স্টাফ রিপোর্টার : সরকার দীর্ঘদিন ধরে কারারুদ্ধ আমার দেশ-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করে তার ৮০-ঊর্ধ্ব বৃদ্ধা মা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আমার সবিনয় নিবেদন, আমার ছেলেকে দীর্ঘদিন জেলে আটক রেখেও আপনার ব্যক্তিগত জিঘাংসা যদি পরিতৃপ্ত না হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে জেলে নেয়ার বিনিময়ে আমার নিরপরাধ সন্তানকে মুক্তি দিন।
গতকাল শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুর রহমানের মা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম এ আর্তি জানান। ‘আমার দেশ’ পরিবারের পক্ষ থেকে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী সরকার প্রধান। তার নির্দেশ ও ইশারা-ইঙ্গিতেই রাষ্ট্রের সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে। তিনি চাইলেই আমাকে কারাগারে নিয়ে মাহমুদুর রহমানকে মুক্তি দিতে পারেন।
লিখিত বক্তব্যে মাহমুদা বেগম বলেন, আমি মাহমুদুর রহমানের অসহায় বৃদ্ধা মা। ২০০৯ সাল থেকেই ক্ষমতাসীন সরকার আমার একমাত্র সন্তান মাহমুদুর রহমান, আমার পরিবার এবং আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিকদের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। আমি সমস্ত জীবন অধ্যাপনা করে শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। তিনি বলেন, বিগত ৭ বছর ধরে অব্যাহত জুলুম সহ্য করে আমি একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে কেঁদেছি। আশা করেছি, সরকার প্রধানের জিঘাংসারও নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। আমার দুর্ভাগ্য সেই প্রত্যাশা সফল হয়নি। আজও সন্তানের ঘরে ফেরার দিকে তাকিয়ে আছি। সরকারের জুলুম দিনের পর দিন অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
মাহমুদা বেগম দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়-সংশ্লিষ্ট কোনো ষড়যন্ত্রের সঙ্গে মাহমুদুর রহমান জড়িত নেই। তার সত্যনিষ্ঠ লেখালেখির কারণে একের পর এক মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে অন্যায়ভাবে তাকে আটকে রাখা হয়েছে।
তিনি ‘মিথ্যা মামলা’ দায়ের প্রসঙ্গে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার জন্য প্রধান বিচারপতির প্রতি আহ্বান জানান। প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি দয়া করে আমার ছেলেকে বেআইনি আটকাবস্থা থেকে মুক্তির নির্দেশ প্রদান করে এক অসহায় বৃদ্ধা মায়ের হাহাকার দূর করুন।
গতকাল শুক্রবার সকালে কাশিমপুর কারাগারে ছেলে মাহমুদুর রহমানকে দেখে এসেছেন জানিয়ে মাহমুদা বেগম বলেন, তার (মাহমুদুর রহমান) ওজন ১০ কেজি কমে গেছে। ডান কাঁধের ব্যথায় সে রাতের পর রাত ঘুমাতে পারে না। বিনা চিকিৎসায় জেলে কোনোক্রমে বেঁচে আছে। ২০১০ সালের ২ জুন আমার দেশ থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ১৪ দিনের জন্য রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার, নির্যাতন আর কিছু বাদ রাখেনি। এরপর কয়েক দফায় ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। ক্যান্টনমেন্ট থানায় নির্যাতনে সে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। একমাত্র আল্লাহর রহমত তাকে বাঁচিয়েছে।
তিনি বলেন, মাহমুদুর রহমানকে নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের একজন বিবেকবান মানুষও কি বিশ্বাস করবেন যে সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমান মিলে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পরিকল্পনা করবেন? দুজনই কি একেবারেই নির্বোধ? জয়সহ প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সব সদস্যই এসএসএফের নিরাপত্তা পেয়ে থাকেন। সেই ভিভিআইপি নিরাপত্তার মধ্যে অপহরণের কল্পকাহিনী কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য?
মাহমুদা বেগম দাবি করেন, ২০০৬ সালের পর একবারের জন্যও মাহমুদুর রহমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাননি। পুলিশ ২০১১ সালের কল্পকাহিনী সাজিয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় রাষ্ট্রের ইমিগ্রেশনকে ফাঁকি দিয়ে ২০১১ সালে মাহমুদুর রহমান কি সবার অজান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করে এসেছে?
তিনি প্রশ্ন করেন, প্রধানমন্ত্রীর পুত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসে তার ফেসবুকে বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেবেন আর সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সেই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে যাবে! এর নামই কি আইনের শাসন? আজ প্রফেসর ইউনূস, কাল শফিক রেহমান, পরশু মাহফুজ আনাম, তার পরদিন মাহমুদুর রহমান Ñ এভাবেই কি দেশের সম্মানিত নাগরিকদের হেয় করা চলতে থাকবে? এই অবস্থা তো নিকৃষ্ট রাজতন্ত্র এবং ফ্যাসিবাদের চাইতেও ভয়াবহ।
তিনি সাংবাদিক সমাজের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, আশা করি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা যেন সাংবাদিকদের ব্যবহার করতে না পারে। তাদের সরবরাহ করা তথ্যের ভিত্তিতে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং একতরফা অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশ করবেন না।
সংবাদ সম্মেলনে কলামিস্ট ফরহাদ মজহার, আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, ডিইউজের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সালেহ আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন