ইনকিলাব ডেস্ক : ২০১৪ সালের ৮ মার্চ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে গায়েব হয়ে যাওয়া মালয়েশিয়ার বোয়িং ৭৭৭ বিমানটির ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধানে নেতৃত্ব দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। মালয়েশিয়ার নিখোঁজ এমএইচথ্রিসেভেনটি বিমানটি অনুসন্ধানে সাগরতলে ব্যবহৃত অত্যন্ত উচ্চপ্রযুক্তির একটি ‘সোনার যান’ (সোনার ভেহিক্যাল) সাগরতলে একটি আগ্নেয়গিরির সাথে আঘাত লেগে এখন ভারত মহাসাগরের তলদেশে হারিয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তা সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন। নিখোঁজ মালয়েশিয়ার বিমানটিতে ২৩৯ জন আরোহী ছিল।
‘টোফিশ’ নামে পরিচিত এই সোনার যানটি ফার্গো ডিসকভারি জাহাজের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলো। সার্ভের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত টোফিশ একটি ডুবন্ত আগ্নেয়গিরির সঙ্গে প্রচন্ড ধাক্কা লাগার পর রোববার ভারত সহাসাগরের দক্ষিণাঞ্চলে অনেক গভীরে হারিয়ে গেছে।
অনুসন্ধান পরিচালনাকারী সংস্থা বলেছে, সাগরের ২ হাজার ২ শো মিটার গভীরে কাদামাটির আগ্নেয়গিরির সঙ্গে টোফিশের সংঘর্ষ হলে অনুসন্ধানী জাহাজ ফার্গো ডিসকভারির সঙ্গে এর ক্যাবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং এটি সাগরের তলদেশে হারিয়ে যায়। ৪ হাজার ৫ শো মিটার ক্যাবল নিয়ে এটা ডুবে গেছে।
নিখোঁজ মালয়েশিয়ার বিমানটি অনুসন্ধানে অস্ট্রেলিয়া তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন তার ‘সোনার যানটি’ হারিয়ে যাওয়ায় অনুসন্ধান চেষ্টা একটা ধাক্কা খেল। ধারণা করা হয় যে, মালয়েশিয়ার যাত্রীবাহী বিমানটি অজ্ঞাত কারণে তার গতিপথ পরিবর্তনের পর সাগরে বিধ্বস্ত হয়েছে। কিন্তুু গভীর সাগরে এতদিন অনুসন্ধান চালিয়েও এ পর্যন্ত বিমানটির ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি।
গত জুলাইয়ে ‘ফ্লাপরন’ নামে পরিচিত বিমানের পাখার ২ মিটার দীর্ঘ একটি অংশ ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রি-ইউনিয়নের উপকূলে পাওয়া যায়। এটি সাগরের পানিতে ভেসে আসে। এরফলে প্রথমবাবের মতো দৃঢ় প্রমাণ মেলে যে বিমানটির ভাগ্যে মর্মান্তিক পরিণতি ঘটেছে। রিইউনিয়নের পর সপ্তাহান্তে থাইল্যান্ড উপকূলে রাজহংসখচিত এক টুকরা ধাতব বস্তু পাওয়া যায়। এতে দ্রুত জল্পনা সৃষ্টি হয় যে এটাও মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান থেকে আসতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা সাগরের স্রোতধারা বিশ্লেষণ করে বলছেন, এই ধাতব বস্তুটি নিখোঁজ বিমান থেকে আসেনি।
অস্ট্রেয়িার কর্মকর্তারা বলছেন, রোববার সোনার যান টোফিশ দুর্ঘটনায় ফার্গো ডিসকভারি জাহাজের কোন ক্রু আহত হয়নি। তারা বলছেন, সম্ভবত টোফিশটি উদ্ধার করা যাবে। ফার্গো ডিসকভারি জাহাজটির সোমবার পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিম্যান্টল বন্দরে ফেরার কথা যাতে সেটি আবার ক্যাবল দ্বারা সজ্জিত করা যায়। এ জন্য শনিবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই অনুসন্ধান অভিযানে ফার্গো ডিসকভারি টোফিশ হারিয়েছে। ভবিষ্যত তৎপরতা চালানোর জন্য একে এখন প্রস্তুত করতে হবে।
টোফিশের গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে সাইড স্ক্যান সোনার এবং মাল্টি-বিম ইকো সাউন্ডার যা সাগরের তলদেশে মানুষের তৈরি যে কোন বস্তু সনাক্ত করতে পারে।
এ মাসের প্রথমদিকে অনুসন্ধানকারীরা সাগরের গভীর তলদেশে ১৯ শতকের একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেন। প্রায় দুইবছরের দীর্ঘ মিশনে তারা দ্বিতীয় বারের মতো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেল।
নিখোঁজ মালয়েশিয়ার বিমানটির সন্ধানে বিগত ১৮ মাস ধরে ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রথমে সাগরে ভাসমান জিনিস খোঁজার চেষ্টায় দৃশ্যমান সার্ভের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। পরে ২০১৪ সালের অক্টোবরে সাগরের তলদেশে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়। এই কার্যক্রমে ‘ফার্গো ডিসকভারি’ এবং ‘জিও ফনিক্স’ নামের দুইটি অনুসন্ধানী জাহাজ ব্যাবহার করা হচ্ছে। রোববার ফার্গো ডিসকভারির সোনার যানটি সাগরের তলদেশে হারিয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা বলছেন, নিখোঁজ মালয়েশিয়ার বিমানের খোঁজে তাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম সঠিক পথেই রয়েছে। -সূত্র : এএফপি, নিউজ রিপাবলিক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন