মাহমুদ ও জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন পলাতক ছিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন