শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রামে নৌপথে পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা চেম্বারের

প্রকাশের সময় : ২৩ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : নৌযান শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে গতকাল (শুক্রবার) দ্বিতীয় দিনের মতো অচল ছিল কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট। সেখানে অলস দাঁড়িয়ে শত শত লাইটারেজ জাহাজ। বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস। বন্ধ পণ্য পরিবহন ও এবং গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণও। টানা ধর্মঘটের কারণে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট। বেতন-ভাতা বৃদ্ধি ও নৌপথে চুরি-ডাকাতি বন্ধসহ ১৫ দফা দাবিতে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে বুধবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয়েছে এই ধর্মঘট।
কর্ণফুলী ঘাট গুদাম মালিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা মাহমুদুল হক চৌধুরী এটলি বলেন, নৌযান ধর্মঘট চলছে। গত ২৬ জানুয়ারি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল তা যতক্ষণ পর্যন্ত মেনে নেওয়া হবে না, সে পর্যন্ত লাগাতার ধর্মঘট চলবে। গতকাল থেকে কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাটে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। সদরঘাট থেকে কোনো রুটেই কোনো নৌযান চলাচল করছে না।
জানা গেছে, ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থানরত সব ধরনের দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের (মাদার ভ্যাসেল) পণ্যবোঝাই খালাস, পণ্য পরিবহন ও গভীর সাগরে মাছ শিকার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারাদেশে প্রধানত নদীপথে পণ্য পরিবহনে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। লাইটারেজ, কার্গো, বার্জ, অয়েল ট্যাঙ্কার, কোস্টার থেকে শুরু করে সব ধরনের জাহাজি ও যাত্রীবাহী নৌযানের শ্রমিকরা একযোগে এ কর্মবিরতি পালন করছে। কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাটে নৌযান শ্রমিকদের বসে থাকতে দেখা গেছে।
এদিকে, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে আমদানিকৃত কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সারাদেশে নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি হবে এবং পণ্য মূল্যের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আশংকার পাশাপাশি বন্দরের ডেমারেজ চার্জসহ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে আমদানিকারকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে শত কোটি টাকার পণ্য নিয়ে ভাসছে ২৫টি মাদার ভ্যাসেল। লাইটারেজ জাহাজে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হওয়ায় মাদার ভ্যাসেলগুলো থেকে পণ্য খালাস পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। অলস বসে থাকার ফলে এক একটি মাদার ভ্যাসেলকে হাজার হাজার ডলারের ক্ষতির কবলে পড়তে হচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মাদার ভ্যাসেলগুলোতে চিনি, সার, গম, লবণ, ক্লিংকার, জিপসাম, লাইম স্টোন, কয়লাসহ বিভিন্ন ধরনের শত কোটি টাকার পণ্য রয়েছে। মাদার ভ্যাসেল বোঝাই করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আনা এসব পণ্য লাইটারেজ জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করার কথা ছিল। এসব পণ্যের বেশ কিছু বিভিন্ন শিল্প কারখানার কাঁচামাল। নির্দিষ্ট সময়ে পণ্যগুলো খালাস এবং সরবরাহ না হলে সিমেন্ট এবং চিনিকলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজের সারি দীর্ঘ হলে জাহাজজট সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে জাহাজের অবস্থানকাল।
এদিকে, চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারে গতকাল এক জরুরি বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বার্তায় তিনি বলেন, ১৫ দফার দাবিতে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বানে লাইটারেজ ও ফিশিং জাহাজের ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রামসহ দেশের সকল বন্দরে পণ্য খালাস, লাইটারেজযোগে পণ্য পরিবহন এবং গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ বন্ধ রয়েছে। ফলে আমদানিকৃত কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে সারাদেশে নিত্যপণ্যের সংকট সৃষ্টি হবে এবং পণ্য মূল্যের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার আশংকার পাশাপাশি বন্দরের ডেমারেজ চার্জসহ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে আমদানিকারকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করেন চেম্বার সভাপতি।
বার্তায় তিনি উল্লেখ করেন বর্তমান সরকারের গৃহীত কার্যকর পদক্ষেপের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ জনগণের ক্রয়-ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে এবং মূল্যস্ফীতির হার অনেক কমে গেছে। তবে এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে তা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ হওয়ার ফলে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদানপূর্বক উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার ও অর্থনৈতিক কর্মকা-ের গতিধারা অব্যাহত রাখতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান মাহবুবুল আলম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন