কুমিল্লা মানেই খাদি আর রসমালাইয়ের শহর। খাদি পণ্যে ভেজাল না হলেও ভেজাল রসমালাইয়ের ছড়াছড়ি কুমিল্লাজুড়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু এলাকা থেকে ফেনীর মহিপাল পর্যন্ত শতাধিক ভেজাল রসমালাইয়ের নকল দোকান সাধারণ ক্রেতাদের ঠকানোর ব্যবসা করে আসছে। কুমিল্লা শহরের মনোহরপুর এলাকায় অবস্থিত মাতৃভান্ডারের আসল রসমালাইয়ের ব্যাপক চাহিদা ঘিরে মহাসড়কের বাস স্টপেজ, সিএনজি বা ফিলিং স্টেশন এলাকায় এবং নামী দামি খাবার হোটেলগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল ও নিম্নমানের রসমালাই। আসল রসমালাইয়ের খুঁজে অনেকে শহরের মনোহরপুরে পা রাখলেও বেশির ভাগ ক্রেতাই মহাসড়কের দুইপাশে সাইনবোর্ডসর্বস্ব মাতৃভান্ডার নামের দোকানগুলোতে ঢুকে প্রতারিত হচ্ছেন। অথচ নামের বিভ্রান্তির প্রতারণা ঠেকানো তো যাচ্ছেই না, বরং দিনদিন ভেজাল রসমালাইয়ের নকল মাতৃভান্ডার গড়েই ওঠছে।
কুমিল্লায় রসমালাইয়ের আদি উদ্ভাবক ত্রিপুরা রাজ্যের ঘোষ সম্প্রদায়। পরবর্তীতে জগদ্বিখ্যাত কুমিল্লার রসমালাইয়ের প্রথম তৈরি ও বিক্রি শুরু হয় কুমিল্লা শহরের মনোহরপুরে অবস্থিত ‘মাতৃভান্ডার’ নামের মিষ্টান্ন দোকানে। পাক ভারত তথা উপমহাদেশে কুমিল্লার রসমালাইয়ের সুখ্যাতি সর্বজনবিদিত। আমাদের দেশে পারিবারিক সামাজিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যে কোনো অনুষ্ঠানেই ম্যানুর শেষপর্বে থাকে কুমিল্লার রসমালাই। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের তালিকাতেও কুমিল্লার রসমালাই আপন মহিমায় জায়গা করে নিয়েছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা কুমিল্লায় বেড়াতে এসে রসমালাই না খেয়ে বা না কিনে ফেরত যান না। আর সেই রসমালাই এখন ভেজাল আর নকলের ভিড়ে স্থান করে নিয়েছে মহাসড়কের দুইপাশে। অসাধু ব্যবসায়ীরা ঐতিহ্যবাহী রসমালাইয়ের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মাতৃভান্ডারের নাম নকল বা ওই নামের সামনে-পেছনে অন্য শব্দ ব্যবহার করে ভেজাল রসমালাই তৈরি করে এবং তা বিক্রির মাধ্যম্যে মানুষকে প্রতারিত করছে। শহরের মনোহরপুরের মাতৃভান্ডারের রসমালাইয়ের ঐতিহ্য আর সুখ্যাতিকে পুঁজি করে ওইসব অসাধু ব্যবসায়ীরা ‘মাতৃভান্ডার’ নামের আগে ও পরে কুমিল্লা মাতৃভান্ডার, মাতৃভান্ডার এন্ড কোং, বঙ্গ মাতৃভান্ডার, ক্যান্ট মাতৃভান্ডার, ময়নামতি মাতৃভান্ডার, কুমিল্লার মাতৃভান্ডার, নিউ মাতৃভান্ডার, মেসার্স মাতৃভান্ডার, আদি মাতৃভান্ডার, প্রিয় মাতৃভান্ডার, খাঁটি মাতৃভান্ডার, আসল মাতৃভান্ডার, মা-মনি মাতৃভান্ডার এবং মাতৃভান্ডার নাম ব্যবহার করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু এলাকা থেকে ফেনীর মহিপাল পর্যন্ত নিম্নমানের নকল রসমালাই বিক্রির অর্ধশতাধিক দোকান গড়ে ওঠেছে। এর মধ্যে দাউদকান্দি, ইলিয়টগঞ্জ, মাধাইয়া, চান্দিনা, ক্যান্টনমেন্ট ও আলেখারচর এলাকায় নকল মাতৃভান্ডারের সংখ্যা বেশি। এ ছাড়াও পদুয়ার বাজার, মিয়ারবাজার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনীর ফতেহপুর ও মহিপালে রয়েছে নকল মাতৃভান্ডারের ভেজাল রসমলাইয়ের ফাঁদ। সাধারণ ক্রেতারা ওইসব দোকানে ঢুকে আসল মাতৃভান্ডার ভেবে নিম্নমানের রসমালাই কিনে নিচ্ছেন।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, কুমিল্লার রসমালাইয়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে কুমিল্লা নামের ঐতিহ্য। কুমিল্লা শহরের মনোহরপুরের রসমালাইয়ের আদি প্রতিষ্ঠান মাতৃভান্ডার নাম নকল করে ব্যবসা করার উদ্দেশ্য মানেই ক্রেতা ঠকানো। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী থেকে শুরু করে মেঘনা সেতু এলাকা পর্যন্ত মাতৃভান্ডার নাম ব্যবহার করে দোকান খুলে ভেজাল রসমালাই বিক্রির ফাঁদ পেতে ক্রেতা ঠকানোর এ ব্যবসা যারা করছে, তারা দেশ-বিদেশে কুমিল্লার আসল রসমালাইয়ের সুনাম ঐতিহ্য প্রশ্নবিদ্ধ করছে। শহরের মনোহরপুরের মাতৃভান্ডার কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠানের নামটি ট্রেডমার্ক করে নিলে মহাসড়কের দুইপাশে গড়ে ওঠা মাতৃভান্ডার নামের বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের জন্য অনেকটা সহজ হবে বলে মনে করি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন